ফরম পূরণের টাকা জমা নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শাহ নেয়ামতুল্লাহ কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং সুধীজনদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগ উঠেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং বাইরের একটি স্বার্থান্বেষী মহলের বিরুদ্ধে। তারা পরস্পর যোগসাজশে পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করিয়ে কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবক তথা সুধীজনদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। সচেতন মহল মনে করছেন, দ্রুতই এসব অপচেষ্টার লাগাম টেনে ধরতে না পারলে কলেজটি মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাহ নেয়ামতুল্লাহ কলেজের ৩১৭ জন শিক্ষার্থী ডিগ্রি ফরম পূরণের টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা প্রসঙ্গে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তিকর একটি সংবাদ প্রকাশ হয় স্থানীয় একটি দৈনিকে। ‘সভাপতির ক্ষমতার রোসানলে কর্তৃপক্ষ : শাহ্ নেয়ামতুল্লাহ কলেজের ৩১৭ জন ডিগ্রী শিক্ষার্থীর ফরমপূরণে অনিশ্চয়তা’ শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশ হয় গত ৩১ মে। এর আগে ৩০ মে ঐ দৈনিকের অনলাইনে একই শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশ হয়েছিল।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, সংবাদটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি এবং তাদেরকে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলার কথা বলে উত্তেজনা ছড়িয়ে শহরে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার জন্যই এমন বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে নিউজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০২০ সালের ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্স ৩য় বর্ষ পরীক্ষার ফরম পূরণের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় গত ৪ এপ্রিল; যার স্মারক নং ০৫(৫২৬) জাতীঃ বিঃ / পরীঃ / ডিগ্রী পাস / ২০২০ / ৪৫৪৫। ওই বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থী কর্তৃক অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণের তারিখ ছিল ৭ এপ্রিল থেকে ১৭ মে পর্যন্ত এবং কলেজ কর্তৃক সোনালী সেবার মাধ্যমে টাকা জমা দেয়ার তারিখ ছিল ২৯-৩১ মে। পরবর্তীতে গত ২৬ মে সময় বৃদ্ধি করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়; যার স্মারক নং ০৫(৫২৬) জাতীঃ বিঃ / পরীঃ / ডিগ্রী পাস / ২০২০ / ৪৫৭৭। এই বিজ্ঞপ্তিতে কলেজ কর্তৃক সোনালী সেবার মাধ্যমে টাকা জমা দেয়ার শেষ তারিখ হলো ২৩ জুন। দুটি বিজ্ঞপ্তিই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
এদিকে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় গভর্নিং বডির পাশাপাশি অভিভাবক, সচেতন মহল ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, সময় বৃদ্ধির বিজ্ঞপ্তি কি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাকিকুল ইসলাম জানতেন না, নাকি জানার পরও সভাপতি ও গভর্নিং বডিকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য সচেতনভাবেই মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। আর সময় বৃদ্ধির খবর তো কলেজ কর্তৃপক্ষকেই রাখতে হবে। তারা আরো বলছেন, সংবাদ প্রকাশ হয়েছে ৩০ ও ৩১ মে; আর নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে তারও আগে, ২৬ মে। এভাবে একপেশে রিপোর্ট প্রকাশ করে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সুধীজনদের বিভ্রান্ত না করাই ভালো। তাছাড়া কলেজ কর্তৃপক্ষ যা শুরু করেছেন, তাতে আগামীতে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করবেন কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাকিকুল ইসলাম দাবি করেছেন, নিয়ম মেনেই ৩১ মে টাকা জমা দিতে হয়েছে।
এ বিষয়ে গভর্নিং বডির অভিভাবক সদস্য গোলাম কিবরিয়া কোয়েল বলেন, ‘শুধুমাত্র শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি এবং তাদের অনিশ্চয়তায় ফেলে নিজেদের ফায়দা লোটার জন্যই এই ধরনের মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট করিয়েছে কলেজের একটি স্বার্থান্বেষী মহল, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা যেখানে ২৩ জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২৬ মে সার্কুলার জারি করেছে, সেখানে ফরম পূরণে অনিশ্চয়তা নিয়ে কিভাবে ৩১ তারিখ সংবাদ প্রকাশ হয়?’ তিনি বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিকরা কলেজ নিয়ে অনুসন্ধান করলে আরো অনেক সত্য জানতে পারবেন।’
এদিকে সংবাদটি করা ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়িত প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বাচ্চু। তিনি বলেন, “এটি একটি ভুল রিপোর্ট। ভেতরে একটি প্রতিপাদ্য ছাড়া অন্য কিছু নেই। অন্য বিষয় নিয়েও রিপোর্ট করতে পারত। তিনি বলেন, এ ধরনের রিপোর্ট শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও চরম উদ্বিগ্ন করে তোলে। দেখা গেল, একজন অভিভাবক ভাবল ছেলেটাকে ভর্তি করলাম কিন্তু পরীক্ষা দিতে পারবে না এই ধরনের উৎকণ্ঠা তৈরি করা মোটেই ঠিক নয়।”
কথা হয় গভর্নিং বডির সদস্য প্রফেসর সুলতানা রাজিয়ার সঙ্গে। তিনি বিরক্তির স্বরেই বলেন, “এটা নোংরামি ছাড়া কিছুই নয়। এই নিয়ে আর কোনো কথা বলার নেই।”
এদিকে সময় বৃদ্ধির পরও কিভাবে ফরম পূরণে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে এ প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাকিকুল ইসলাম বলেন, “সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে সেকেন্ড ফেজের ফরম ফিলাপের জন্য। প্রথম ফেজের টাকা পরিশোধের সময় বৃদ্ধি করা হয়নি। দ্বিতীয় ফেজে যারা ভর্তি হবে তাদের জন্য ২৩ জুন পর্যন্ত টাকা জমা দেয়ার সময় বাড়ানো হয়েছে। আর আমাদের ৩১৭ জনের টাকা জমা দেয়ার লাস্ট তারিখ ছিল ৩১ মে। তাই অনার্স কমিটির টাকা থেকে ওই শিক্ষার্থীদের টাকা জমা দেয়া হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে পরামর্শ করে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।” তিনি আরো বলেন, “ভিপিকে, শাহীন স্যারকে জিজ্ঞেস করেন, আমরা কত ছটফট করেছি। আমরা ওই নোটিশের (২৬ মে) বলে টাকা জমা না দেয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু পরে জানলাম সেটা পরিশোধ করতে হবে। এটা নিয়ে আশপাশের কলেজগুলোর সাথেও পরামর্শ করা হয়েছে,” বলে জানান তিনি।
তবে সোনালী সেবার মাধ্যমে কলেজ কর্তৃক টাকা জমা দেয়ার বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে অফিস নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখনো জমা দিতে পারবে। আবার চাইলে এর মধ্যে যদি ফরম পূরণ হয় তাহলে ওটার একটা পে-স্লিপ নিয়ে ওই দিন (২৩ জুন) একসঙ্গে জমা দিতে পারবে। দুটোই পারবে। এখন জমা দিতে না পারলে সমস্যা নেই বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে গভর্নিং বডির সভাপতি সাইদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘যেখানে টাকা জমা দেয়ার সময় বৃদ্ধি করে ২৬ মে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, সেখানে ৩১ মে কিভাবে সংবাদ প্রকাশ হয় ফরম পূরণের অনিশ্চয়তা নিয়ে। এ থেকেই বোঝার কথা যে, আমাকে সবসময় হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একটি পক্ষ। সফল হতে না পেরে একের পর এক মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করিয়ে যাচ্ছে তারা। তাদের উদ্দেশ্য একটাই নিজেদের স্বার্থ হাসিল করা। বর্তমান গভর্নিং বডি থাকাকালীন যা কোনো দিনই হতে দেয়া হবে না।’
এসবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিবেন কিনা এ প্রশ্নের জবাবে সাইদুর রহমান বলেন, বর্তমানে ব্যক্তিগত কাজে আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। এখানে তো এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কোনো সুযোগ নেই। ফিরে এসে গভর্নিং বডির সদস্যদের সঙ্গে বসে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
[চলবে]