Last Updated on জুন ৩০, ২০২৫ by
সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস পালিত
চাঁপাইনবাবগঞ্জে সদর উপজেলার আমনুরায় ও বাবুডাইংয়ে সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস পালিত হয়েছে। এছাড়া আমনুরায় সাঁওতালি সংস্কৃতি মেলা-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার আমনুরা মিশন স্কুল মাঠে সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন— অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নাকিব হাসান তরফদার।
বিশেষ অতিথি ছিলেন— সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার কাঞ্চন কুমার দাস, মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি বাংলাদেশের প্রতিনিধি গ্রেগ ভ্যানডেরবিল্ট, প্রোগ্রাম অফিসার জেমস কিস্কুসহ স্থানীয় আদিবাসী নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ন্যাশনাল এজেন্সি ফর গ্রিন রিভ্যুলেশন (এনএজিআর)’র নির্বাহী পরিচালক স্টেফান সরেন। সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবসের প্রবন্ধ পাঠ করেন এনএজিআর’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার প্রদীপ হেমব্রম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন— এনএজিআর’র নির্বাহী পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হিঙ্গু মুরমু, আদিবাসী নেতা রবীন্দ্রনাথ হেমব্রম, ঝিলিম ইউপি সদস্য মাসুদ পারভেজ।
মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি (এমসিসি)’র অর্থায়নে, উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম ও আমনুরা মিশন যুব উন্নয়ন সংঘের সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এনএজিআর। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রদীপ হেমব্রম।
অনুষ্ঠানে সাঁওতাল নেতৃবৃন্দ সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিহাস ও তাদের বিভিন্ন সমস্যর কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাকিব হাসান তরফদার বলেন, আপনাদের মধ্যে মাদক ও বাল্যবিয়ের সমস্যা এখনো আছে। এটা নিয়ে আরো কাজ করতে হবে। শুধু বাল্যবিয়ে কিংবা মাদকই নয়, জমিজামা সংক্রান্ত কিংবা অন্য যে কোনো সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসবেন। আমাদের শতভাগ চেষ্টা থাকবে, আপনাদের জন্য কিছু করার।
অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি মেলার ৩টি স্টলে সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিহাস ও সাঁওতালি সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়। এছাড়াও সাঁওতালি ঐতিহ্য ও রীতির গান ও নাচ প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, নাচোল, গোদাগাড়ী ও নিয়ামতপুরের ৭ শতাধিক সাঁওতাল আদিবাসী অংশ নেন।
এদিকে সদর উপজেলার আতাহার যুগিডাইংয়ে সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দুপুরে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন— সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার কাঞ্চন কুমার দাস।
আদিবাসী নেতা কর্ণেলিউস মুরমুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন— সদর উপজেলার জাইকা কর্মকর্তা ইমরান আলী, সদর উপজেলার পারগানা পরিষদের উপদেষ্টা আমিন হেমব্রম, মাঝিহাড়াস-আতাহার যুগিডাইং গ্রামের প্রধান হীরালাল টুডু, মাঝিহাড়াম-দেলবাড়ি গ্রামের প্রধান বিমল হেমব্রম, এসআইএল ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের এরিয়া ম্যানেজার নিকোলাস মুরমু, রেডিও মহানন্দার সহকারী স্টেশন ম্যানেজার রেজাউল করিম।
এসআইএল ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’র সহযোগিতায় এই কর্মসূচির আয়োজন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা মাঝি এবং পারগানা পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
অন্যদিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের বাবুডাইংয়ে অবস্থিত আলোর পাঠশালায় ‘ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস’ পালিত হয়েছে। সোমবার বিদ্যালয়টির মিলনায়তনে দুপুর সাড়ে ১২টায় এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
দিবসটির তাৎপর্য উল্লেখ করে সূচনা বক্তব্য দেন প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর। দিবসটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন বিদ্যালয়টির সাঁওতাল সম্প্রদায়ের শিক্ষক লুইশ মুর্মু, ট্রেম হাঁসদা, বিমল হাঁসদাক্, কোল শিক্ষক নির্মল কোল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিনিয়র শিক্ষক সাঈদ মাহমুদ।
বক্তারা বলেন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামের ইতিহাসে ১৮৫৫ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহ এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। এটি ছিল প্রথম সশস্ত্র গণসংগ্রাম। এ সশস্ত্র সংগ্রাম ও সংগ্রামীদের আত্মত্যাগ পরবর্তীকালে ভারতবর্ষের জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করেছিল। তাই সাঁওতাল বিদ্রোহ মুক্তিকামী মানুষের কাছে আজও এক অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে।