আল-মামুন বিশ্বাস, গোমস্তাপুর
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে শফিকুল ইসলাম নামে এক কৃষককে হাত দিয়ে মই টেনে জমি চাষাবাদ করতে দেখা গেছে। এই কৃষক গরুর বিকল্প হিসেবে মই টেনে চাষাবাদ করছেন। তিনি কয়েক বছর যাবৎ এই কাজটি করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
শফিকুলের বাড়ি রহনপুর পৌর এলাকার কাশিমপুর মহল্লায়। বাড়ির পাশে গম্বুজপাড়া মাঠে বর্গাকৃত জমিতে এভাবেই তিনি চাষাবাদ করছেন।
বর্তমানে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গরু-মহিষ দিয়ে জমি চাষাবাদ। কৃষিতে এসেছে আধুনিক প্রযুক্তি। সহজেই কম খরচে কৃষকরা ভালো ফসল উৎপাদন করতে পারছেন। আগে প্রতিটি কৃষকের ঘরে ছিল গরু, ছাগল, মহিষ, লাঙল, গরুর গাড়ি, জোয়াল, মইসহ অন্যান্য উপকরণ। ভোর হলেই কৃষকরা বেরিয়ে যেতেন জমিতে; কাঁধে লাঙল, মই, জোয়াল নিয়ে।
কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় ও বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে কৃষকের জীবনে এসেছে নানা পরিবর্তন। তাদের ছোঁয়ায় কৃষিতে পড়েছে পরিবর্তন। এখন আগের সেই দৃশ্য মাঠে চোখে পড়ে না। এখন জমিতে চাষাবাদের প্রয়োজন হলেই আধুনিক যন্ত্রপাতি ও পাওয়ার টিলার দিয়ে দ্রুত মাঠের কাজ করে নিচ্ছেন কৃষক।
কৃষক ইসমাইল হোসেন বলেন, আগের যুগে কৃষকের চাষাবাদের জন্য প্রধান মাধ্যম ছিল গরু ও মহিষ। জমি চাষাবাদে কৃষকের সঙ্গে গরু ও হালের (লাঙল) সম্পর্ক ছিল। কৃষক মাঠের জমিতে গরু দিয়ে লাঙল টেনে জমি চাষ, মই দিয়ে জমির উঁচু-নিচু সমান করে ফসল ফলাত। আবার ফসল পাকার সময় গরুর গাড়িতে করে নিয়ে আসত। এখন বেশির ভাগ কৃষকের বাড়িতে সেটা দেখতে পাওয়া যায় না। এখন নতুন প্রযুক্তি তৈরি হওয়ায় পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষাবাদ করছে। সময়, খরচ ও শ্রমিক লাগছে কম। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে লাঙল, মই, জোয়াল।
মই টেনে জমি চাষকারী কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, নিজের ভিটা ছাড়া তার কোনো আবাদি জমি নেই। কয়েকবছর আগে এক জোড়া মহিষ ছিল। সেটা দিয়ে তিনি অন্য কৃষকের জমিতে মই দিতেন। অভাবের কারণে মহিষ দুটো বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি জানান, এলাকার কয়েকজনের সামান্যতম জমি চাষাবাদ করছেন। পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষাবাদ করেছেন। পরে মইয়ের ওপর ইট ও বস্তা রেখে দড়ি টেনে হাত ও কাঁধে করে উঁচু-নিচু স্থান সমান করছেন। কৃষক শফিকুল বলেন, গরু দিয়ে বিঘাপ্রতি মই দিতে আড়াইশ টাকা থেকে ৩০০ টাকা লাগে। এছাড়া এক হাল ৪০০-৪৫০ টাকা, দুই হাল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা দিতে হয়। তার পক্ষে এত টাকা দিয়ে মই দেওয়া সম্ভব নয় বলে তিনি নিজ হাতে কষ্ট করে মই টেনে জমি সমান করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার বলেন, গরু দিয়ে হাল চাষ ও মই দিয়ে জমি চাষাবাদ করতে অনেক সময় লাগত। এখন এই পদ্ধতি ধীরে ধীরে কমে গেছে। পুরাতন পদ্ধতি আমূল পরিবর্তন হয়ে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। এখন শ্রমিক তেমন একটা লাগে না, সময়ও লাগে কম। ট্রেতে চারা বপন, পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষাবাদ, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রে চারা রোপণ, কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা ও মাড়া সবই এখন কৃষকের সহজলভ্য। তবে অনেকেই পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষাবাদের পর উঁচু নিচু স্থানগুলো মই দিয়ে সমান করছেন। তারা গরুর পরিবর্তে মইয়ের ওপর ভারী বস্তা রেখে দুই-একজন কৃষক মিলে সেটা টানছেন। তিনি জানান, কৃষিতে আরো পরিবর্তন আসবে, সেটা কৃষকদের ডিজিটাল বানিয়ে দিবে।