শুক্রবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩ কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

Last Updated on অক্টোবর ৩, ২০২৪ by

শরৎ : শিক্ষার্থীদের খুবই প্রিয় ঋতু
প্রদীপ্তি হোসেন

ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। যদিও এখন ভালোভাবে সব ঋতু অনুভূত হয় না। বাংলার ভাদ্র ও আশ্বিন মাস মিলে হয় শরৎকাল। গ্রীষ্ম ও শীতের মধ্যবর্তী ঋতু এই শরৎ। এই ঋতুর প্রধান বৈশিষ্ট্য পত্রঝরা গাছের পাতা ঝরা।
উত্তর গোলার্ধে সেপ্টম্বর মাসে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে মার্চ মাসে শরৎ আসে, কারণ এটি পৃথিবীর প্রধান চারটি ঋতুর একটি। এসময় রাত খুব তাড়াতাড়ি আসে এবং আবহাওয়া ঠাণ্ডা থাকে। সকালবেলা এক অভূতপূর্ব অনুভূতি সৃষ্টি করে এই ঋতু। সকালের সূর্যের আলোকরশ্মি ছড়িয়ে দেয় মাঠ ও বিলের অসংখ্য ধানের জমিতে। ঘাসের উপরের শিশিরের কণা পরিণত হয় হীরের টুকরোয়। এসময় সর্বত্র নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া বিরাজ করে।
আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের খুবই প্রিয় এই ঋতু। অসহ্য ভ্যাপসা গরম থাকে না, শান্তিতে ক্লাস করা যায়। সকালের ঠাণ্ডা প্রকৃতির কারণে বিছানা ছাড়তেও ইচ্ছা করে না। এই সময় ওঠে আমন ধান। তালগাছে মিষ্টি পাকা তাল। বাড়ি বাড়ি তৈরি হয় কত বাহারি পিঠা- পায়েস।
শরৎকালে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। নদীর কিনারে বালির চরে হেসে ওঠে কাশবন। শুধু কাশবনই নয় শরতে ফুলে ফুলে সেজে ওঠে গোটা প্রকৃতি। এ প্রকৃতিতে শাপলা, শালুক, পদ্ম, জুঁই, জবা, শিউলি, কামিনী, মালতি, মল্লিকা, মাধবী, ছাতিম ফুল, বরই ফুল, বেলি, জারুল, নয়নতারা, ধুতরা, বোগেনভেলিয়াসহ নানারকম ফুল ফোটে এই ঋতুতে।
কৃষকের মনেও আনন্দ এনে দেয় শরৎকাল। বর্ষার পানি চলে গেলে কৃষক আবার জমি চাষ করতে পারেন। হেমন্তি ধানের বীজ বোনে। বুকে জন্ম নেয় নতুন আশা। সবুজ ফসলের আনন্দে কৃষকের বুক ভরে ওঠে। বর্ষার পানিতে নদী পূর্ণ থাকে শরতেও। শরতে নির্মল পানিরাশি সাগরের সঙ্গে মিলনের উদ্দেশে বয়ে যায়। নদীর বুকে মাঝি ভাটিয়ালি গান গেয়ে পালতোলা নৌকা ছাড়ে মনের আনন্দে। দু’কূল সবুজ বন যেন সবুজের স্বর্গ। ঝকঝকে নীল আকাশের বুকে সাদা মেঘের ভেলা। নানাবিধ ফুলের শোভা আর শস্যের শ্যামলতা, তাল দিয়ে তৈরি করা পিঠা, পায়েস! আর ক্ষেতে ক্ষেতে হেমন্তি ধানের বেড়ে ওঠা।
শরৎ ঋতুর সৌন্দর্য বাংলার ঋতুকে করে তোলে রূপময় ও মোহনীয়। শরতের সকালে বয়ে চলে ঝিরিঝিরি হাওয়া। ছোট ছোট পাখিদের বেপরোয়া দাপাদাপি ও মিষ্টি কলতান! ফুটন্ত শিউলির মন জুড়ানো ঘ্রাণ। শিউলিতলায় হালকা শিশিরে ভেজা দুর্বাঘাসের ওপর চাদরের মতো বিছানো শিউলিফুল। সকালবেলা খুব ভোরে কিশোর-কিশোরীরা ছুটে যায় ফুল তুলতে। ফুল কুড়িয়ে মালা বানিয়ে গলায় পরে।
তবে বর্তমান কালে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে এখন আর আগের মতো সকল ঋতুই অনুভূত হয় না। শুধুমাত্র গ্রীষ্ম ও শীতকালই ভালোভাবে অনুভূত হয়। আমাদের বাংলাদেশের প্রকৃতি আগে ছিল নাতিশীতোষ্ণ, যা এখন আর নেই। আমাদের উচিত প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতি যতœশীল হওয়া। বেশি বেশি গাছ লাগিয়ে পরিবেশকে নির্মল রাখা, নয়তো বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে আমাদের এই পৃথিবী একসময় বিলীন হয়ে যাবে।
সম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রেমালের কথা বলতে পারি, যার কারণে এদেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাই সর্বোপরি আমাদের পরিবেশকে সুন্দর করে তুলতে আমাদের এর প্রতি সংবেদনশীল আচরণ করতে হবে।

প্রদীপ্তি হোসেন : ৭ম শ্রেণী, রোল ৪, নবাবগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়

About The Author

শেয়ার করুন