মুজিববর্ষে দেশের প্রত্যেকটি ঘর আলোকিত করেছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী

10

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রায় দেশের সবচেয়ে বড় এবং অত্যাধুনিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনার সাফল্য তুলে ধরে বলেছেন, মুজিববর্ষে দেশের প্রত্যেকটি ঘর আলোকিত করেছে সরকার, এটাই সব থেকে বড় সাফল্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে আমরা আলো জালতে পারলাম এটাই হচ্ছে সবথেকে বড় কথা। আমরা আলোকিত করেছি এদেশের প্রত্যেকটি মানুষের ঘরকে।’
প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালীর পায়রায় সোমবার ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নামফলক উন্মোচনের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব আল্ট্রা-সুপারক্রিটিকাল প্রযুক্তিসহ কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন।
পরিবেশবান্ধব আল্ট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির সাহায্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করার মাধ্যমে, বাংলাদেশ ‘মুজিববর্ষে’ দেশকে শতভাগ বিদ্যুৎ কভারেজের আওতায় আনার সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করে আরেকটি মাইলফলক অর্জন করেছে। কোভিড-১৯ মহামারির প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্ব থমকে যাওয়ার পর এটিই প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগতভাবে প্রথম কোনো উন্নয়ন প্রকল্পে সশরীরে সফর।
প্রধানমন্ত্রী ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নামফলক উন্মোচন করেন এবং শান্তির প্রতীক ১৩২০টি পায়রা অবমুক্ত করেন এবং প্ল্যান্টের সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম ঘুরে দেখেন।
এর আগে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সংলগ্ন হেলিপ্যাডে প্রধানমন্ত্রী পৌঁছালে তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী কয়লা জেটিতে পৌঁছানোর সাথে সাথে বিভিন্ন রঙে সজ্জিত ২০০ জেলে নৌকা থেকে চলন্ত পতাকা ও গান বাজিয়ে তাকে স্বাগত জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে ‘মেমেন্টো’ উপহার দেয়া হয়। তাকে উৎসর্গ করে ‘ও জোনাকি কি সুখে ওই ডানা দুটি মেলেছ’ শিরোনামে একটি গানও এ সময় পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি এবং পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি অডিও-ভিডিও উপস্থাপনাও প্রদর্শিত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ; বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তব্য দেনÑ বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি (প্রা) লিমিটেডের মহাপরিচালক (ডিজি) ইঞ্জিনিয়ার এ এম খুরশেদুল আলম।
১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের সময় দেশের অধিকাংশ অঞ্চল অন্ধকারে ডুবে থাকার এবং মাত্র ১৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, তার সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় সেই অবস্থা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট করে গিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী ৫ বছরে বিএনপি জামায়াত সরকার ১ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন তো বাড়াতেই পারেনি বরং কমিয়ে ফেলে। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট থেকে তার সরকার আজকে দেশকে শতভাগ বিদ্যুতের আলোয় উদ্ভাসিত করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আমরা গড়ে তুলেছি, যাতে সকলের কর্মসংস্থান হতে পারে। যে দক্ষিণাঞ্চল একসময় সব থেকে অবহেলিত ছিল সেখানে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার পাশাপাশি মানুষের চলাচল সহজ করার জন্য রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ আমরা ব্যাপকভাবে করে দিয়েছি। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি, ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দিয়েছি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান সবদিকেই আমরা ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি যা জাতির পিতা করতে চেয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের অনুসরণে তার সরকার ভূমিহীন গৃহহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। কারণ তার সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে একটি মানুষও আর গৃহহীন এবং ঠিকানাবিহীন থাকবে না বা কষ্ট ভোগ করবে না। ‘ইনশাল্লাহ সেটাও আমরা করে ফেলব, এতে কোনো সন্দেহ নেই,’ বলেন তিনি। এই দক্ষিণাঞ্চলের দশমিনায় বীজ গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠাসহ লবণাক্ততা সহিষ্ণু ফসল উৎপাদনে তার সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসপ্রবণ এই এলাকায় এখন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে শুরু করে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। অথচ সারাবছরে এখানে একটি মাত্র ফসল উৎপাদিত হতো। আর তাও প্রাকৃতিক দুর্যোগে নষ্ট হলে তাদের দুর্র্ভিক্ষে পড়তে হতো। আল্লাহর রহমতে আর সে দুর্ভিক্ষ হবে না এবং মানুষকে আর কষ্ট পেতে হবে না বরং মানুষ উন্নত জীবন পাবে। তিনি বলেন, তার সরকার ইতোমধ্যে রাঙ্গাবালী, নিঝুম দ্বীপ, সন্দ¦ীপসহ বিভিন্ন এলাকায় নদীর নিচ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। আর যেখানে বিদ্যুতের গ্রিড লাইন নেই সেখানে সোলার প্যানেল করে দিচ্ছে। হাওর-বাওড়, পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় এই সোলার প্যানেলের সাহায্যে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছে। অর্থাৎ কোনো ঘর আর অন্ধকারে থাকবে না, প্রতিটি মানুষের জীবন আলোকিত হবে। আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করে যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা এগিয়ে যেতে পারে সে পদক্ষেপ যেমনি তার সরকার নিচ্ছে তেমনি দেশের যুব সমাজ লেখাপড়া শিখে যাতে নিজেরাই উদ্যোক্তা হতে পারে তার সুযোগও সৃষ্টি করে দিচ্ছে, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেরা উদ্যোক্তা হয়ে যাতে আরো ১০টি লোককে তারা কাজ দিতে পারে সেভাবেই যুবসমাজকে চিন্তা করতে হবে। তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে। তিনি উল্লেখ করেন, এ কারণে তার সরকার দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের কল্যাণ চিন্তা করেই প্রতিটি পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তার সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পসহ এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরতদের অভিজ্ঞতার ভা-ার স্ফীত হয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ভবিষ্যতে যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প আমরা নিজেরাই বাস্তবায়ন করতে পারব, সেই রকম অভিজ্ঞতা আমরা নিজেরাই অর্জন করছি।
প্রধানমন্ত্রী উপকূলে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলার এবং বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে উৎপাদনে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করার জন্য তার আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি আগামী আষাঢ় মাস থেকে আওয়ামী লীগের বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি সফল করতে দলের প্রত্যেকটি নেতাকর্মীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি উদাহারণ দেনÑ ‘একটি কাঁচামরিচ গাছও যদি পারেন আপনারা লাগাবেন এবং সবাই কিছু না কিছু উৎপাদন করবেন এবং কৃষকের পাশে দাঁড়াবেন।’ তিনি করোনার সময় ধান কাটায় তার আহবানে সাড়া দিয়ে ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগ এবং এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের এগিয়ে আসার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এইভাবে সকল কাজে আমাদের এক হয়ে কাজ করতে হবে যাতে বাংলাদেশ আর পেছনে না ফেরে।