আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবদুর রাজ্জাককে দেখা যায় না অনেক দিন। তবে রেকর্ড বইয়ে তার উপস্থিতি প্রবল। সাদা বলে হোক বা লাল, বাংলাদেশের ক্রিকেট সমৃদ্ধ হয়েছে রাজ্জাকের দারুণ সব কীর্তিতে। ক্রিকেটের পথচলায় যিনি রাঙিয়ে চলেছেন এখনও, জীবনের ছুটে চলায় তার ৩৮ বছর পূর্ণ হলো সোমবার। জন্মদিনে ফিরে তাকানো যেতে পারে রাজ্জাকের গৌরবময় ক্যারিয়ারে, অর্জন আর প্রাপ্তির নানা ফুলে যে ক্যারিয়ার হয়ে উঠেছে নান্দনিক। স্বীকৃত ক্রিকেটে তার দেড় যুগ পূর্ণ হয়েছে গত জানুয়ারিতে। ত্রুটিপূর্ণ বোলিং অ্যাকশনের ধাক্কা সামলে নিজেকে গড়েছেন আবার, এগিয়ে গেছেন আরও অনেক প্রতিকূলতা সামলে। দীর্ঘ এই ১৮ বছরে ঘরোয়া আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বল হাতে যেমন দুর্দান্ত সব পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন, তেমনি ব্যাট হাতেও দেখিয়েছেন ঝলক।
রাজ্জাকের রেকর্ড-নামা
* বাঁহাতি স্পিনে ওয়ানডে ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিবার ম্যাচে ৫ উইকেট।
সনাৎ জয়াসুরিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে এই রেকর্ড রাজ্জাকের। দুজনই ৫ উইকেট নিয়েছেন ৪ বার করে।
* বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ২০০ উইকেট।
২০১৩ সালে পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫ উইকেট নেওয়ার ম্যাচে রাজ্জাক পা রাখেন এই মাইলফলকে। সাচিত্রা সেনানায়েকে তার দুইশতম শিকার।
* ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম ২০০ উইকেট শিকারি বোলার।
১৪১ ম্যাচে এই মাইফলক স্পর্শ করেছেন রাজ্জাক। সাকিব আল হাসানের লেগেছে ১৫৬ ম্যাচ, মাশরাফি বিন মুর্তজার ১৫৭ ম্যাচ।
স্পিনারদের মধ্যে বিশ্ব ক্রিকেটেই রাজ্জাকের চেয়ে কম ম্যাচে ২০০ ছুঁতে পেরেছেন কেবল ২ জন-সাকলায়েন মুশতাক ১০৪ ম্যাচে ও শেন ওয়ার্ন ১২৫ ম্যাচে। অন্য স্পিনারদের মধ্যে মুত্তিয়া মুরালিধরন ও অনিল কুম্বলে ছুঁয়েছেন ১৪৭ ম্যাচে, হরভজন সিং ১৭৮ ও ড্যানিয়েল ভেটোরি ১৯৮ ম্যাচে।
* বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে ১০০ উইকেট নেওয়া স্পিনার। উইকেটের সেঞ্চুরি করতে তার লেগেছিল ৬৯ ম্যাচ।
* হ্যাটট্রিকের স্বাদ পাওয়া ওয়ানডে ইতিহাসের দ্বিতীয় স্পিনার।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুরে হ্যাটট্রিক করেন রাজ্জাক। স্পিনে তার আগে হ্যাটট্রিক করতে পেরেছিলেন কেবল সাকলায়েন মুশতাক।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে হ্যাটট্রিক করা প্রথম স্পিনার ও দ্বিতীয় বোলার তিনি। প্রথম হ্যাটট্রিক করেছিলেন পেসার শাহাদাত হোসেন, ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারাতে।
* ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম ফিফটি!
২০১৩ সালে বুলাওয়ায়োতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বোলার রাজ্জাক ঝড় তোলেন ব্যাট হাতে। ২১ বলে স্পর্শ করেন পঞ্চাশ। ছুঁয়ে ফেলেন বাংলাদেশের রেকর্ড। ২০০৫ সালে ট্রেন্ট ব্রিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২১ বলে ফিফটি করেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল।
* ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশিবার ম্যাচে ৫ উইকেট নেওয়া স্পিনার।
৪ বার নিয়েছেন তিনি ৫ উইকেট। সাকিব আল হাসান নিয়েছেন ২ বার।
পেস-স্পিন মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি ৫ বার নিয়েছেন বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান।
* প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫০০ ও ৬০০ উইকেট শিকারি বাংলাদেশের একমাত্র বোলার।
১১৯ ম্যাচে ৫০০ উইকেট হয়েছিল রাজ্জাকের। তার ৫০০তম শিকার বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সাদমান ইসলাম, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বিকেএসপিতে বিসিএলের ম্যাচে দক্ষিণাঞ্চলের হয়ে মধ্যাঞ্চলের বিপক্ষে।
৬০০ উইকেট ১৩২ ম্যাচে। গত নভেম্বরে খুলনার হয়ে রংপুরের রবিউল হককে বোল্ড করে পূরণ
করেন এই মাইলফলক।
* প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার ইনিংসে ৫ উইকেট।
১৩৭ ম্যাচ খেলে ৪১ বার ৫ উইকেটের দেখা পেয়েছেন রাজ্জাক। রেকর্ডের দুইয়ে আরেক বাঁহাতি স্পিনার এনামুল হক জুনিয়র, ৩৪ বার ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি ১৩১ ম্যাচে।
* বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ম্যাচে ১০ উইকেট সবচেয়ে বেশিবার পাওয়া বোলারও তিনিই।
১১ বার নিয়েছেন ম্যাচে ১০ উইকেট। এখানেও দ্বিতীয় এনামুল জুনিয়র, ৬ বার।
* লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৪০০ উইকেট শিকারি বাংলাদেশের প্রথম বোলার।
২০১৯ সালের মার্চে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে উত্তরা স্পোর্টিং ক্লাবের আনিসুল ইসলাম ইমনকে বোল্ড করে পা রাখেন এই উচ্চতায়।
* লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বার ম্যাচে ৫ উইকেট।
২৮০ ম্যাচে ৯ বার ৫ উইকেটের স্বাদ পেয়েছেন তিনি। ১১৯ ম্যাচে ৭ বার ৫ উইকেট নিয়ে রেকর্ডের দুইয়ে পেসার মোহাম্মদ শরীফ।
* লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের স্পিনারদের মধ্যে এক ম্যাচে সেরা বোলিংয়ের কীর্তি তার।
২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে জিম্বাবুয়ে ‘এ’ দলের বিপক্ষে ১৭ রানে নিয়েছিলেন ৭ উইকেট।
স্পিন-পেস মিলিয়ে এক ম্যাচে রাজ্জাকের চেয়ে সেরা বোলিং আছে আর কেবল একজনের। ২০১৮ সালের মার্চে, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ফতুল্লায় আবাহনী লিমিটেডের বিপক্ষে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের হয়ে ৪০ রানে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন পেসার ইয়াসিন আরাফাত।
* স্বীকৃত ক্রিকেটে বাংলাদেশের সফলতম বোলার। প্রথম শ্রেণি, লিস্ট ‘এ’ ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে নিয়েছেন ১ হাজার ১৪৫ উইকেট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯৮৫ উইকেট সাকিবের।