লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশী হত্যা ও মানব পাচারের ঘটনায় আরো ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। রবিবার ডিবি পুলিশের একাধিক টিম রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, বাদশা মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া, আকবর আলী, সুজন, নাজমুল হাসান ও লিয়াকত শেখ ওরফে লিপু। এ সময় তাদের হেফাজত হতে চারটি পাসপোর্ট, দুটি মোবাইল ফোন ও টাকার হিসাব-সংবলিত দুটি নোটবুক উদ্ধার করা হয়।
সোমবার (৮ জুন) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আবদুল বাতেন জানান, লিবিয়ার বিভিন্ন এস্টেটে কাজ ও লিবিয়া হতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশী দালালরা অন অ্যারাইভাল ও ভিজিট ভিসার মাধ্যমে লোকজনকে লিবিয়ায় পাচার করে। লিবিয়ায় পাচার করে ভিকটিমদের লিবিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে আটক রেখে অমানুষিক শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা হয়। নির্যাতিত ভিকটিমদের কান্নাকাটি, আকুতি মিনতি করা অডিও অথবা সরাসরি মোবাইলে কথাবার্তা বাংলাদেশে অবস্থানরত তাদের পিতা-মাতা আত্মীয়স্বজনদেরকে পাঠিয়ে টাকা নেয়া হতো। ভিকটিমদের বাঁচাতে তার আত্মীয়স্বজনরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভিটাবাড়ি বিক্রি করে টাকা পাঠাত।
তিনি আরো জানান, নিহত মাদারীপুরের ৭ জনকে বাংলাদেশ হতে লিবিয়াতে আমির হোসেনের কাছে পাচার করেছিল তার ভাই গ্রেপ্তারকৃত আকবর হোসেন।
গ্রেপ্তারকৃত বাদশা মিয়া ১৩ বছর যাবৎ লিবিয়াতে অবস্থান করে। লিবিয়ার বেনগাজী, জোয়ারা শহরে তার নিজস্ব ক্যাম্প আছে। সমগ্র বাংলাদেশ থেকে সে নিয়মিত লিবিয়াতে মানব পাচার করে, পাচারকৃত বাংলাদেশীদেরকে তার ক্যাম্পে আটক রেখে নির্যাতন চালায়। পরে অতিরিক্ত টাকা পেলে তাদেরকে সমুদ্রপথে ইতালিতে পাঠানো হতো। মাদারীপুরের নিহতদের মধ্যে ৪ জনকে তার ক্যাম্পে আটক রেখে ত্রিপোলিতে পাচার করার একপর্যায়ে এ হত্যাকাÐ ঘটে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আবদুল বাতেন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত জাহাঙ্গীর আলম ঢাকাতে অবস্থান করে নিজস্ব কায়দায় বেনগাজিতে মানব পাচার ছাড়াও স্থানীয় অন্য দালালদের কাছ থেকে প্রাপ্ত পাসপোর্টগুলো স্ক্যান করে সফট কপি দুবাই এবং লিবিয়াতে প্রেরণ করে ট্যুরিস্ট ভিসা ও অন অ্যারাইভাল মোয়াফাকা সংগ্রহ করে।
গ্রেপ্তারকৃত সুজন ভিকটিম ইছার উদ্দিন, বিজয় ও মো. সজলদেরকে লিবিয়ায় পাঠায়। ২৮ মে লিবিয়ায় ট্র্যাজেডিতে ভিকটিম মো. সজল আহত হয়ে লিবিয়ায় এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। নিখোঁজ মো. বিজয় ও ইছার উদ্দিনের কোনো সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি।
গ্রেপ্তারকৃতদেরকে পল্টন ও তেজগাঁও থানায় মানব পাচার ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২৮ মে লিবিয়ার মিসদাহ উপশহরের মরুভূমিতে ২৬ জন বাংলাদেদেশী গুলি করে হত্যা করা হয়। এছাড়া এ ঘটনায় আরো ১১ জন গুরুতর আহত হয়। লিবিয়া এবং ইতালিতে অভিবাসী হতে যাওয়া শত শত বাংলাদেশী বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনে আহত, নিহত ও চিরতরে নিখোঁজ হয়েছেন। এসব ঘটনায় ভিকটিমদের আত্মীয়স্বজনদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ জেলা এবং ডিএমপি’র পল্টন ও তেজগাঁও থানায় পৃথক মামলা করা হয়।