Last Updated on জানুয়ারি ১৯, ২০২৫ by
সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক : বিজিবির পাহারায় মাঠে কাজ করছেন কৃষকরা
এ.কে.এস. রোকন, শিবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত এলাকা বিনোদপুর ইউনিয়ন এবং ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকার পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। গত শনিবার দফায় দফায় দুই দেশের সীমান্তবাসীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া আর সংঘর্ষের পর বিকেলে উভয় দেশের বিজিবি ও বিএসএফ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। দুই দেশই শূন্য রেখা থেকে সীমান্তবাসীকে সরিয়ে নিলে পারিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।
রবিবার সকাল থেকেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখা যায়। বিজিবি’র পাহারায় মাঠে কাজ করতে দেখা গেছে কৃষকদের। সেই সাথে বিশ্বনাথপুর বাজারের শেষ মাথায় চেকপোস্ট বসিয়ে বহিরাগত ও উৎসুক জনতার সীমান্তমুখী ঢল বন্ধ করেছে বিজিবি।
এর আগে শনিবার স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের সীমান্তবর্তী এলাকায় কৃষকরা কাজ করার সময় ভারতীয় সীমান্তবাসীর আক্রমণে ৩ বাংলাদেশী আহত হন। ৩০টি আমগাছ ও অর্ধশত বরই গাছের ডালপালা কেটে ফেলে ভারতীয়রা।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, পরিবেশ শান্ত হলেও শনিবারের ঘটনার কারণে উৎকণ্ঠা রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে ক্ষোভও।
সরেজমিনে দেখা যায়, চৌকা সীমান্ত এলাকার মাঠে কাজ করছেন কৃষকরা। কেউ আলু তুলছেন, কেউবা তুলছেন অন্য ফসল। আবার কেউ দিচ্ছেন সেচ। সবাই ব্যস্ত জমি আবাদ ও ফসল তোলার কাজে। শূন্য রেখায় বিজিবির টহলের পাশাপাশি ফসলের মাঠে বিভিন্ন ক্ষেতের মধ্যে বিজিবির পাহারা লক্ষ করা গেছে।
এদিকে রবিবার বিজিবির ৫৯ মহানন্দা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া ও বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন শূন্য রেখায় না যেতে এবং পদদলিত করে ফসল নষ্ট না করতে জনসাধারণকে সচেতন করার লক্ষে বিনোদপুরের বিভিন্ন গ্রামে মতবিনিময় করেছেন।
গ্রামবাসীও বহিরাগত ও অতিউৎসাহী জনসাধারণকে সীমাান্তে যেতে না দিতে একমত হয়েছেন।
কালিগঞ্জ গ্রামের কৃষক কামাল উদ্দিন জানান, ক্ষেত দেখতে গেছিলাম। আমার পাশের ক্ষেত শনিবার নষ্ট হয়েছে, তবে আমার ক্ষেত এখনো সুরক্ষিত আছে। তারপরও আতঙ্কে আছি। বিজিবির পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে, আর কোনো সমস্যা হবে না। এ জন্য মাঠে যাওয়ার সাহস পেয়েছি। তিনি বলেন, তবে আমরা শান্তিতে মাঠে কাজ করতে চাই, কোনো অশান্তি চাই না।
বিশ্বনাথপুর গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম জানান, সীমান্ত পরিবেশ স্বাভাবিক থাকলেও আমরা আতঙ্ক নিয়েই মাঠে কাজ করছি। মাঠে চাষাবাদ ও ফসল তোলার কাজ রয়েছে চাষিদের। তাই সীমান্তে যেন অশান্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি আর না হয়। তবে ভারতের আধিপত্য ও আগ্রাসন আর বরদাস্ত করা হবে না। কোনো অপচেষ্টার পুনরাবৃত্তি হলে দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে।
বিনোদপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য্য বাদশাহ হোসেন জানান, ভারত থেকে ককটেল হাতবোমা নিক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের জনগণ ক্ষিপ্ত হয়েছে। পরিবেশ অশান্ত করার জন্য তারা দায়ী। আর যেন এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেজন্য বিষয়টি তদন্ত করে বিজিবি ও বিএসএফের ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন জানান, জনগণ ও বিজিবির প্রচেষ্টায় সীমান্ত পরিবেশ এখন পুরোপুরি শান্ত। বাংলাদেশ এবং ভারতের কিছু খারাপ লোক মূলত সীমান্তের খারাপ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। পক্ষান্তরে বিজিবি বারবার পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে পরিবেশ শান্ত করার চেষ্টা করছে। কয়েক দফা মতবিনিময়ের মাধ্যমে সীমান্তবাসীকে বহিরাগতদের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। সীমান্তে কৃষক ও সংশ্লিষ্টরা ছাড়া গ্রামবাসী, মোবাইল ফোন নিয়ে ভিডিও ধারণকারীদের বা বহিরাগতদের সীমান্তে প্রবেশ বন্ধ করতে জনপ্রতিনিধিরা বিজিবির সাথে কাজ করছে।
তার দাবি, সম্প্রতি গুজব ছড়িয়ে বাংলাদেশের দুষ্টু লোকেরা ভারতে এবং ভারতের দুষ্টু লোকেরা বাংলাদেশের ভূখ-ে ফসলের ক্ষতি করে সীমান্ত পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করছে।
বিজিবির ৫৯ মহানন্দা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া জানান, আমাদের দৈনন্দিন টহল কার্যক্রম সীমান্ত এলাকায় চলমান রয়েছে। বর্তমানে সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও সুন্দর রয়েছে। কৃষকরা মাঠে নির্বিঘেœ কাজ করতে পারছে। পতাকা বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কৃষক এবং স্থানীয় জনসাধারণের ফসলের মাঠ নষ্ট না করার স্বার্থে সীমান্ত এলাকায় না যাবার অনুরোধ করেন তিনি।