Last Updated on জুন ২৭, ২০২৪ by
৪১০ মিলিয়ন বছর আগে ‘ফুটন্ত শিলা’ যেভাবে মঙ্গোলিয়ায় মহাসাগর সৃষ্টি করেছিল
প্রায় ৪০০ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর ভূত্বক এবং গলিত লোহার কেন্দ্রের মধ্যকার গরম, কঠিন শিলার পুরু স্তর থেকে উত্তপ্ত শিলা উঠে এসে মঙ্গোলিয়ার ভূত্বককে ছিন্নভিন্ন করেছিল। সেখানে সৃষ্টি করেছিল একটি মহাসাগর। অনুমান করা হচ্ছে, এই মহাসাগর ১১৫ মিলিয়ন বছর ধরে টিকে ছিল। এই মহাসাগরের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস গবেষকদের ‘উইলসন চক্র’ বা সুপারকন্টিনেন্টগুলো বিভক্ত হয়ে আবারও একত্র হওয়ার প্রক্রিয়াটি বুঝতে সহায়তা করতে পারে। সুপারকন্টিনেন্ট বলতে মূলত মহাদেশ থেকেও বড় তথা অতিরিক্ত বৃহৎ ভূখ-কে বুঝানো হয়, যা পরবর্তীতে ভাঙনের সম্মুখীন হয়েছিল। মাদ্রিদের ন্যাশনাল স্প্যানিশ রিসার্চ কাউন্সিলের ভূ-বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল পাস্তোর-গ্যালান বলেন, এটি ধীর এবং বিস্তৃত একটি প্রক্রিয়া। বিষয়টি আমাদের পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া এমন কিছু প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলছে, যা বোঝা খুব সহজ নয়। ভূবিজ্ঞানীরা মোটামুটি নিখুঁতভাবে ধারণা করছেন, ২৫ কোটি বছর আগে শেষ সুপারকন্টিনেন্ট বা মহাভূখ-ের ভাঙ্গন ও পুনর্গঠন হয়েছিল। তবে এর আগে, পৃথিবীর ভূত্বক এবং গলিত লোহার কেন্দ্রের মধ্যে গরম, কঠিন শিলার পুরু স্তর বা ম্যান্টলের সঙ্গে ভূত্বক কীভাবে মিথস্ক্রিয়া করেছিল, তা আন্দাজ করা কঠিন। একটি নতুন গবেষণায় গবেষকরা ডেভোনিয়ান পিরিয়ড (৪১৯ মিলিয়ন থেকে ৩৫৯ মিলিয়ন বছর আগে) থেকে উত্তর-পশ্চিম মঙ্গোলিয়ায় আগ্নেয়গিরির শিলা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিলেন। ডেভোনিয়ান যুগ মূলত ‘মাছের যুগ’, যখন মহাসাগরে আধিপত্য বিস্তার করতো মাছেরা। সেই সময়ে গাছপালা স্থলভাগে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল। প্রাগৈতিহাসিক সেই সময়ে এই গ্রহে দুটি প্রধান মহাদেশ ছিল- লউরেনশিয়া এবং গন্ডোয়ানা। পাশাপাশি মাইক্রোমহাদেশগুলোর একটি দীর্ঘ প্রসারিত অংশ অবশেষে বর্তমান এশিয়ায় পরিণত হয়েছিল। এই মাইক্রোকন্টিনেন্টগুলো ধীরে ধীরে একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং অ্যাক্রিশন নামের একটি প্রক্রিয়াতে মিশে যায়। গবেষকরা উত্তর-পশ্চিম মঙ্গোলিয়ায় ফিল্ডওয়ার্ক শুরু করেন, যেখানে এই ‘মহাদেশ-বিল্ডিং’ সংঘর্ষের সময়ের শিলাগুলো ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে। ২০১৯ সালে প্রাচীন শিলা স্তরগুলোর বয়স এবং রসায়ন অধ্যয়ন করা হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ৪১ কোটি থেকে ৪১৫ মিলিয়ন বছর আগে মঙ্গলিয়ার ওই অঞ্চলে ‘মঙ্গোল-ওখোটস্ক’ মহাসাগর নামে একটি মহাসাগর তৈরি হয়েছিল। এই ফাটলের সাথে আসা আগ্নেয়গিরির শিলাগুলোর রসায়ন একটি ম্যান্টল প্লামের উপস্থিতি প্রকাশ করেছিল – বিশেষত গরম ম্যান্টল শিলার একটি ¯্রােত। চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেস’র ভূতত্ত্ব ও ভূপদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং গবেষণার প্রধান লেখক মিংশুয়াই ঝু বলেছেন, ম্যান্টল প্লামগুলো সাধারণত উইলসন চক্রের প্রথম পর্যায়ের ঘটনা। মহাদেশগুলোর ভাঙন এবং আটলান্টিক মহাসাগরের মতো একটি মহাসাগরের সৃষ্টি! উত্তপ্ত শিলাগুলো মহাদেশের একটি শক্ত অংশের ঠিক মাঝখান থেকে উঠে এসেছিল, যার ফলে ভূতক ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। ঝু বলেন, ক্ষুদ্র মহাদেশের মধ্যবর্তী দুর্বল দাগগুলো এবং প্লামের সঙ্গে মিলিত হয়ে সম্ভবত সমুদ্র গঠনে সহায়তা করেছে। গবেষকরা তাদের গবেষণার ফলাফল গত ১৬ মে জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারস জার্নালে প্রকাশ করেছেন। গবেষকেরা জানান, সমুদ্র যে জায়গায় সৃষ্টি হয়েছিল, সেই একই জায়গায় বন্ধ হয়ে গেছে। এটি সমুদ্রের জীবনচক্রের একটি সাধারণ প্যাটার্ন। গবেষণার বিজ্ঞানীরা বলেন, লোহিত সাগরে আজ যা দেখা যায়, ‘মঙ্গোল-ওখোটস্ক’ মহাসাগরের গঠন সম্ভবত এর অনুরূপ ছিল। যেখানে ভূত্বক প্রতি বছর প্রায় ০.৪ ইঞ্চি (১ সেন্টিমিটার) করে ছড়িয়ে পড়ছে। লোহিত সাগর একটি বৃহত্তর মহাদেশীয় ফাটলের অংশ, যা কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে পূর্ব আফ্রিকায় একটি নতুন মহাসাগর তৈরি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও ভূতাত্ত্বিকরা এখনো জানেন না যে, অন্যান্য মহাদেশীয় শক্তি এই মহাসাগরকে পুরোপুরি উন্মুক্ত হতে বাধা দেবে কিনা।