আমরা যেমন সালাম, আদাব, নমস্কার ইত্যাদি করে থাকি ঠিক এমনই এক শ্রদ্ধা বা শুভকামনা মূলক একটি নিবেদন সাওয়াদিকা যা প্রথম দেখাতেই আমরা করে থাকি। আমি প্রথমে বুঝে উঠতে পারিনি যখন রেশা ব্যাংককের কাশেটসার্ট ইউানিভার্সিটিতে সাওয়াদিকা বলে আমাদের সম্বোধন করলেন। এর অর্থটি আর বুঝতে বাকি রইলো না যখন সাথে সাথে তিনি সালাম শব্দটি উচ্চারণ করলেন। সাথে সাথে আমরা সকলে সাওয়দিকা বললাম। এই যে কালচার, এই যে বিনয় এর ব্যবহার এক এক ধর্ম বা বিশ্বাসের জায়গায় এক এক রকম কিন্তু এর যে গুঢ় অর্থ অন্যকে সম্মান জানানো তা কিন্তু বিশ্বজনীন। সাথে সাথে মনে পড়ে গেল ছোট বেলায় আমাদের শিক্ষক মহোদয়-রা যে শিষ্টাচার শিখিয়েছিলেন তা শুধু একটি গ-ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় এ আচার-আচরণ, কৃষ্টি-কালচার বিশ্বজনীন মানবের একে অপরের প্রতি সম্মানসূচক আহ্বান যা কাল থেকে মহাকালে ছড়িয়ে যায়। ট্রেনিং-এর একটি বিষয় মনে এলো। একজন দক্ষ ট্রেনার ‘এডুকেটেড’ এন্ড ‘লার্ণেড’ শব্দ দুটি একটু ভাল করে বুঝিয়ে দিলেন যা আগে কখনো এতটা গভীর করে ভাবিনি। দুটো শব্দের অর্থই হচ্ছে শিক্ষিত। কিন্ত একটি হচ্ছে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শিক্ষা নিয়ে শিক্ষিত আর আরেকটি হচ্ছে শুধুই জেনে শুনে শিক্ষিত যা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ নেই। প্রকৃত অর্থে এই যে আমাদের সামনে শিক্ষার মিরাকেল খেলা চলছে তা দেখেও না দেখার ভান করে চলা ছাড়া আর কী-ই বা করা। আমাদের দেশে এই জানা শোনা শিক্ষিত লোকের অভাব নেই। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা খুবই কম। তা না হলে স্বাধীনতার এতো বছর পরও আমাদের দেশে সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, অন্যায়-অত্যাচার, মিথ্যা আর ফাঁকিতে ভরে আছে ইট পাথরের সব দেয়াল। কথাগুলো সেদিন বড় ভাবিয়েছিলো।ইংরেজিতে একটি শব্দ আছে ‘এনগেজমেন্ট’। বিশেষ করে বিয়ের ক্ষেত্রে এই শব্দটি কানে বড়ই বাজে সেই ছোটবেলা থেকেই। বড়দের মুখে শুনতাম এর সাথে ওর বিয়ের এনগেজমেন্ট হলো। সেই যে এনগেজমেন্ট শব্দটি এর যে এতো বড় শক্তি তা কি আগে জেনেছিলাম? একটি আংটি বদলের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিয়ের উষ্ণতা। এক জনের ভাবনায় আরেকজন কতো বিমূঢ় থাকে সে শুভ ক্ষণের। আমাদের এই সমাজে বিভিন্ন ভালো কাজের বিভিন্ন ধারার মধ্যে যদি আমরা সবাই এনগেজ হতে পারতাম তা হলে কতই না ভালো হতো।
তবে হ্যাঁ স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই এনগেজ শব্দটি এতো বেশি প্রযোজ্য যে এটা ছাড়া কোন ক্লাসই সফল হতে পারে না। এটা কী করে হতে পারে? এর কোন নির্দিষ্ট জবাব নেই। এটা শিক্ষকের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলী যা কার্যকরের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের এনগেজ করতে হয়। কøাস শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শিক্ষকের সকল একটিভিটি একটি লেশন প্লানের মধ্য দিয়ে এই এনগেজমেন্টের কাজটি সম্পন্ন হতে পারে। একজন শিক্ষক যত বেশি শিক্ষার্থীর জগতে মনোযোগ করাতে পারেন তিনি তত সফল। এই কাজ অত সহজ নয়। এর জন্য প্রয়োজন নিবিড় চর্চা এবং অন্তর্ধান। আমরা শিক্ষকসহ সকল সেক্টরের কর্মজীবীরা যদি এই এনগেজমেন্ট কথাটির পজিটিভ অর্থ নিয়ে চলতে পারি তাহলে আমাদের এই দেশ খুব শীঘ্রই উন্নত দেশের আয়নায় মুখ দেখবে।
ছোট ছোট কথা কখনোই ছোট নয় যদি তা ভালোবাসার আলো ছড়ায়। আবার শুধু ভালোবাসা নয় ছোট ছোট কথা সুতীক্ষ্ম খোঁচা লাগায় এমন কি যদি সে ইশারা ইঙ্গিতও হয়। চোখের ডাকে আমরা কাছে আসি আবার এই চোখের ভ্রƒকুটি কারো ভেতরে কষ্টের দাগ কাটে। প্রতিটি মানুষের মনে ছোট বড় কিছু না কিছু দুঃখ তো থাকেই। এসব দুঃখ ভারাক্রান্ত মন জয় করে চলার শক্তি সবার এক রকম থাকে না। যারা এটা জয় করে চলতে পারে তারাই জীবনে জয়ী হয়। তাই হয়তো সেদিন রেশা আমাদের ট্রেনিং থেকে ফেরার পথে গাড়ীতে বসে আমাদের উদ্দেশ্যে বলছিলেন ÔOne day we all will die. We should overcome all sorrows and sufferings in life. We sould have smile over our face.”Suddenly I remembered one of our trainers quotation, “Another name of Thailand is Smile”. থাইল্যান্ডের মানুষের ভাষা খুব কোমল। তারা ন¤্র, ভদ্র, হাস্যোজ্জ্বল। সদাহাস্য থ্যাইল্যান্ডের আকাশ-বাতাস আর কোকিলের ডাক আজও আমার অনুভূতি ছুঁয়ে যায়।১ অক্টোবর-২০১৮ সন্ধ্যে ৬.০০ টায় যখন ঢাকা বিমান বন্দরে অবতরণ করলাম মনে হলো আমার গৃহে কতো দিন আসি নাই। মায়ের বুকে ফিরে এসে বার বার মনে হয় সেই সম্মান সূচক আহ্বান ‘সাওয়াদিকা’-ও বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি।আজ ১ ফেব্রুয়ারি-২০১৯ ‘গৌড় বাংলা’ প্রত্রিকার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর শুভ মূহুর্তে আমার এই অনুভূতিটুকু প্রকাশ করতে পেরে সম্পাদক শ্রদ্ধেয় অগ্রজ হাসিব ভাইয়ের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা গ্রকাশ করছি। হাসিবভাই এই সম্প্রতি থাইল্যান্ড থেকে সপরিবারে ঘুরে আসলেন। আশা করি আমার এ লেখাটি তাঁর অনুভূতিরও একটি অংশ হয়ে দাঁড়াবে। সেই সাথে ‘গৌড় বাংলা’পরিবারের সকল সদস্যের প্রতি রইলো আমার হৃদয়ের অন্ত:স্থল থেকে অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
লেখক : সহকারি শিক্ষক (ইংরেজি), হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।