‘আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ, পুষ্টিকর খাদ্যই হবে কাক্সিক্ষত ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী’- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রতিবছরের মতো এবারো চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বুধবার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি র্যালি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এসে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মঞ্জুরুল হুদার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন, জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হক। সভায় আরো বক্তব্য দেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ.কে.এম. তাজকির-উজ-জামান, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকতা ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রিয়াজুর রহমান রাজু, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. ইয়াছিন আলী। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন, সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কানিজ তাসনোভা। কৃষকদের মধ্য থেকে বক্তব্য দেন, ইফতেখারুল ইসলাম।
আলোচনা সভায় বালাইনাশক ডিলার, বালাইনাশক কোম্পানির প্রতিনিধি, জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হক বলেন, আমাদের খাদ্যের পেছনে কৃষকদের অবদান অপরিসীম। কৃষকরাই দেশের খাদ্য উৎপাদনের জন্য বেশি শ্রম দিয়ে থাকেন। তিনি আরো বলেন, আমরা কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি করব ও কৃষকদের সহায়তা করব। আমরা কৃষকদের পক্ষে আছি, কৃষকদের সাথে আছি। কৃষকরা অনেক সময় ধানের ন্যায্যমূল্য পান না। আমরা প্রশাসনিকভাবে এ ব্যাপারে এরই মধ্যে সহযোগিতা করেছি এবং আগামীতেও করব। বর্তমানে আমাদের খাদ্যের অভাব নেই কিন্তু খাদ্য সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব রয়েছে। কোন সময় কোন খাদ্যটা খাওয়া উচিত বা অনুচিত, কি পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করা উচিত এসব সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান অতীব জরুরি। আমরা আমাদের সন্তানদেরও সঠিকভাবে সঠিকমাত্রায় খাবার খাওয়াব। কেননা আমাদের ছেলেমেয়েরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তাই সকলকেই খাদ্যজ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হুদা বলেন, আমরা যদি কৃষির কথা বাদ দিয়ে পর্যাপ্ত খাদ্যের কথা চিন্তা করি তাহলে সেটা কখনোই সম্ভব নয়। কারণ, আমাদের যে খাদ্য সেটা কিন্তু পুরোটাই আমাদের চাষিরা উৎপাদন করে। ধান, গম, ভুট্টা, বিভিন্ন ফলমূল, শাকসবজি অথবা মাছ, মাংস প্রাণিসম্পদের সেক্টরের যেটি অবদান, এর পুরোটাই কিন্তু কৃষির অবদান সামষ্টিকভাবে এবং সবটুকুই কিন্তু চাষিরায় চাষ করে থাকে, তারাই উৎপাদন করে থাকে। তিনি আরো বলেন, এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে, ২০৩০ সালে ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে, পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়া, নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টিকর খাদ্য সম্পর্কে সবাইকে জানতে হবে। তাছাড়া জলবায়ুর পরিবর্তন ও বৈশ্বিক তাপমাত্রার প্রেক্ষাপটে যে খাদ্য সংকট হচ্ছে সেই চাহিদা পূরণ করতে সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে। এর জন্য শুধু কৃষির ওপর নির্ভর হলে চলবে না, এর জন্য পারিবারিক কৃষির কার্যক্রমও বাড়াতে হবে। তাহলেই পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রিয়াজুর রহমান রাজু বলেন, আজকে খাদ্য দিবস উদ্যাপন করছি বলে যে, এখানেই আমাদের কাজ শেষ তা কিন্তু নয়। আমাদেরকে আমাদের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য আজকের এই দিবসের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে হবে। নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে জানতে হবে। যারা এই নিরাপদ ও পুষ্টিসম্পন্ন খাদ্য সম্পর্কে অবহিত নয় তাদেরকে এই বিষয়ে জানাতে হবে, সচেতন করতে হবে। কর্মই আমাদের জীবনের ভবিষ্যৎ, অর্থাৎ আমরা যে কাজগুলো করব, সেটি আমাদেরকে আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে করতে হবে। এর জন্য পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে হবে। এই পুষ্টির চাহিদাগুলোর মধ্যে ৬টি উপাদান থাকে, এগুলো হলো ভিটামিন এ, বি১, বি১২, ফলিক এসিড, আয়রন এবং জিংক। আমরা এসব উপাদানগুলো যদি চালের মাধ্যমেও আমাদের জনগণকে সরবরাহ করতে পারি তাহলে সেটাও অনকে বড় কিছু পাওয়া হবে।
শিবগঞ্জ প্রতিনিধি : জেলার শিবগঞ্জে র্যালি ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে বিশ্ব খাদ্য দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বুধবার সকাল ১০টায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্ততরের আয়োজনে উপজেলা কৃষি অফিস কার্যালয় থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। র্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আবারো একই স্থানে গিয়ে শেষ হয় ।
এ সময় উপজেলা কৃষি অফিসার এস এস আমিনুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী রওশন ইসলাম।
গোমস্তাপুর : জেলার গোমস্তাপুরে বিশ্ব খাদ্য দিবস পালন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে র্যালি ও আলোচনা সভার অনুষ্ঠিত হয়।
বুধবার সকালে র্যালিটি উপজেলা চত্বর থেকে বের হয়ে রহনপুর পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা চত্বরে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় মিলিত হয়। এতে বক্তব্য দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিহাব রায়হান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শেখ হাবিবুল্লাহ, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার শেখ মোহাম্মদ আদম।
নিয়ামতপুর : নওগাঁর নিয়ামতপুরেও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়। বুধবার বেলা ১০টায় বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে উপজেলা পরিষদ মিলানায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়া মারীয়া পেরেরার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ।
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আইয়ুব হোসাইন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাদিরা বেগম, উপজেলা কৃষি অফিসার আমীর আব্দুল্লাহ মো. ওয়াহেদুজ্জামান, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার সেলিম উদ্দিন।
উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সফিউল হকের পরিচালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন, উপজেলা সমবায় অফিসার রুহুল আমীন, উপজেলা প্রেস ক্লাব সভাপতি তোফাজ্জলসহ অন্যরা।
Home চাঁপাইনবাবগঞ্জ গোমস্তাপুর সকলের খাদ্যজ্ঞান অর্জন জরুরি : বিশ্ব খাদ্য দিবসের আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক