দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছার আহ্বান জানিয়ে তাদেরকে ভোটের মাঠ না ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছেন নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
সোমবার নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ আহবান জানান। গতকাল রবিবার শপথ গ্রহণের পর আজ প্রথম সভা করে নতুন নির্বাচন কমিশন। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশিদা সুলতানা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব খান, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান অংশ নেন। ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. হুমায়ুুন কবীর খোন্দকার সভায় উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টির চেষ্টা করতে হবে। মুখ ফিরিয়ে রাখলে দূরত্ব আরো বাড়বে।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের শক্তি অসীম নয়। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আমরা সহায়তা করব। রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সহায়তা না করে, পলিটিক্যাল লিডারশিপে যদি ন্যুনতম সমঝোতা না থাকে, আমি তো তাদের মুরব্বি হতে পারব না। তারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞানী, অনেক বেশি অভিজ্ঞ। আমরা সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে গুড গভর্নেন্স এবং ভালো সংসদ গড়ে তোলার চেষ্টা করবো। এদিক থেকে আমাদের কোনও কার্পণ্য থাকবে না।’ বিএনপিকেও আমন্ত্রণ জানাবেন উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃত্বের যে দায়িত্বটা রয়েছে সেটা যদি শেয়ার না করেন, তাহলে নির্বাচন কমিশন এককভাবে যে কাজ করবে সেখানে সীমাবদ্ধতা দেখা দেবে। আমাদের দায়িত্ব আছে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে আবদার করা, আমরা অনুনয়-বিনয় করব, আপনারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টি করেন। একটা চুক্তিতে আসবেন যে, আপনারা নির্বাচনটা সুন্দরভাবে পরিচালনা করবেন, সহিংসতা করবেন না। কেউ কাউকে বাধা দেবেন না।’
তিনি বলেন, লেভেল প্লেইং ফিল্ড ইসি এককভাবে করতে পারে না। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নিজেদের মধ্যেও একটা সমঝোতা সৃষ্টির চেষ্টা করতে হবে। আমার অভিজ্ঞতা, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা কমে আসে। না হলে কিন্তু দূরত্ব বাড়তে থাকে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাউকে না কাউকে অহংকার ত্যাগ করে আলোচনা করতে হবে। নির্বাচন করতে গেলে আমাদের ভূমিকা কী হবে? আমরা কতটা সংযত থাকবো? পারস্পরিক ঐক্যে সহযোগিতামূলক আচরণ করবো? সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনকে অর্থবহ করার জন্য স্ব স্ব অবস্থান থেকে করণীয় না করলে, উনারা নিজেদের প্রশ্নবিদ্ধ করবেন নাকি আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করবেন? আমি সবিনয়ে বলবো, আমাদের ক্ষমা করবেন। আপনাদের কিছু যদি ব্যর্থতা থাকে তবে সেটাও স্বীকার করুন। সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রিস্টোর করুন। বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে, এ বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, বিএনপি যদি এমন ঘোষণা দিয়েও থাকে, আমরা কী তাদের চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানাবো না? কোনও কথাই শেষ কথা নয়।
সিইসি আরো বলেন, তারা আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্বাচন করে গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে চেষ্টা করবেন। সাংবিধানিক শপথে থেকে সততা-নিষ্ঠার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনায় তাঁরা সচেষ্ট থাকবেন।তিনি বলেন, নির্বাচন বিশাল কর্মযজ্ঞ। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন। যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রহ থাকে। সবার আবেগ বুঝতে হয়। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা রয়েছে। নির্বাচনের বটম লেভেলে দলগুলোর অনেক কর্মী থাকে, তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে সিইসি বলেন, মাঠ ছেড়ে চলে আসলে হবে না। মাঠে থাকবেন। কষ্ট হবে। বিএনপিকে আস্থায় আনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হয় না। সরকার কিন্তু নির্বাচন করে না। একটি সরকার তো থাকবেই। ওয়ান ইলেভেনে একটা সরকার ছিলো, আবার নির্দলীয় সরকারও ছিল। তাদের অধীনেও কমিশন থাকে। তারা নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়ে থাকে কমিশনকে। আমাদের ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, আমরা চেষ্টা করবো ভোটাররা যাতে ভোট দিতে পারে। তাদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করবো।’
সিইসি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করবো। আমাদের সামর্থ-শক্তি অসীম নয়। আন্তরিকভাবে চেষ্টায় ঘাটতি থাকবে না। আমি যতটুকু পারবো নিজের সামর্থ অনুযায়ী চেষ্টা করবো। নির্বাচনের সময় অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করবো। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো। ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে কি সিদ্ধান্ত হবে সেটি এখনই বলতে পারবো না। আলোচনা করবো, ইভিএমের ভালো-মন্দ আলোচনা করবো। পরে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। আমরা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আইনগুলোও পর্যাপ্ত কিনা সেটি দেখবো। নির্বাচন পরিচালনায় আমরা গুরুত্ব দেবো। আমরা সেনসেটাইজ করবো। পর্যবেক্ষণও করবো।’