প্রায় ত্রিশলাখ জন অধ্যুষিত নওগাঁ জেলাবাসীর মধ্যে রেল সুবিধা ভোগকারী সংখ্যা তিন হাজারেরও কম। নওগাঁ জেলাবাসীর জন্য এখনো ঢাকার সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী কোন আন্তনগর ট্রেনের ব্যবস্থা নেই। তাই ঢাকার সাথে রেলপথে আন্তনগর ট্রেনে যোগাযোগ করতে নওগাঁ বাসীকে জয়পুরহাট, বগুড়া ও রাজশাহী জেলার উপর নির্ভর করতে হয়। বৃটিশ ও পাকিস্থান শাসনামলে শোষন আর শাসন কাজ পরিচালনার জন্য উত্তরের পঞ্চগড়, চিলাহাটি ও বুড়িমারি থেকে দক্ষিনের গোয়ালন্দঘাট, দর্শনা, বেনাপোল ও খুলনার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে গিয়ে নির্মিত রেল পথের মধ্যে মাত্র ২৬ কি:মি: রেলপথ নওগাঁ জেলার মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ২৬ কি:মি: রেলপথের মধ্যে রাণীনগর, শাহাগোলা, আহসানগঞ্জ ও মাধনগর নামের ৪টি রেলষ্টেশন নওগাঁ জেলার মধ্যে স্থাপিত হয়। এ ৪টি ষ্টেশনের মধ্যে রাণীনগর উপজেলা সদরে রাণীনগর ষ্টেশন ও আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ ষ্টেশন দুটিতে মেইল ট্রেনের এবং আহসানগঞ্জ ষ্টেশনে রাজশাহী ও খুলনা গামী আন্তনগর ট্রেনের যাত্রা বিরতি থাকলেও রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী কোন আন্তনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি নাই। এ কারণে নওগাঁর অধিবাসীদের আন্তনগর ট্রেনে ঢাকার সাথে যোগাযোগ করতে বগুড়া জেলাধীন শান্তাহার ষ্টেশনে আসতে হয়। শান্তাহার ষ্টেশনের জন্য এ সকল ট্রেনের সংরক্ষিত আসন সংখ্যা প্রতি ট্রেনে মাত্র ২৫টি হওয়ায় নওগাঁর ১১ উপজেলার নওগাঁ জেলার অধিবাসীদের এ ষ্টেশনে ট্রেনের টিকিট পাওয়া একটি দুঃস্বাধ্য বিষয়। তবে জেলার ধামুরহাট ও বদলগাছি উপজেলার অধিবাসীরা কিছুটা নিকটবর্তী জয়পুরহাট ষ্টেশনের সাথেই যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। একই ভাবে নিয়ামতপুর ও পোরশা উপজেলাবাসীরা রাজশাহী ষ্টেশন এবং আত্রাই উপজেলাবাসীরা নাটোর রেলষ্টেশনকেই ব্যবহার করে থাকে। বাঁকী উপজেলা বাসী মূলত রেল সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ইতিহাস থেকে জানা যায় বৃটিশ সরকার এদেশে ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর দর্শনা-জাগতি পর্যন্ত ৫০.১১ কি:মি: রেলপথ নির্মান করে রেলের যাত্রা শুরু করে। পরবর্তী কালে দেশের পূর্বাঞ্চলে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে ১৮৮৫ সালের ১ জুলাই থেকে চট্টগ্রাম ও কুমিল¬ার মধ্যে ১৪৯.৮৯ কি:মি: এবং লাকসাম ও চাঁদপুরের মধ্যে ৫০.৮৯ কি:মি: রেলপথের যাত্রা শুরু করে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ১৯৬১ সালের ১ ফেব্রুয়ারী ইর্ষ্টান বেঙ্গল রেলওয়ে এবং আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কে একত্রিভূত করে পাকিস্থানের কেন্দ্রিয় সরকারের অধীনে পরিচালনা শুরু করা হয়। পরে ১৯৬২ সালে ৯ জুন রাষ্ট্রপতির এক আদেশ বলে রেলওয়ে বোর্ড স্থাপন করে পূর্বপাকিস্থান সরকারের উপর রেলের দায়িত্ব অর্পন করা হয়। এই যাত্রা থেকে শুরু করে ১৯৯৬-৯৭ অর্থ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ৪৫৯টি এবং পশ্চিমাঞ্চলে ২১৮ ষ্টেশন স্থাপন করে ২হাজার ৭৬৮ কি:মি: পর্যন্ত রেলপথ বিস্তৃত করে। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে রয়েছে ৯১৪ কি: মি: এবং পশ্চিমাঞ্চলে রয়েছে ১৮৫৪ কি:মি: রেলপথ যার অধিকাংশ ইতোমধ্যে ডবলগেজে রুপান্তরিত করার কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে।
রেলের এই দীর্ঘ ইতিহাসে আইয়ুব খানের শাসন আমল থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পূর্ববর্তী সরকারের শাসনামল পর্যন্ত প্রত্যেক সরকার প্রধান নওগাঁয় এসে প্রকাশ্য জনসভায় নওগাঁবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে শান্তাহার ও রহনপুরের মধ্যে একটি রেলপথ নির্মানের ঘোষনা দেন। ঘোষনা অনুসারে ইতোমধ্যে অনেক স্থানে জমিও অধিগ্রহন করা হযেছে। কিন্তু বার বার ঘোষনা দিরেও শান্তাহার-রহনপুর রেলপথ নির্মানের কাজ আজো বাস্তবায়ন হয় নি। এ কারণেই ১১ উপজেলার নওগাঁ জেলার প্রায় ৩০লাখ অধিবাসী আজও রেল সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। তাই নওগাঁ বাসীর দাবী শান্তাহার রেলষ্টেশনে আসন সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি আহসানগঞ্জ ষ্টেশনে ঢাকার সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী আন্তনগর ট্রেন সমূহের বিরতির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের পাশাপাশি ৫৫ বছরের দাবী অনুসারে সরকার শান্তাহার-রহনপুর রেলপথ নির্মানে আশু পদক্ষেপ গ্রহন করবে।