রাশিয়ার আক্রমণে ইউক্রেইনের কয়েকশ হাসপাতাল ও অন্যান্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে আর এতে চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করার সুযোগ হারিয়েছেন এবং ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা করার মতো ওষুধ পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেইনের প্রধান যুদ্ধক্ষেত্র পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের অনেক এলাকায় জরুরি অ্যান্টিবায়োটিকের অভাবও দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার একটি দাতব্য মেডিকেল গোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে দেওয়া ভিডিও বক্তৃতায় তিনি বলেন, “শুধু মেডিকেল অবকাঠামোর কথাই যদি ধরেন, আজকের দিন পর্যন্ত রাশিয়ার সেনারা ৪০০ স্বাস্থ্যসেবা ইনস্টিটিউট: হাসপাতাল, প্রসূতি ওয়ার্ড, ক্লিনিক ধ্বংস বা ক্ষতিসাধন করেছে।” রাশিয়ার বাহিনীগুলোর দখলে যাওয়া এলাকাগুলোর পরিস্থিতি বিপর্যয়কর বলে জানিয়েছেন তিনি। “ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা করার মতো কোনো ওষুধ নেই। ডায়াবেটিসের ইনসুলিন নেই। পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন। অস্ত্রোপচার করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি এমন যে, পর্যাপ্ত অ্যান্টিবায়োটিকও নেই,” বলেছেন তিনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ৯ মার্চ অবরুদ্ধ মারিউপোল শহরে একটি মাতৃসদন ধ্বংস ইউক্রেইনের যুদ্ধে সবচেয়ে নিন্দিত ঘটনাগুলোর একটি।
এই হামলার ছবিগুলোকে সাজানো বলে অভিযোগ করে রাশিয়া বলেছে, ওই স্থাপনাটি ইউক্রেইনীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ব্যবহার করতো। ক্রেমলিন বলেছে, তারা শুধু সামরিক ও কৌশলগত স্থাপনাগুলোকেই হামলা চালায়, বেসামরিকদের লক্ষ্যস্থল করে না। এর বিপরীতে ইউক্রেইন প্রতিদিন রাশিয়ার গোলাবর্ষণ ও লড়াইয়ে বেসামরিক হতাহতের খবর দিয়ে যাচ্ছে আর রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করছে। কিন্তু রাশিয়া সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। দোনেৎস্ক অঞ্চলের গভর্নর পাভলো কিরিলেঙ্কো জানিয়েছেন, ক্রামাতোর্স্ক শহরে ব্যাপক গোলাবর্ষণে ২৫ জন আহত ও মোট ৩২টি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত মাসে এই শহরের একটি রেলস্টেশনে বোমা হামলায় ৫০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছিল।
রাশিয়া ও ইউক্রেইনের দেওয়া যুদ্ধক্ষেত্রের এসব প্রতিবেদন রয়টার্স স্বাধীনভাবে যাচাই করে দেখতে পারেনি বলে জানিয়েছে। যুদ্ধের প্রথম কয়েক সপ্তাহে কিইভ দখলে ব্যর্থ হওয়ার পর রাশিয়া ইউক্রেইনে পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে আক্রমণ জোরদার করেছে, এখানে আজভ সাগরের তীরবর্তী বন্দরনগরী মারিউপোল তাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্যস্থল। সেখানে একটি ইস্পাত কারখানায় অবস্থানরত অবশিষ্ট ইউক্রেইনীয় সেনাদের সঙ্গে রুশ সেনাদের তীব্র রক্তক্ষয়ী লড়াই চলছে বলে জানা গেছে। ইউক্রেইনকে ‘নিরস্ত্র’ ও ‘নব্যনাৎসীমুক্ত’ করতে প্রতিবেশী দেশটিতে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালাচ্ছে বলে দাবি মস্কোর। অপরদিকে মস্কোর এ দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে রাশিয়া ইউক্রেইনের ‘সামরিক আগ্রাসন’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ কিইভ ও তার পশ্চিমা মিত্রদের। ১০ সপ্তাহ ধরে চলা ইউক্রেইনের যুদ্ধে দেশটির বহু শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, কয়েক হাজার লোক নিহত ও ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।