রবিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১২ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫ রজব, ১৪৪৬ হিজরি

Last Updated on জুলাই ৯, ২০২৪ by

হারিকেন বেরিলের তাণ্ডব, টেক্সাসে বিদ্যুৎহীন ২৭ লাখ মানুষ

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে সোমবার প্রবল শক্তিশালী হারিকেন বেরিল আঘাত হেনেছে। এতে সেখানকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভয়াবহ এই ঝড়ের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। অন্তত তিনজনের মৃৎয়ুর খবর বলা হয়েছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়েছে, ঝড়ে ২৭ লাখেরও বেশি মানুষ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া হিউস্টনের বৃহত্তম বিমানবন্দর থেকে ১৩০০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বিদ্যুৎ নেই কয়েক লাখ বাড়িতে। বন্ধ হয়ে গেছে বহু রাস্তা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের উপকূল হয়ে এই ঝড় আমেরিকায় ঢুকেছে। আগের চেয়ে এর ভয়াবহতা অনেকটা কমে গেলেও বেরিলের দাপটে তছনছ হয়ে গেছে টেক্সাসের উপকূল অঞ্চল। প্রবল বৃষ্টিতে শুরু হয়েছে বন্যা। উদ্ধারকারীরা সব জায়গায় এখনো পৌঁছতে পারেননি। ইউএস ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি) জানিয়েছে, জলোচ্ছ্বাস এবং ভারি বৃষ্টির সঙ্গে উপকূলীয় টেক্সাস শহর মাটাগোর্দাকে আঘাত করার পর হারিকেন থেকে দুর্বল হয়ে পড়ে বেরিল। বিবিসি বলছে, স্থানীয় সময় সোমবার সকালে যখন বেরিল প্রথম টেক্সাসে আঘাত হানে, তখন এটি একটি ক্যাটাগরি ওয়ান হারিকেন হিসেবে সেখানে আছড়ে পড়েছিল। কিন্তু তার পর থেকে ধীরে ধীরে শক্তি কমে এটি গ্রীষ্মম-লীয় ঝড়ে পরিণত হয়েছে। টেক্সাসে ঝড়ের সময় ৫৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তি বিদ্যুতের লাইনের ধাক্কায় মারা গেছেন। একই কাউন্টিতে ৭৪ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা বাড়ির ছাদে গাছ ভেঙে পড়ার কারণে প্রাণ হারিয়েছেন। হিউস্টনের শহরতলিতে পুলিশ উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছে। হিউস্টন একটি নিচু উপকূলীয় শহর হওয়ায় বন্যার ঝুঁকি বেশি। ঝড়ের সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৭৫ মাইল এবং ঝোড়ো বাতাসের গতিসীমা ৮৭ মাইল পর্যন্ত পৌঁছেছিল। স্থানীয় গভর্নর জানিয়েছেন, বিদ্য়ুৎ আসতে দিনকয়েক সময় লাগবে। কর্মীরা কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু আবহাওয়ার কারণে দ্রুত কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। ঝড়ের পর প্রবল বৃষ্টিতে প্লাবিত হয় একাধিক হাইওয়ে। টেক্সাসে একাধিক তেল শোধনাগার আছে। ঝড়-বৃষ্টির জেরে কয়েকটি শোধনাগার বন্ধ করে দিতে হয়। টেক্সাসের উপকূলে পৌঁছে ঝড়টি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। ঝড়টি হিউস্টন অতিক্রম করার সময় টেক্সাসের বেশ কয়েকটি কাউন্টিতে টর্নেডো সতর্কতা জারি করা হয়। এখন ঝড়টি শক্তি হারিয়ে ধীরে ধীরে উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে সরে যাচ্ছে, তবে ভারি বর্ষণ এবং আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি রয়ে গেছে। এর আগে গত ২ জুলাই আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট হারিকেন বেরিল দক্ষিণ-পূর্ব ক্যারিবীয় অঞ্চলে তা-ব চালায়। আটলান্টিকে ক্যাটাগরি-৫ হারিকেনে রূপ নিয়েছিল হারিকেন বেরিল। এরপর শক্তি কমে ক্যাটাগরি-৪ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে ঘণ্টায় ২৭০ কিলোমিটার গতিবেগে ছুটতে থাকে। ক্যারিবীয় অঞ্চলে তা-ব চালায়। ওই এলাকার প্রায় ২৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে হারিকেন বেরিল গত বুধবার জ্যামাইকায় আঘাত হানে। জ্যামাইকার দক্ষিণ উপকূলকে কেন্দ্র করে বেরিল আঘাত হেনেছিল। বন্যাপ্রবণ এই এলাকা থেকে বাসিন্দাদের আগেই সরানো শুরু করেছিলেন জরুরি বিভাগের কর্মীরা। কিছুটা দুর্বল হওয়ার আগে শক্তিশালী ক্যাটাগরি-৪ ঝড় হিসেবে সেখানে আঘাত হেনেছিল। জ্যামাইকায় ঝড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এরপর বেরিল গত শুক্রবার আঘাত হানে মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপে। হারিকেনের প্রভাবে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সৃষ্টি হয়েছিল। তবে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। টেক্সাসের উপকূলে আঘাত হানার আগে বেরিলের কারণে মোট ১১ জনের মৃৎয়ুর খবর পাওয়া গেছে। এরপর সর্বশেষ আঘাত হানল টেক্সাসে। এখানে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। সূত্র : রয়টার্স

About The Author

শেয়ার করুন