“মা তোর বদনখানি মলিন হলে আমি নয়ন ও মা আমি নয়ন জলে ভাসি”- জাতীয় সংগীতের শেষের দিকের এই লাইনের কথা উল্লেখ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন বলেন, যারা দেশের জন্য এমন করে ভাবেন, যারা আগামীতে এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, তারা এ দেশে জন্মেছেন বলেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৩০ এর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন, ২০৪১ এর মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ এবং ২১০০ সালের ব-দ্বীপ পরিকল্পনা করেছেন।
মঙ্গলবার ‘মাদকাসক্তিমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে শিক্ষক ও যুবসমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে জেলা প্রশাসক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে অনেক আগেই জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। সেই নীতি বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আমি মনে করি, মাদক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষক সমাজেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন- নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. শংকর কুমার কুন্ডু, সিভিল সার্জন ডা. এস এম মাহমুদুর রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান। সূচনা বক্তব্য দেনÑ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ আনিছুর রহমান খান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক তামান্না তাবাসসুম ঊর্মি।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, মাদকের ছোবলে আমাদের যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও এবং জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার কঠোর নজরদারি ও সীমান্তে বিজিবির পাহারা সত্ত্বেও ডলারের বিনিময়ে দেশে মাদক আসছে। কাজেই মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে হলে জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সামজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের এন এম খাঁন মিলনায়তনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের সহযোগিতায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কার্যালয় এই সেমিনারের আয়োজন করে।
বক্তারা আরো বলেন, আমাদের দেশে রয়েছে পর্যাপ্ত তারুণ্যনির্ভর জনশক্তি। দেশের এ মূল্যবান সম্পদ মাদকের কারণে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হচ্ছে, উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নেশার ছোবলে পড়ে এ যুবসমাজ কর্মশক্তি, সেবার মনোভাব ও সৃজনশীলতা হারিয়ে দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করছে। দেশ গড়ার কারিগর সম্ভাবনাময় তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে মাদক। মাদকসেবীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই যুবক। মাদক তারুণ্য, মেধা, বিবেক, লেখাপড়া, মনুষ্যত্ব সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিনষ্ট করে দিচ্ছে স্নেহ-মায়া, ভালোবাসা, পারিবারিক বন্ধন। এজন্য তরুণ-যুবকদের প্রতিটা মুহূর্ত মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। যুবসমাজের একটি দৃপ্ত শপথই পারে তাদের মাদকের অন্ধকার থেকে ফেরাতে। মাদকাসক্ত হয়ে পৃথিবীতে কেউ কিছুই করতে পারেনি নিজেকে ধ্বংস ছাড়া। তাই আসুন, মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে সামাজিক আন্দোলন শুরু করি। মাদকমুক্ত সমাজই হোক তারুণ্যের অহঙ্কার।