বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট কমানোর কারণে খুচরা পর্যায়ে চিনির মূল্য সাড়ে ৪ টাকা কমে আসবে। তবে রমজান মাসকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের এই মূল্য ৫ টাকা পর্যন্ত কমানোর অনুরোধ করা হয়েছে। এতে তারা রাজি হয়েছেন। তিনি জানান, রমজানের প্রথম সপ্তাহে ট্যারিফ সুবিধায় আমদানি হওয়া চিনি বাজারে পাওয়া যাবে।
রবিবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ট্যারিফ হ্রাসকৃত চিনি এখনো বাজারে আসেনি। রমজানের প্রথম সপ্তাহে ট্যারিফ সুবিধায় আমদানি হওয়া পণ্য পাওয়া যাবে।’ তিনি আরো বলেন, মিলগেট মূল্য থেকে খুচরা পর্যায়ে প্রায় ৫/৬ টাকা বেশি দামে চিনি বিক্রি হয়। আমদানিকারকরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মিলগেটের দামে ট্রাকসেলে তারা চিনি বিক্রি করবে। এতে ভোক্তাদের ৫ থেকে ৬ টাকা সাশ্রয় হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রমজান মাসে চিনির কোনো সংকট হবে না উল্লেখ করে টিপু মুনশি বলেন, বর্তমানে চিনির যে মজুত আছে এবং যে পরিমাণ চিনি পাইপলাইনে রয়েছে, তাতে সরবরাহে কোনো ঘাটতি হবে না।
উল্লেখ্য, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চিনির ওপর আমদানি ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক হ্রাস করে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, ছোলা, ডাল, শাকসবজিসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। কোনো পণ্যের ঘাটতি বা মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। তিনি একসঙ্গে বেশি পণ্য ক্রয় করে বাজারে কোনো ধরনের ‘প্যানিক’ সৃষ্টি না করার জন্য দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি এক্ষেত্রে ভোক্তাদের সচেতন করতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান।
টিপু মুনশি আরো বলেন, রমজান উপলক্ষে বেগুন, টমেটো, শসা, মুরগির মাংসসহ অন্যান্য কৃষিজাত পণ্যের ব্যবহার বেড়ে যায়। সেই সুযোগে মহাসড়কে খাদ্যদ্রব্য ও শাকবসজি আনার পথে কোনোভাবেই যেন চাঁদাবাজি না হয় সে ব্যাপারে কঠোর মনিটরিং করা হবে। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সকল জেলা প্রশাসনকেও বলা হবে।
তিনি জানান, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ১ কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপণ্য দেওয়া হচ্ছে। হিসাব করলে দেখা যায়Ñ প্রায় ৫ কোটি মানুষ এর ফলে উপকৃত হচ্ছেন। তিনি বলেন, দেশে দরিদ্রসীমার নিচে ২০ শতাংশ মানুষকে যদি ধরা হয়, তাহলেও দেখা যায় টিসিবির মাধ্যমে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ সুবিধা পাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এবার রমজান মাসে দুইবার করে টিসিবির পণ্য দেওয়া হবে। সাধারণ মানুষকে সহায়তা দিতে সরকার বছরে টিসিবির মাধ্যমে ৯৮০০ কোটি টাকার ভর্তুকি দিচ্ছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, কোনো ব্যবসায়ী অবৈধভাবে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাজারে মুরগির মূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলেও জানান তিনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে টাস্কফোর্স সভায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান, এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবুসহ সিটি, মেঘনা, দেশ, বসুন্ধরা, টিকে গ্রুপসহ বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।