ভারত সফররত বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘হঠাৎ করে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলেছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে তা অবহিত করলে বাংলাদেশ ন্যায্যমূল্যে বিকল্প পথে দেশে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজার স্থিতিশীর রাখতে পারত।’ মঙ্গলবার ভারতের আসাম রাজ্যের গৌহাটিতে অনুষ্ঠিত ‘ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ স্টেকহোল্ডার্স মিটিং’য়ে বক্তৃতাকালে টিপু মুনশি এ কথা বলেন। ঢাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ভারতের বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার। দুই দেশের বাণিজ্য বেড়েই চলছে। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৫০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে তা হয়েছে ৮৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি মাত্র ১২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি বলেন, ভারত সাফটার আওতায় বাংলাদেশকে বেশির ভাগ পণ্যে ডিউটি ফ্রি মার্কেট সুবিধা প্রদান করছে। কিন্তু ভারত কর্তৃক আরোপিত ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ, খাদ্যপণ্যের টেস্টিং প্রক্রিয়া, ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ, এ সকল কারণে বাংলাদেশ প্রত্যাশা মোতাবেক পণ্য ভারতে রপ্তানি করতে পাচ্ছে না।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সমস্যাগুলো এরই মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য এ সকল আইন, নিয়ম-কানুন শিথিল করা একান্ত প্রয়োজন। এতে করে উভয় দেশের বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে অপরিকল্পিত যোগাযোগ ব্যবস্থা সাউথ এশিয়ায় বাণিজ্য বৃদ্ধির বাধা। সাসেক (সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন) পারস্পরিক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে বিবিআইএন মোটর ভেহিকেল এগ্রিমেন্ট, ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড প্রটোকল মতো চুক্তি করা হচ্ছে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের বিষয়ে এসওপি স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্তু এখনো সন্তোষজনক সুফল অর্জিত হয়নি। এখন সময় এসেছে বর্ণিত উদ্যোগগুলোকে কাজে লাগিয়ে সুফল অর্জন করার। এ সম্মেলনের মাধ্যমে তাই করা প্রয়োজন। এসডিজি অর্জনের জন্য আমাদের এর সুফলকে কাজে লাগাতে হবে।
টিপু মুনশি বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত এবং ভারতের জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতা গভীরভাবে স্বীকার করে। ভারত বাংলাদেশের শুধু প্রতিবেশীই নয়, সারাজীবনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। অতিসম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেছেন এবং বেশ কিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষর করেছেন। ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো বাড়বে। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এ বছর বাংলাদেশ ৮.১৩ ভাগ জিডিপি গ্রোথ অর্জন করেছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। কিছুদিনের মধ্যে দেশে বেশ কয়েকটি হাইটেক পার্ক গড়ে উঠবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, ভারত সরকারের রোড ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড হাইওয়ে বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জেনারেল ভি কে সিং, আসাম সরকারের অর্থমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং আসাম সরকারের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী চন্দ্র মোহন পাটওয়ারী।