আল-মামুন বিশ্বাস, গোমস্তাপুর, ঈদুল আজহা মানেই কোরবানির পশু জবাই। এই পশু জবাইয়ের জন্য চায় ধারালো অস্ত্র। আর তাই তো ঈদকে সামনে রেখে কামারের দোকানগুলোয় ব্যস্ততা বেড়েছে কর্মকারদের। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাতুড়ির টুং ট্যাং শব্দে কামার পল্লীগুলো মুখরিত থাকছে। নতুন ও পুরাতন চাকু, ছুরি, দা, চাপাতি, বটি, হাঁসুয়া ইত্যাদি তৈরি ও শান দিচ্ছেন তারা। ঈদের আগের দিন হওয়ায় কামারদের ব্যস্ততা থাকবে আজও।
এদিকে শেষ মুহূর্তে এলাকার লোকজন প্রয়োজনীয় ওইসব জিনিসপত্র ধার দিতে ভিড় জমাচ্ছেন। কেউ আবার অনেক আগে থেকেই প্রয়োজনীয় এসব প্রস্তুত রেখেছেন। প্রতিটি কামারশালায় কাজের ব্যস্ততা লক্ষ্য করা গেছে।
রহনপুর পৌর এলাকার কয়েকটি কামারশালা ঘুরে দেখা গেছে, কর্মকাররা কেউ নিজে বা অন্যজনকে দিয়ে হাপর টানাসহ হাওয়ার ফুলকিতে কয়লা দিচ্ছে, কেউ লোহা গরম করে পিটাচ্ছে কেউ বা পানি দিচ্ছে। কাজের চাপে কারোই সঙ্গে কথা বলার সময়টুকু পাচ্ছেন না তারা। কোরবানির কাজে ব্যবহ্নত অস্ত্রগুলো কামাররা প্রকারভেদে ধার দিচ্ছেন ৩০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে উপজেলার সদর রহনপুরসহ বিভিন্ন বাজারে কোরবানির পশু জবাই করা ছুরি, চামড়া ছড়ানো ও গোস্ত কাটা চাকু, বটি, হাঁসুয়া, চাপাতিসহ গোস্ত কাটার কাঠ বিক্রি করতে দেখা গেছে। তারা দোকানের সামনে সাজিয়ে বিক্রি করছে। কামারের তৈরি ছোট ছুরি ৩০ টাকা থেকে ৭০ টাকা, আকারভেদে মাঝারি থেকে বড় ৬০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বটি ৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা, হাঁসুয়া ৯০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা, চাপাতি ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
দেশীয় তৈরি বাড়িতে থাকা হাঁসুয়া, বটি, দা, চাকু, ছুরি, চাপাতি কামারের দোকানে পুড়িয়ে ধার দিতে বেশি দেখা গেছে।
রহনপুর কলোনি মোড় সংলগ্ন ব্রিজের পাশে থাকা কামারশালার অশোক কর্মকার বলেন, বাপ-দাদার কাছ থেকে এ কাজ শিখেছি। তাই অন্য কাজ করতে যায় না। সারাবছর টুকটাক করে কাজ করি। কোনোমতে সংসার চলে। মেলার সময় একটু কাজের চাপ বাড়ে। তবে কোরবানির ঈদ এলে অতিরিক্ত হারে কাজের চাহিদা বেড়ে যায়। সকাল থেকে একটানা রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়। ভালো একটা উপার্জনও হয়।
খোয়াড় মোড়ের বিফল কর্মকার জানান, তার বাড়ি দোকান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে আলিনগর এলাকায়। প্রতিদিন সকালে সাইকেল করে বাপ-বেটা দোকান আসেন। রাত পর্যন্ত কাজ করে বাড়ি ফিরেন। তিনি জানান, তারসহ রহনপুর পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে ৮টি মতো দোকান আছে। কোরবানির ঈদ আসায় অতিরিক্ত কাজের চাপ বেড়েছে। বাপ-বেটা মিলে সমানতালে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় বাড়িতে থাকা ভাঙ্গা ও মরিচাধরা, হাঁসুয়া, বটি, ছুরি, চাকু, চাপাতি বেশি কাজ হচ্ছে। এ কয়দিন নতুন জিনিস তৈরি করতে পারছেন না। প্রতিদিন ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা তিনি আয় করছেন বলে জানান।
ধার দিতে আসা রফিক জানান, ৪টি কোরবানির গোস্ত কাটার যন্ত্র ধার দিতে এসে ৩০০ টাকা চাচ্ছে। তবে ২০০ টাকা দিয়ে নিয়ে এসেছি। আরো ৫০ টাকা দাবি করছে।
বাবু নামে আরেকজন দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বলেন, বাজার থেকে রেডিমেড ছুড়ি কিনে এনেছি। একবার কাটলে আর কাটে না। এখানে (কামারের) কাছে এসেছি ভালো রড দিয়ে বানিয়ে নিব।
খোয়াড় মোড়ে ধার দিতে আসা সায়েম বলেন, প্রতিবছর কোরবানির ঈদে কামারের কাছে এসে ঠিক করে নেন প্রয়োজনীয় চাকু-ছোরা। তবে জিনিস প্রতি ৫০ টাকা করে নিবে। মজুরি বেশি নিচ্ছে বলে তিনি জানান।
উপজেলার অন্যান্য কামারের দোকানগুলোর একই অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে। তবে অনেকে এ পেশায় সন্তুষ্ট নন বলে তারা জানান। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, কাজের শ্রম হিসেবে মজুরি কম। তারপরও ঈদের সময় তাদের মধ্যে উদ্যামের ছাপ দেখা গেছে।
এদিকে ঈদুল আজহা সামনে রেখে গোমস্তাপুর উপজেলায় ৫৫ হাজার ৩৮২টি কোরবানির প্রাণী প্রস্তুত রেখেছে ব্যবসায়ী ও খামারিরা বলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে ষাঁড় ৭ হাজার ৬৬৯টি, বলদ ৬ হাজার ২০৪টি, বকনা ৬ হাজার ৪২৩টি, মহিষ ৯০টি, ছাগল ২৬ হাজার ৭৬৯টি ও ভেড়া ৮ হাজার ২২৭টি রয়েছে।