রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৩ মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

Last Updated on জুন ১৮, ২০২৫ by

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের সীমান্তে বৃষ্টির মধ্যেই শিশুসহ ২০ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মাসুদপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে আরো ২০ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনী-বিএসএফ। তাদের মধ্যে ১০ জন শিশু, ৩ জন পুরুষ ও ৭ জন মহিলা রয়েছেন। এরা সবাই বাংলাদেশী নাগরিক।
বুধবার (১৮ জুন) ভোর পৌনে ৫টায় বৃষ্টির মধ্যেই মাসুদপুর বিওপির সীমান্ত পিলার ৪/৫-১এস এর কাছ দিয়ে তাদেরকে পুশইন করা হয়। পরে তাদেরকে বিজিবি আটক করে।
৫৩ বিজিবির চাঁপাইনবাবগঞ্জ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফাহাদ মাহমুদ রিংকু বলেন— আটককৃত ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তাদের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলায়। তারা কাজের সন্ধানে ১০-১৫ বছর আগে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম এলাকা থেকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে। এরপর হরিয়ানা এলাকায় একটি ইটভাটায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছিল। পরে ভারতীয় পুলিশ তাদের আটক করে বিএসএফের কাছে তুল দেয়। পরে তাদেরকে বাংলাদেশে পুশইন করে বিএসএফ।
লে. কর্নেল ফাহাদ মাহমুদ রিংকু আরো বলেন, নাগরিকত্ব যাচাই শেষে তাদেরকে শিবগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে পুশইন হওয়া ১০ জন শিশু ভারতেই জন্মগ্রহণ করেছে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে বিজিবির পক্ষ হতে বিএসএফকে জোর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে বলেও জানান ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক।
এদিকে স্থানীয় বাংলাদেশী বাসিন্দা নুরুল ইসলাম জানান, আজ (বুধবার) ভোরের কোনো এক সময় বৃষ্টির মধ্যে বিএসএফ ২০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে, যা অমানবিক।
মাসুদপুর এলাকার অপর বাসিন্দা ইব্রাহিম জানান, যাদেরকে পুশইন করা হয়েছে, তারা ১০ বছর ধরে ভারতে বাস করছিল। অথচ পরিবারসহ এক কাপড়ে বৃষ্টির মধ্যেই তাদেরকে বাংলাদেশে পুশইন করা হয়। ছোট শিশু ও মহিলাসহ সবাই বৃষ্টিতে ভিজে কাঁপছিল। এটা খুবই অমানবিক বিষয়।
পুশইন হওয়া রোহিনা বেগম জানান, তাদেরকে কয়েকদিন ধরে বিএসএফ আটকে রাখে এবং ঠিকমত খেতেও দেয়নি। তিনি বলেন, আজ (বুধবার) ভোরে এ সীমান্ত দিয়ে বৃষ্টির মধ্যে আমাদেরকে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখনো ভেজা কাপড়ে আছি। আমার বাচ্চাটা ভিজে ঠাণ্ডায় কাঁপছে। স্থানীয়রা আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন।
পুশইন হওয়া অপর ব্যক্তি মনির হোসেন জানান, ১৭ বছর আগে ভারতের হরিয়ানায় যান তিনি। সেখানে ইটভাটায় কাজ করার সময় স্থানীয় পুলিশ গত ২৪ মে ধরে নিয়ে আটকে রাখে। পরে ১৫ জুন গাড়িতে করে এনে আজ (বুধবার) এ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়।
পুশইন হওয়া মঈনুল ইসলাম জানান, হরিয়ানার ভাটিপাড়ায় কাজ করার সময় পুলিশ তুলে নিয়ে আটকে রাখার পর নির্যাতন করে। পরে বিএসএফের কাছে তুলে দেয়। আজ (বুধবার) ভোরে এক কাপড়ে বাংলাদেশে জোর করে পাঠিয়ে দেয়।
পুশইন হওয়া এই ২০ জন হলেন—
কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার সরকারটায়ী গ্রামের মো. মনির হোসেন (৩০), মোছা. শামসুন নাহার (৩৪), মোছা. রহিমা খাতুন (১৪), মোছা. আরজিনা খাতুন (২১) ও মো. আজিজুল হক (৭); ফুলবাড়ী উপজেলার ঘড়িবাড়ী গ্রামের মোছা. জরিনা বেগম (৩৫), মোছা. হাসি মনি (১৪), ও মোছা. হাসনা বেগম (৩০); পাগলা গ্রামের স্বরসতী (২১); পানিমাসকুটি গ্রামের মো. ফেরদৌসি (২২); খাইজারতলা গ্রামের মো. মইনুল ইসলাম (২৫), মদিনা (২) ও ফিরোজ (৮); উলিপুর উপজেলার ইসলামপুর হিন্দুপাড়ার শ্রী চন্দন (২৬), শ্রী নয়ন (২) ও শ্রী গোপাল (৫) ও সাতভিটা গ্রামের আলো (১৮)।
এছাড়া রংপুর জেলার কোতোয়ালি থানার সাতমাথা গ্রামের মোছা. রেহেনা খাতুন (১১), মোছা. দিলরুবা খাতুন (১৩), মো. শহিদ হোসেন (৪)।
প্রসঙ্গত, এর আগে দুই দফায় জেলার গোমস্তাপুর সীমান্ত দিয়ে গত ২৮ মে রাতে ১৭ জন এবং ৩ জুন ভোরে ভোলাহাট উপজেলার চাঁনশিকারী সীমান্ত দিয়ে ৮ জনকে পুশইন করে বিএসএফ।

About The Author

শেয়ার করুন