আল-মামুন বিশ্বাস
চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর-ভারতের সিঙ্গাবাদ রেল রুট দিয়ে নেপালকে বাংলাদেশের ট্রানজিট দেয়ার সিদ্ধান্তের খবরে ত্রিদেশীয় বাণিজ্যের দ্বার খোলার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে নেপালের সঙ্গে থাকা ট্রানজিট চুক্তি সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। এই সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন হলে নেপাল এ রুট দিয়ে মালামাল আনা-নেয়া করতে পারবে। এরই মধ্যে নেপাল এ রুট দিয়ে আমদানিকৃত সার পরিবহন করেছে।
এর আগে বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত রহনপুর রেল স্টেশন পরিদর্শন করে এ রুট দিয়ে নেপালের সীমান্তবর্তী স্টেশন বীরগঞ্জ ও রক্সাল পর্যন্ত রেলপথে পণ্য পরিবহণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এছাড়া ভারতও এ রুট দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যা বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বর্তমানে এ রুট দিয়ে ভারতীয় পণ্য আমদানি হয়ে থাকে।
নেপালকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্তের কারণে পণ্যবাহী ট্রেনের পাশাপাশি ভারত ও নেপালে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী স্টেশন রহনপুর থেকে ভারতের সীমান্তবর্তী স্টেশন সিঙ্গাবাদের দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার। আর সিঙ্গাবাদ থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ জেলা মালদার দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। এছাড়া বাংলাদেশ-ভারতের জিরো পয়েন্ট শিবরামপুর থেকে ভারতের মধ্য দিয়ে নেপালের সীমান্তবর্তী স্টেশন বীরগঞ্জের দূরত্ব ২১৭ কিলোমিটার। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে রেলপথে নেপালের দূরত্ব কম হওয়ায় এ রুট দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে নেপালের আগ্রহ রয়েছে। এছাড়া ভারতের মালদার দূরত্ব কম হওয়ায় এবং সেখান থেকে সহজেই ভারতের বিভিন্ন স্থানসহ নেপালে যাওয়ার সুযোগ থাকায় এ রুটে পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হলে তিন দেশের জনসাধারণ উপকৃত হবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।
এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী নেতা আশরাফুল ইসলাম আশরাফ জানান, রহনপুর রেলবন্দরে রেলওয়ের পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও এটিকে পূর্ণাঙ্গ রেলবন্দরে পরিণত করতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কৃর্তপক্ষ। এ রেলবন্দর দিয়ে নেপালকে ট্রানজিট দেয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে রেলবন্দরের ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে ইয়ার্ড বৃদ্ধি, রহনপুর-সিঙ্গাবাদ রেলপথের বিভিন্ন পুরোনো সেতু সংস্কারসহ ডাবল লাইন নির্মাণ।
স্থানীয় আমদানিকারকরা জানান, ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য খালাস করে সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে নেয়ার জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট ব্যবস্থা, ওয়্যার হাউস নির্মাণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হলে এখানে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস স্টেশন নির্মাণ করতে হবে।
রহনপুর রেলবন্দরের স্টেশন ম্যানেজার (২) মামুনুর রশিদ জানান, গত অর্থবছরে রেলওয়ের এ রুট দিয়ে আমদানি করা পণ্য পরিবহন করে প্রায় ২৫ কোটি টাকা রাজস্ব এসেছে। তিনি বলেন, ইঞ্জিন ও ইয়ার্ড সংকটের কারণে প্রতিদিন দুটি করে র্যাক ভারত থেকে নেয়ার কথা থাকলেও তা বিঘিœত হচ্ছে।
এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান ও গোলাম মোস্তফা বিশ^াস জানান, রহনপুর রেলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ রেলবন্দরে পরিণত করতে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তারা কাজ করছেন। এছাড়া এ রুট দিয়ে নেপালকে ট্রানজিট দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে অচিরেই ভারত ও নেপালের সাথে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলেরও দাবি জানান তারা।
এদিকে এ রুট দিয়ে পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল হলে ত্রিদেশীয় রেল যোগাযোগের মাইলফলক তৈরি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।