-বিশেষ প্রতিবেদন-
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। একদিন তারাই চালাবে দেশ। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে উঁচু স্থানে রাখবে। একটি শিশু জন্ম নেবার আগে ও পরে নানা রকম সমস্যার সম্মুক্ষীন হতে হয় একটি পরিবারকে। বিশেষ করে মা বাবার দায়িত্বটা বেড়ে যায়। শিশু জন্ম নেবার পরে তাকে সঠিক ভাবে লালনপালন করাটাই হচ্ছে একজন মা-বাবার আসল কাজ। কী ভাবে সে যত্ম ও বড় করলে ভাল হয় সে বিষয়েও মা-বাবাকে ধারণা রাখতে হবে। শিশু ও মস্তিস্কের বিকাশ, শিশুরা কীভাবে শেখে সে সম্পর্কে আমরা কতটুকুই বা জানি।
বাড়ি তৈরির মত মস্তিস্কও একটি শক্ত ভিতের উপর তৈরি হয়। এটি শুরু হয় জন্মের আগে থেকেই এবং জীবনের প্রথম তিন বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মস্তিস্কের কোষগুলো কাঁচা মালের মত- অনেকটা ঠিক বাড়ি তৈরির কাঁচামাল যেমন, কাঠ এবং শিশুর অভিজ্ঞতা এবং মিথস্ক্রিয়া তার মস্তিস্কের কাঠামো তৈরিতে সহায়তা করে। বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য তার ব্যবস্থা করে এবং দেয়ালে রঙ করে। একটি শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তার মস্তিস্কে কতগুলো নিউরন (মস্তিস্কের স্নায়ুকোষ) থাকে এবং তাদের প্রাথমিক বিন্যাস কেমন হবে তা নির্ধারণ করে তার বংশগতি। জন্মের সময় একটি শিশুর মস্তিস্কে প্রায় ১০০ বিলিয়ন নিউরন থাকে যা কিনা একটি একটি ছায়াপথে যতগুলো তারা থাকে প্রায় তার সমান, এবং মস্তিস্কে যতগুলো নিউরন থাকবে তার সবটাই। গর্ভধারণের তিন সপ্তাহ পর থেকেই স্থায়ীভাবে মস্তিস্কের গঠণ শুরু হয়ে যায়। জন্মের আগেই মস্তিস্ক ট্রিলিয়নের বেশি নিউরন তৈরি করে এবং ‘‘সিনাপসেস’’ (মস্তিস্কের কোষগুলোর মধ্যে সংযোগ) ঘটে যা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি। জীবনের প্রথম বছরেই মস্তিস্কের মধ্যে ধারাবাহিক ভাবে লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন সংঘটিত হয়। মস্তিস্কে জন্মের সময়ই নিউরন থাকে এবং তাদের মধ্যে কিছু সংযোগ থাকে। নিউরনগুলো যতই পরিনত হতে থাকে তাদের মধ্যে সংযোগও ততই বাড়তে থাকে। জন্মের সময় প্রতিটি নিউরনে ২৫০০ সংযোগ থাকে। দুই অথবা তিন বছর বয়সে প্রতিটি নিউরনে এই সংযোগ হয় প্রায় ১৫০০০।
যেসব সংযোগ খুব অল্প অথবা কখনই ব্যবহৃত হয় না তা মস্তিস্ক মুছে ফেলে, এটি মস্তিস্কের বিকাশের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। শিশুদের জীবনে ‘সুযোগের জ্বানালা সময়টি খুবই স্পর্শকাতর যখন সুনির্দিষ্ট শিখন সংগঠিত হয়। উদাহরণস্বরুপ, বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে দৃষ্টির সাথে সংশ্লিষ্ট নিউরনগুলো ২ থেকে ৪ মাস বয়সের তথ্যের আদান-প্রদান শুরু করে দেয় এবং ৮ মাস বয়সে তা সবচেয়ে বেশি হয়। এই সময়ে যে শিশু তার চারপাশের পৃথিবীকে লক্ষ্যকরা শুরু করে তা মোটেই অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে জীবনের প্রথম দশ বছরে বাষার দক্ষতা সহজেই অর্জিত হয়। এই সময়েই শিশুর মস্তিস্কে তাদের নিজস্ব ভাষার সংযোগগুলো তৈরি হয়ে যায়। একটি ছোট শিশু যখন বারবার একই ধরনের শব্দের সাথে পরিচিত হয় তখন তা তার মস্তিস্কের কোষগুলোর মধ্যে সংযোগ তৈরিতে সহায়তা করে, এটি পরবর্তীতে তাকে আরও বেশি বেশি শব্দ শিখতে সাহায্য করে।
ভাষা বিভিন্ন ভাবে শেখা যায়, যেমন স্বাভাবিক কথাবার্তা, গান, ছড়া, পড়া, সংগীত, গল্পবলা এবং আরও অনেক কিছুর মাধ্যমে। প্রারম্ভিক উদ্দীপনাগুলোই নির্ধারণ করে দেয় যে শিশু কীভাবে শিখবে এবং সারা জীবনে কীভাবে অন্যদের সাথে পারস্পরিক ভাবের আদান-প্রদান করবে। শিশুর খারাপ বা ভাল যেকোনো অভিজ্ঞতা মস্তিস্কের গঠনে এবং স্নায়ু কোষগুলোর মধ্যে সংযোগ ঘটাতে সাহায্য করে। বড়রা যখন শিমুদের সাথে স্নেহ ময় আচরন করে তখন তা শিশুর মস্তিস্কে উদ্দীপ্ত করে যা স্নায়ুকোষ গুলোর মধ্রে সংযোগ বৃদ্ধি করে এবং বিদ্যমান সংযোগগুলোকে আরও দৃঢ় করে। যে সংযোগগুলো ব্যবহৃত হয় তা স্থায়ী হয়ে যায়। একটি শিমু যদি শুরুতেই খুব অল্প পরিমানে উদ্দীপনা পায় তবে তার স্নায়ু কোষের সংযোগগুলো বিকশিত হয় না এবং তার মস্তিস্কে খুব কম সংযোগ তৈরি হয়। মানসিক চাপ বিষের মত কাজ করতে পারেযখন একটি শিশু বড়দের কোনরুপ সহায়তা ছাড়া বারবার এবং দীর্ঘ সময় ধরে কোন অভিজ্ঞতা যেমন, দুর্ব্যবহার, অবহেলা অথবা দারিদ্রের মধ্য দিয়ে যায়। যখন বড়রা শিশুদের অভিজ্ঞতাগুরোর সময় পাশে থেকে সহায়তা করে এবং শিমুর মানসিক চাপের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে তখন তা সহনীয় চাপ হতে পারে। সহনীয় চাপের উদাহরণ হিসেবে বলা যায় প্রিয় কাউকে হারানো, অসুস্থতা অথবা আঘাত অথবা দারিদ্র যখন বড়রা শিশুদের মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। কিছু কিছু মানসিক চাপ রয়েছে যা ইতিবাচক মানসিক চাপ যেমন, অল্প পরিমানের ভয় বাদুঃখ অথবা প্রাত্যাহিক চ্যালেঞ্জসমূহ। ইতিবাচক মানসিক চাপের অভিজ্ঞতায় প্রক্রিয়াটি খুবই শান্ত পরিস্থিতিতে অপেক্ষাকৃত অল্প সময়ের জন্য ফিরে আসে।
শিশুরা যখন শারীরিক কিংবা আবেগিক চাপ বা আঘাতের সম্মুক্ষীণ হয় তখন মস্তিস্ক হাইপোথ্যালামাস থেকে এড্রিনাল করটেক্স ( কিডনির উপরে অবস্থিত একটি গ্রন্থি) এ সংকেত পাঠায়, ফলে হরমোন করটিসোল নিঃসৃত হয়। অতিমাত্রায় কর্টিসোল মস্তিস্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ গঠনের ক্ষতিসাধণ করে। অন্য কথায় বলা যায়, শিশুরা যদি বড়দের সহায়তা ছাড়া দীর্ঘদিন এবং বারবার মানসিক চাপের মধ্যে থাকে তাহলে তাদের মস্তিস্কের গঠণ মারাত্বক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যতœকারীর সাথে দৃঢ় ও ইতিবাচক আবেগিক বন্ধনপূর্ণ শিশুর মস্তিস্কে কম মাত্রার করটিসোল লক্ষ্য করা যায়।
সে ক্ষেত্রে তাই বলা যায়, আট মাস বয়স থেকেই শিশুর সামনে অন্যায় কিংবা কারাপ ভাষা প্রয়োগ বা ব্যবহার করা যাবে না। কারণ একটাই শিশুটি যা দেখবে বা যা মুনবে সেটাই সে হুবহহু করবার চেষ্টা করবে। এবং খুব সহযেই সে সেটা রপ্ত করতে পারবে। মা-বাবাসহ সকলের উচিৎ শিশুদের সামনে নরম ও সোজা ভাষায় কথা বলতে হবে। আগামীর পথ প্রদর্শক হচ্ছে আমাদের শিশুরা বড় কথা এটাই মনে রাখতে হবে।
ডি এম কপোত নবী
শুক্রবার, ১০-৮-১৮