শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

Last Updated on জুন ৬, ২০২৪ by

যেসব পণ্যের দাম বাড়বে

 

জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এই বাজেটে কিছু পণ্যে আয়কর, শুল্ক, ভ্যাট অথবা সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।
ফলে বাড়ছে সিগারেট, পানির ফিল্টার, কাজুবাদাম, ফ্রিজ. এসি, আইসক্রিম, বেভারেজ, ইট, এলইডি বাল্ব, তামাকজাতীয় দ্রব্য, অপরিশোধিত ভোজ্যতেল, টিউব লিসেনিং জেল, কৃত্রিম কোরান্ডাম, অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড, ফ্লোরোসেন্ট বাতির যন্ত্রাংশ, কাচ, প্লাস্টিক, মেডিকেল যন্ত্র, সরঞ্জাম, মূলধনি যন্ত্রাংশ, নির্মাণসামগ্রী, সিম কার্ড, নিলামকারী সংস্থা, সিকিউরিটি সার্ভিস ও লটারির টিকিট ইত্যাদি পণ্যের দাম। একইসঙ্গে আগামীতে সংসার খরচের পাশাপাশি বাড়বে ভ্রমণ খরচও বাড়ছে।
যেসব পণ্যের দাম বাড়ছে সেগুলো হলোÑ বাজেটের ঘোষণা অনুসারে, সিগারেটের উৎপাদন পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্যস্তর বাড়বে। তিন স্তরের সিগারেটে সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়বে। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৪৮ টাকা ও একই পরিমাণ গুলের মূল্য ২৫ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। যাদের পান-জর্দা খাওয়ার অভ্যাস আছে তাদের ব্যয় বাড়বে।
বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত পানির ফিল্টার আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। দেশে উৎপাদন হওয়ায় পানির ফিল্টার আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয়ে অনেকে বাসায় এলইডি বাল্ব ব্যবহার করেন। এলইডি বাল্ব এবং এনার্জি সেভিং বাল্ব উৎপাদনের উপকরণ আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। কাজুবাদাম চাষকে সুরক্ষা দেওয়ার অংশ হিসেবে খোসা ছাড়ানো কাজুবাদাম আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। ফলে আমদানি করা কাজুবাদামের দাম বাড়বে।
দেশে ফ্রিজ-এসি উৎপাদনে ব্যবহৃত কম্প্রেসার ও সব ধরনের উপকরণের ভ্যাট এবং শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। তাই এসি ও ফ্রিজের দাম বাড়বে। এলআরপিসি তার আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে নির্মাণ খাতে খরচ বাড়বে। গাড়ি সিএনজি-এলপিজিতে কনভার্সনে ব্যবহৃত কিট, সিলিন্ডার ও অন্য যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। গাড়ি কনভার্সন খরচ বাড়বে।
জেনারেটর সংযোজন ও উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ বা যন্ত্রাংশ আমদানিতে এক শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। ফলে দেশের বাজারে জেনারেটরের দাম বাড়বে। বিদেশ থেকে আমদানি করা ম্যাকরেল মাছ আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর যোগ করায় দাম বাড়বে।
শিল্পে ব্যবহৃত ৩৩টি আইটেমের কাঁচামাল আমদানিতে এক শতাংশ শুল্ক বসানো হচ্ছে। এ তালিকায় আছেÑ অপরিশোধিত ভোজ্যতেল, শিরীষ কাগজ উৎপাদনে ব্যবহৃত টিউব লিসেনিং জেল, কৃত্রিম কোরান্ডাম, অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড, প্যাট চিপস উৎপাদনে ব্যবহৃত ইথাইলিন গ্লাইকল, পানির মোটর উৎপাদনকারী অ্যালুমিনিয়াম ইনগট, ফ্লোরোসেন্ট বাতির যন্ত্রাংশ, কাচ, প্লাস্টিক, এলইডি টেলিভিশন উৎপাদনে ব্যবহৃত এলইডি বাল্ব, বাতি উৎপাদনে ব্যবহৃত অ্যালুমিনিয়াম অ্যালয় প্রভৃতির দাম বাড়বে।
অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মূলধনী যন্ত্রাংশ ও নির্মাণসামগ্রী আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে ১ শতাংশ শুল্ক বসানো হচ্ছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নে ডেভেলপারের আনা ব্যবহৃত সামগ্রীতে এক শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুযোগ বাতিল করা হচ্ছে। ফলে অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক ছাড়া অন্য শুল্ক-কর (ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, রেগুলেটরি শুল্ক) পরিশোধ করতে হবে।
ট্যুর অপারেটর সেবার ওপর বিদ্যমান মূসক অব্যাহতি প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, থিম পার্কে মূসক ৭ দশমিক ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ফলে বাড়বে ঘোরাঘুরির খরচ। নিলামকারী সংস্থা, সিকিউরিটি সার্ভিস ও লটারির টিকিটে মূসক ১০ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ করা প্রস্তাব করা হয়েছে। ইটের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুনির্দিষ্ট কর ১০ থেকে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে বাড়বে নির্মাণ খরচ।
আইসক্রিম ও কার্বোনেটেড বেভারেজের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে আইসক্রিম ও কোমলপানীয়ের দাম বাড়বে। মোবাইল ফোনের সিম ব্যবহারে দেওয়া সেবার বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে মোবাইলে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বাড়বে। ই-সিম সরবরাহের ক্ষেত্রে মূসক ২০০ টাকার বিপরীতে ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
কিছু শর্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে রেফারেল বা বিশেষায়িত হাসপাতাল শুল্কছাড় সুবিধায় ১ শতাংশ শুল্কে মেডিকেল যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির সুযোগ রয়েছে। বাজেটে ২০০টিরও বেশি মেডিকেল যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। ফলে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় আরো বাড়বে।

About The Author

শেয়ার করুন