আগামী ২৬ মার্চ ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণের সাক্ষী হতে চলেছে প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষ। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করার ঠিক এক বছরের মাথায় ঢাকা থেকে চিলাহাটি হয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারে বহুকাক্সিক্ষত ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি ‘মিতালী এক্সপ্রেস’। এর মধ্য দিয়ে ওই রুটে দীর্ঘ প্রায় ৫৮ বছর পর আবার যাত্রীবাহী ট্রেনের চাকা গড়াবে।
ওই দিনটিকে সামনে রেখে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট মহল। ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ কর্মকর্তা সব্যসাচী দে মিতালী এক্সপ্রেস চালুর কথা নিশ্চিত করেছেন।
যাত্রীবাহী আন্তর্জাতিক ট্রেন চলাচলের প্রস্তুতি নিতে বৈঠকে বসছেন বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্তারা। আগামী বৃহস্পতিবার সকালে হলদিবাড়ী ব্লকের খালপাড়ায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক সীমান্তের রেলগেটের সামনে এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, বিএসএফ ও রেলের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
পাঁচ দশকেরও বেশি সময় পর প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা চালুর তৎপরতা শুরু হওয়ার খবরে খুশির আমেজ বিরাজ করছে দুই বাংলার মানুষের মধ্যে। ছিটমহল বিনিময় চুক্তির পর ভারত-বাংলাদেশ রেল যোগাযোগ আরো সুদৃঢ় করার লক্ষে অগ্রসর হয় দুই দেশ। ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন আন্তর্জাতিক হলদিবাড়ী-চিলাহাটি রেল রুটের। শুরু হয় পণ্যবাহী ট্রেন পরিষেবা। এরপর ২০২১ সালের ২৭ মার্চ ভার্চুয়ালি দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যাত্রীবাহী মিতালী এক্সপ্রেসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। করোনার কারণে দুই বছর পর্যটন ভিসা দেয়া বন্ধ রেখেছিল ভারত। সে কারণে উদ্বোধন হলেও ট্রেনটি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের মাটিতে যেতে পারেনি। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় ট্রেনটি চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় দুই দেশের রেল মন্ত্রণালয়।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, ২৬ মার্চ ট্রেনটি ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে যাত্রী নিয়ে নীলফামারী, ডোমার, চিলাহাটি স্টেশন হয়ে ভারতের হলদিবাড়ী স্টেশনে এসে পৌঁছাবে। বাংলাদেশের ইঞ্জিনসহ লোকো-পাইলটরা হলদিবাড়ী স্টেশনে থেকে যাবেন। হলদিবাড়ী থেকে ভারতীয় ইঞ্জিনে ট্রেনটিকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত নিয়ে যাবেন ভারতের লোকো পাইলটরা। ফেরার সময় ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের ইঞ্জিনসহ লোকো-পাইলটরা ট্রেনটি সেদেশে নিয়ে যাবেন।
ভারতের রেল সূত্রে খবর, মিতালী এক্সপ্রেসের টিকেট কাটার জন্য বৈধ ভিসা এবং পাসপোর্ট প্রয়োজন। বাংলাদেশের ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন এবং ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি রেলস্টেশন থেকে টিকেট পাওয়া যাবে। ঠিক হয়েছে, ট্রেনটি উভয় দেশ থেকে সপ্তাহে দুই দিন করে চলাচল করবে। নিউ জলপাইগুঁড়ি থেকে রবিবার ও বুধবার। অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে সোমবার ও বৃহস্পতিবার ট্রেনটি যাত্রা করবে। ট্রেনটিতে মোট যাত্রীবাহী কোচ থাকবে আটটি। চারটি কেবিন কোচ ও চারটি এসি চেয়ার কোচ।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ট্রেনটিতে চিলাহাটি স্টেশনের জন্য দুটি পৃথক কোচ বরাদ্দ থাকবে। চিলাহাটি স্টেশনে ট্রেনটি ৩০ মিনিট দাঁড়াবে।