প্রত্নতত্ব বিভাগের উদাসীনতা আর স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলায় অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে প্রায় সাড়ে ৩শ’ বছরের পুরাতন নয়াবাদ মসজিদটি। সংস্কারের অভাবে বিলীনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে মুঘল আমলে নির্মিত এই স্থাপত্যটি। তৎকালীন অসাম্প্রদায়িকতার দৃষ্টান্ত দিনাজপুরের নয়াবাদ মসজিদ এবং কান্তিজিউ মন্দির। কাহারোলের ঢেপা নদীর তীরে নয়াবাদ গ্রামে মুঘল আমলের ঐতিহাসিক নয়াবাদ মসজিদটি অবস্থিত। দিনাজপুর শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে কান্তজিউ মন্দির এবং মন্দির থেকে মাত্র চার কিলোমিটার উত্তরে নয়াবাদ মসজিদের অবস্থান। কেউ কেউ বলেন, মুসলিম শাসনামলে এটি নির্মিত। আবার কারও কারও মতে, রাজা প্রাণনাথ (১৭০৪ খ্রীঃ) কান্তিজিউ মন্দির নির্মাণ কাজ শুরু করলে কিছু মুসলিম শ্রমিক আগ্রা থেকে আনা হয়েছিল। তাদের ধর্মকর্ম করার জন্য এ নয়াবাদ মসজিদ নির্মাণ করা হয়। কারও মতে, ১৭০৪-১৭৫২ খ্রীষ্টাব্দে ইরাক, ইরান থেকে আগত নির্মাণ শ্রমিকেরা যখন ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দিরটির নির্মাণ করছিলেন। তখন তারা ওই মন্দিরের পাশে নামাজ আদায় করতেন। হঠাৎ এক দিন দিনাজপুরের প্রখ্যাত জমিদার মহারাজা প্রাণনাথ ও তার পুত্র রামনাথ মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে তাদের নামাজ আদায় করতে দেখেন। তখন জমিদার রামনাথ শ্রমিকদের নামাজ আদায় করার জন্য একটি মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দেন। এরপর কালুয়া ও নেওয়াজ আলী ঢেপা নদীর তীরে নয়াবাদ গ্রামে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। মসজিদটি কাহারোলের নয়াবাদ গ্রামে অবস্থিত বলে গ্রামের নাম অনুসারে মসজিদটির নাম হয় নয়াবাদ মসজিদ। মসজিদটি ১৯৬৮ সালে সরকারের আওতায় আনা হয়। মসজিদটি তিনটি গম্বুজ, চারটি মিনার, তিনটি দরজা ও দুটি জানালা বিশিষ্ট। মসজিদের পাশে এক গম্বুজওয়ালা একটি হুজুরা খান ঘর এবং উত্তর পাশে তৎকালীন নির্মাণ শ্রমিকদের কবর রয়েছে। ১২৭৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৫৫ মিটার প্রস্থ মসজিদের সামনে রয়েছে প্রশস্ত বারান্দা। তিন গম্বুজ ও চার মিনার বিশিষ্ট এই মসজিদটি অত্যন্ত দৃর্ষ্টিনন্দন। তবে সংস্কারের অভাবে ধসে পড়ছে মসজিদের করুকার্য, গম্বুজ মিনার, মেহেরাব। বৃষ্টি হলে ছাদ চুঁয়ে জল পড়ে, বাতাসে মিনারগুলো দুলতে থাকে। মসজিদের গায়ে পোড়ামাটির ১০৪টি আয়তকার ভাস্কর্য রয়েছে যা সংস্কারের অভাবে ধসে পড়ছে। দেয়ালে শ্যাওলা জমে ধারণ করেছে বিবর্ণরূপ। মসজিদ প্রাঙ্গণে কোনো সীমানা প্রচীর না থাকায় অবাধে প্রবেশ করছে হাঁস, মুরগী ও গরু-ছাগল। এতে নষ্ট হচ্ছে মসজিদের পবিত্রতা। মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মওলানা আব্দুল মান্নান জানান, মসজিদটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়ার ভয়ে নামাজ আদায় করা যাচ্ছে না। তাই আবহাওয়া খারাপ হলে তারা বারান্দায় নামাজ আদায় করেন। তিনি আরও জানান, এই মসজিদটি সরাসরি প্রতœতাত্তি¦ক বিভাগ থেকে নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে। তাই স্থানীয়ভাবে মেরামত করার কোনো সুযোগ নেই। মুঘল আমলের এই স্থাপত্যটি সংস্কার করা হলে পর্যটকদেরও দৃর্ষ্টি আকর্ষণ করবে।