লিফট চর জমিবন্ধক কর্মসূচি বদলে দিচ্ছে চরবাসীর জীবনযাত্রার মান

86
ডা. শাহরিয়ার কামাল

চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রয়াস মানিবক উন্নয়ন সোসাইটির লিফট প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত লিফট চর জমিবন্ধক কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে বদলে যাচ্ছে চরবাসীর জীবনযাত্রার মান। এই কর্মসূচির আওতায় আয়বৃদ্ধিমূলক প্রদর্শনী, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, স্যাটেলাইট ক্লিনিক, ফলদ ও বনজ বৃক্ষ রোপণ ইত্যাদির মাধ্যমে চরবাসীর জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
এছাড়া বর্তমানে প্রয়াস মানিবক উন্নয়ন সোসাইটির অফিস পর্যায়ে ১৫০টি বলসুন্দরী বরই গাছ, ২৪টি পেয়ারা, ১২টি মালটা, ৫টি চায়না কমলা, ৩০টি সিডলেস লেবু, ১৫টি আম, ৫০টি কলা, আঙ্গুর ৩টি, পেঁপে ২৫টি, আমড়া ২টি, আনার ১টি, করমচা ১টি, ড্রাগন ২০টি, ২টি কাঁঠাল গাছ রয়েছে।
অন্যদিকে বনজ বৃক্ষের মধ্যে ৫০টি নিম, ২টি বাঁশঝাড় রয়েছে। এছাড়া শোভাবর্ধনকারী গাছ হিসেবে রয়েছে ১৫টি পাতাবাহার, ৫টি রঙ্গন। আয়বর্ধক হিসেবে ১০টি টার্কি মুরগির খামার রয়েছে।

সদস্য পর্যায়ে প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা
মাঠপর্যায়ে সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত সব প্রদর্শনী সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ফসল চাষ ব্যবস্থাপনায় ৪০ জন, বসতবাড়িতে সবজি চাষে ২০ জন, গাভী পালন ও গরু মোটাতাজাকরণ বিষয়ে ২০ জন, ছাগল ও ভেড়া পালন বিষয়ে ২০ জন, ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন বিষয়ে ২০ জনসহ মোট ১২০ জনকে কারিগরি ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
সদস্য পর্যায়ে বিভিন্ন কৃষিজ উপকরণ, যেমন- শাকসবজির বীজ, কৃমিনাশক বোলাস, টিকা প্রদান (প্রাণী) সঠিকভাবে বিতরণ করা হয়েছে।
৩৬টি স্যাটেলাইট ক্লিনিকের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ৩১টি স্যাটেলাইট ক্লিনিকের আয়োজনে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয় এবং বাকি ৫টি স্যাটেলাইট ক্লিনিক বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।
প্রকল্প সম্ভাবনা অফিস পর্যায়ে বলসুন্দরী বরই চারা ১৫০টি রোপণ করা হয়েছে। যা হতে আগামী মৌসুমে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং পরবর্তী বছরে তা দ্বিগুণে পৌঁছাবে। এছাড়া ৫০টি কলাগাছ রোপণ করা হয়েছে, যা হতে আগামী বছর প্রায় ১০ হাজার টাকা আয় করা যাবে।
অফিসের চারদিকে পঞ্চাশটি নিমগাছ রোপণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে আগামী ১০ বছর পর প্রতিটি গাছের মূল্য দাঁড়াবে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন জাতের ফলের চারা যেমন- মালটা, পেয়ারা, সিডলেস লেবু, চায়না কমলা, আম, আমড়া, কাঁঠাল ইত্যাদি রোপণ করা হয়েছে। গাছের চারাগুলো সব সতেজ আছে। আগামী মৌসুমে প্রায় সব গাছ থেকে ফল পাওয়া যাবে। যা অর্থনৈতিক দিক হতে বেশ লাভজনক এবং পরবর্তীতে নার্সারি তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

মাঠপর্যায়ে প্রকল্পের সম্ভাবনা
প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় কৃষি ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। যুগোপোযোগী উন্নত প্রযুক্তিগত প্রদর্শনী বাস্তবায়নের ফলে প্রতিফলন হিসেবে স্থানীয় জনগণের মধ্যে গড়ে উঠছে নতুন উদ্যোক্তা।
স্থানীয় সদস্যদের দেখে এলাকার মানুষও জমি লিজ নিয়ে তৈরি করছে বরই ও কলার বাগান। অপর দিকে উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে বলসুন্দরী-বরই এলাকায় প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে চাষ করা হচ্ছে। এছাড়া সদস্যরা আইজিএভিত্তিক লোন নিয়ে বরই বাগান তৈরিতে উদ্যোগী হচ্ছে। এলাকায় প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে প্রয়াসের কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতায় কলার চাষ হচ্ছে, যা পরবর্তী বছরে দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পাবে।
প্রয়াসের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে তরমুজের চাষ শুরু হয়েছে। যা চরাঞ্চলের মাটিতে বেশ লাভজনক ও সম্ভাবনাময় একটি ফসল।
প্রকল্পের কারিগরি সহায়তায় প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে, সদস্য ও এলাকার জনসাধারণ সনাতন পদ্ধতি বাদ দিয়ে আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করে গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগি ও কবুতর পালনে সক্রিয় হয়েছেন এবং পালনকারীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যোগাযোগ ও বাজার ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় গাছের চারা দুষ্প্রাপ্যতার ফলে, কৃষি ক্ষেত্রের প্রতিবন্ধকতা এড়াতে অফিস পর্যায়ে নার্সারি স্থাপন বেশ সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে।
স্যাটেলাইট ক্লিনিক আয়োজনের ফলে দুর্গম চর এলাকার মানুষের বিরাট উপকার হয়েছে। চিকিৎসা সেবার বিষয়টি বিবেচনায় এনে মিনি ক্লিনিক স্থাপনের মাধ্যমে সেবার মান ও গতি আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে স্থানীয়রা মনে করেন।

ডা. শাহরিয়ার কামাল : ফোকাল পারসন, লিফট কর্মসূচি, প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি