রহনপুর আমবাজারে প্রতিদিন প্রায় তিন কোটি টাকার আম বেচাকেনা

13

আল-মামুন বিশ্বাস, গোমস্তাপুর

পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হয়েছে দেশের ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের দ্বিতীয় বৃহত্তম হাট রহনপুর আমবাজারে। বাজারে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। ক্রেতা-বিক্রেতা, আড়তদার, আমচাষি ও ব্যবসায়ী, অনলাইন ব্যবসায়ী, শ্রমিক, কুলিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে কর্মযজ্ঞ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে আমবাজারে চলে বেচাকেনা। প্রতিদিন এই বাজার থেকে ৩ কোটি টাকার উপরে ব্যবসা হয় বলে জানান ব্যবসা।
সড়ক, ট্রেন, নৌপথসহ সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় এই আমবাজারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাগান থেকে আম এনে বিক্রি করতে কষ্ট হয় না আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের।
গোমস্তাপুর উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষাবাদ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ৯৪৪ মেট্রিক টন।
রহনপুর আমবাজার ঘুরে দেখা গেছে, ক্যারেট ও ডালিভর্তি আম ভ্যানে করে বাজারে ঢুকছে। বাজারের ভেতরে শুধু আম আর আম নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। বিভিন্ন জাতের আমের সমারোহ। এছাড়া পাশ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলার আমও ঢুকছে এই বাজারটিতে। সকালে আমের আমদানি কম থাকলেও দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরবরাহ বৃদ্ধি পেতে থাকে। বাজারে আড়তদার, স্থানীয় ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মৌসুমি ব্যবসায়ী ও অনলাইন ব্যবসায়ীরা আকারভেদে আম কিনছেন। অনেকে সরাসরি বাগান থেকে আম কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন।
এদিকে উপজেলার সব অঞ্চলসহ অন্য উপজেলা থেকে আসা আমভর্তি ভ্যানগাড়ির কারণে পৌর এলাকার সড়কগুলোতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তারপরও পৌরবাসী যানজটে বিরক্ত না হয়ে আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে বিকল্প পথে চলাচল করছেন।
দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা রহনপুরে এসে আম কিনে ট্রাকে করে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। বর্তমানে বাজারটিতে কেনাবেচা চলছে পুরে দমে। তবে নতুন স্থানে আমবাজার গড়ে ওঠায় রহনপুর রেলস্টেশন এলাকায় যানজট কমে গেছে।
আমবাজারে গোপালভোগ তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। ক্ষিরসাপাতের সরবরাহ কমে গেছে। বর্তমানে বাজারে ক্ষিরসাপাত ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হজার, ল্যাংড়া ২ হাজার থেকে আড়াইহাজার টাকা, রুপালি ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা, কালিভোগ ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা, ভুজাহাড়ী আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা, বোম্বাই ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা, লক্ষণভোগ ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে।
আম ব্যবসায়ী কমল জানান, প্রতিদিন তাকে বিভিন্ন জাতের আম কিনতে হয়। অর্ডারের জন্য আম কিনে বাস, ট্রাক, কুরিয়ার সার্ভিস, ট্রেনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্যাকেট করে আম পাঠিয়ে দেন। ওজন হিসেবে শ্রমিকসহ কার্টনে ১০০ টাকা ও ক্যারেটে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে নিয়ে থাকেন।
আম আড়তদার রাজু বলেন, প্রতিদিন আমবাজার ও বাগান থেকে আড়তে বিভিন্ন জাতের আম সংগ্রহ করা হয়। পরে আড়ত থেকে ব্যাপারীরা আম ক্রয় করে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এছাড়া জুস ফাক্টরির জন্য আম ক্রয় করা হচ্ছে। এই মৌসুমে মোটামুটি ভালো উপার্জন হবে বলে তিনি জানান।
আমচাষি ও আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আফতাব উদ্দিন লালান বলেন, এবার প্রচ- গরমের কারণে আমচাষি ও বাগানমালিকরা গাছ থেকে আম পেড়ে নিয়ে চলে আসছে বাজারে। দামও কম পাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারা। তিনি জানান, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। বিকেলের পর থেকে শুরু হয় ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে আমভর্তি করা হয়। প্রতিদিন এই বাজার থেকে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকার আম বেচাকেনা হয় বলে তিনি জানান।
রহনপুর আম আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুল আজিজ বলেন, তাদের সমিতিতে ১১১টি আড়ত রয়েছে। আড়তগুলো থেকে প্রতিদিন পঞ্চাশ থেকে দেড়শ ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের ছোটবড় যানবাহনে করে আম নিয়ে যাচ্ছে। আগের চেয়ে এখন আমের দাম তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার বলেন, গোমস্তাপুর উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষাবাদ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ৯৪৪ মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
রহনপুর পৌরসভার মেয়র মতিউর রহমান খাঁন বলেন, রহনপুর রেলস্টেশনের পাশে আমবাজারটি হওয়ায় যানজট লেগে থাকত। পথচারীসহ সকলের চলাচলে অসুবিধা হতো। এবার ওই এলাকার পাশে পুকুর ভরাট করে নতুন আমবাজার তৈরি করা হয়েছে। আম ক্রেতা ও বিক্রেতাদের অভিযোগ, রোদের কারণে তাদের অসুবিধা হচ্ছে। পরবর্তীতে ওই স্থানে ছাউনি ও গাছ লাগানো হবে বলে তিনি জানান।