সিনেমা হল খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত ১৫ সেপ্টেম্বরের পর : তথ্যমন্ত্রী

31

করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষেণ করে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের পর বন্ধ থাকা সিনেমা হলগুলো খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক ও প্রদর্শক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তথ্যমন্ত্রী এ কথা জানান। বৈঠকের শুরুতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ কুমার দাস সিনেমা হল খুলে দেয়ার দাবি জানান। তথ্যমন্ত্রী বলেন, সিনেমা হলগুলো খোলার ব্যাপারে আমি আপনারাদের সঙ্গে ইতোপূর্বেও আলোচনা করেছি। তবে এই মাসে কোভিড-১৯-এর প্রতিদিনের যে মৃত্যুর হার, মৃত্যুর সংখ্যা কিংবা আক্রান্তের সংখ্যা যেটি দেখতে পাচ্ছি, এটি আসলে খুব বেশি কমেছে বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে না। কারণ গতকালও (গত বুধবার) ৫৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি বলেন, সুতরাং এই পরিস্থিতিতে খোলাটা কতটুকু যৌক্তিক হবে সেটা একটা বড় প্রশ্ন। আমি অনুরোধ জানাব, আগামী মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে তারপর আমরা বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব কখন খোলা যায়।
আমার মনে হয়, আমরা অন্তত আগামী মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করি। এরপর আপনাদের সঙ্গে বসে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। এর আগে খোলা কতটুকু সমীচীন হবে, এ ব্যাপারে আমি পরিপূর্ণভাবে কনভিন্স নই। ভারতে এখনো সিনেমা হল খোলেনি, সেখানে সিনেমার দর্শক অনেক বেশি। আবার সিনেমা হল খুললে সেখানে দর্শক যাবে কি-না, সেটিও একটি প্রশ্ন। এবার বাণিজ্যিক ছবি নির্মাণের জন্য অনুদান দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া অনুদানের ছবি ও অনুদানের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান তথ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিনেমা হলগুলো উন্নয়নের জন্য অনেক আন্তরিক জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, যখনই আমি কথা বলেছি, তিনি এ ব্যাপারে নানা পরামর্শ-নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি স্পষ্ট আমাকে বলেছেন, আমি চাই প্রতি উপজেলায় অন্তত একটি করে সিনেমা হল হোক। গত একনেক মিটিংয়ে তিনি আইসিটি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন, যাতে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সিনেমা হলগুলোকে আধুনিকায়নের জন্য কিছু করা যায়। এ নিয়ে আমি আইসিটি মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, আমরা বসব। তাদের মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কীভাবে কী করা যায়। তথ্যমন্ত্রী বলেন, আপনাদের সঙ্গে করা আলোচনার বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন, সিনেমা হল যেগুলো বন্ধ আছে সেগুলোকে চালু করা এবং নতুন সিনেমা হল চালু করার লক্ষ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি সফট লোন দেয়ার ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে নির্দেশনা দেবেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি পুরো দলটাই হত্যার রাজনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আওয়ামী লীগ অবলীলায় হত্যা, খুন, গুম করে যাচ্ছে- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি পুরো দলটাই হত্যার রাজনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। জিয়াউর রহমান নিজে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সাথে জড়িত। হত্যার মাধ্যমেই জিয়াউর রহমানের উত্থান। হত্যার মাধ্যমেই জিয়া ক্ষমতায় টিকে ছিলেন। শুধু মানুষ হত্যা করেছেন তা নয়; সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীর কয়েক হাজার কর্মকর্তা ও জোয়ানদের হত্যা করে তিনি ক্ষমতায় টিকেছিলেন। পরবর্তীতে নিজেও হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি জিয়াউর রহমানের হত্যাকা-ের বিচারটাও করেনি। তারা তিন দফায় ক্ষমতায় ছিল। তখন দেশে যে গুম-খুন হয়েছে সেটা নজিরবিহীন।
২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর ডজন ডজন হত্যাকা- হয়েছে। সে সমস্ত হত্যার বিচার না হওয়ায় জন্য সংসদে ইমডেমনিটি দেওয়া হয়েছিল। যাদের রাজনীতি হত্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত তারা এ নিয়ে কথা বললে সেটি হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়। আমরা যেকোন বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের বিপক্ষে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন তারা রাজপথের আন্দোলনে নামবেনÑ এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রথমত এখন দেশে ও সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসের মারাত্মক প্রাদুর্ভাব চলছে। ফলে মানুষের জীবন পর্যুদস্ত। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে অর্থনীতি স্থবির হয়ে গেছে। যদিও আমাদের দেশে অর্থনীতির চাকা সচল হয়েছে। জুলাই মাসে আমাদের দেশের রপ্তানি গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আমাদের দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। এই পরিস্থতিতে তারাই রাজপথে নামার কথা বলতে পারে যারা শুধু নিজের দলের স্বার্থের কথা চিন্তা করে, নিজের দল নিয়ে ভাবেÑজনগণের কথা ভাবে না। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির গত সাড়ে ১১ বছরের রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা, কর্মসূচির ক্ষেত্রে তাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতাÑ তারা কখনো সাধারণ জনগণের কথা ভাবেনি। তারা সবসময় ভেবেছে দলের কথা, কীভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায় সেই কথা।
কীভাবে সরকার ফেলে দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া যায় এগুলোই ভেবেছে। সেজন্য তাদের সমস্ত আন্দোলন হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন, তারেক জিয়ার মামলা, খালেদা জিয়ার মামলা ইত্যাদি নিয়ে। দেশের জনগণ নিয়ে তারা ভাবেনি, তারা যে দেশের জনগণ নিয়ে ভাবে না সেটার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে রিজভী আহমেদের বক্তব্য। এ সময় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু উপস্থিত ছিলেন।