সুন্দরবনে বাড়ছে বাঘ

85

সুন্দরবনে বাড়ছে বাঘের সংখ্যা। তিন বছরে বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৮টি বেড়ে এখন ১১৪টি। বন বিভাগ থেকে করা সুন্দরবনের বাঘ শুমারি-২০১৮ শীর্ষক সমীক্ষায় এই তথ্য পাওয়া গেছে। দুই বছর ধরে বন বিভাগ ও দেশের কয়েকজন বাঘ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে জরিপটি হয়েছে।
এর আগে ২০১৫ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা পাওয়া গিয়েছিল ১০৬টি। ১ ডিসেম্বর ২০১৬ থেকে ১৪ মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত সাতক্ষীরা রেঞ্জের ১২০৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় দুটি সেশনে ২৫৩ গ্রিডে ক্যামেরা বসিয়ে জরিপ পরিচালনা করা হয়। পুনরায় ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ থেকে ২৪ এপ্রিল ২০১৮ পর্যন্ত খুলনা রেঞ্জের ১৬৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় একটি সেশনে ৯৬টি ক্যামেরা বসিয়ে জরিপ পরিচালনা করা হয়। একইভাবে ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ থেকে ১০ মে ২০১৮ পর্যন্ত শরণখোলা রেঞ্জের ২৮৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় দুটি সেশনে ১৮৭ গ্রিডে ক্যামেরা বসিয়ে জরিপ করা হয়।
মোট চারটি ধাপে তিনটি ব্লকে ১৬৫৬ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ক্যামেরা বসিয়ে ২৪৯ দিন ধরে পরিচালিত ওই জরিপে ৬৩টি পূর্ণ বয়স্ক বাঘ, ৪টি জুভেনাইল বাঘ (১২-১৪ মাস বয়সী) এবং ৫টি বাঘের বাচ্চার (০-১২ মাস বয়সী) ২৪৬৬টি ছবি পাওয়া যায়। যেহেতু সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের বিচরণক্ষেত্র ৪৪৬৪ বর্গকিলোমিটার সেক্ষেত্রে বাঘ গবেষণা ও জরিপে সর্বাধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি SECR মডেলে তথ্য বিশ্লেষণ হয়। তাতে দেখা যায়, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি।
এর আগে ২০১৫ সালে USAID BAGH প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে পরিচালিত জরিপে সুন্দরবনে ১০৬টি বাঘের অস্তিত্ব চিহ্নিত হয়েছিল। তিন বছরের ব্যবধানে বাঘের সংখ্যা বেড়ে ১১৪টি হওয়ায় সুন্দরবনে বাঘ ৮ শতাংশ বেড়েছে বলে মতামত দিয়েছেন জরিপ পরিচালনাকারী বিশেষজ্ঞরা।
সুন্দরবনে প্রথমবারের মতো বাঘ শুমারি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৫ সালে। একটি বেসরকারি গবেষণায় জার্মান গবেষক হেন রিডসে জানান, সুন্দরবনে ৩৫০টি বাঘ রয়েছে। ১৯৮২-৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ পরিচালিত এক জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৩০০টি বলে উল্লেখ করা হয়। ১৯৯৮ সালে নেপালী বংশোদ্ভূত আমেরিকান গবেষক কীর্তি তামাং সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য নিয়ে পরিচালিত একটি প্রকল্প শেষে বাঘের সংখ্যা ৩৫০টি বলে উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে একটি জরিপ শেষে বন বিভাগ জানায়, সুন্দরবনে বাংঘের সংখ্যা ৪৪০টি। কিন্তু এই জরিপটিতে তাড়াহুড়ো, ও কাঁচা হাতে তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ ওঠে। ২০১৫ সালের জরিপটিতে অত্যাধুনিক ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হলেও আগের প্রায় সবগুলো জরিপই করা হয়েছিল পাগমার্ক (পায়ের ছাপ) পদ্ধতিতে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সুন্দরবনে পরিবেশগত কিছু সমস্যা আছে। কিন্তু বাঘ রক্ষার জন্য চোরা হরিণ ও বাঘ শিকারিদের তৎপরতা বন্ধ করা বিশেষভাবে জরুরি। তাহলেই কেবল সুন্দরবনে বাঘ টিকে থাকবে। নয়তো সেদিন হয়তো খুব বেশি দূরে নয় যে, সুন্দরবন থেকে বাঘ হারিয়ে গেছে। সূত্র : বাংলার আলো।