Last Updated on আগস্ট ১১, ২০২৪ by
ব্রাজিলকে হারিয়ে সোনা জিতল যুক্তরাষ্ট্র
মাঠে বল গড়ানোর পরপরই আরেকটি খেলা শুরু হলো গ্যালারিতে। সেটি কণ্ঠের জোর দেখানোর খেলা। পিএসজির মাঠে দর্শক ছিল প্রায় গ্যালারি ভরা। ‘ব্রাজিলৃ ব্রাজিল’ চিৎকারে চারপাশ প্রকম্পিত করে তুললেন ব্রাজিলিয়ান সমর্থকেরা, পরমুহূর্তেই গগণবিদারী আওয়াজে তাদেরকে ছাপিয়ে গেল ‘ইউএসএৃইউএসএ’ গর্জন। ম্যাচজুড়েই দর্শকদের এই লড়াই চলল। মাঠের ফুটবলেও লড়াই হলো ভালোই। শেষ পর্যন্ত এই দুই দলকে আলাদা করল একটি গোল। অলিম্পিকসের নারী ফুটবলে আরও একবার সোনা জয় করল যুক্তরাষ্ট্র। প্যারিসে শনিবার ফাইনালে ১-০ গোলে ব্রাজিলকে হারাল তারা। নারী ফুটবলে সবচেয়ে বেশি সোনা জয়ের রেকর্ড তাদেরই ছিল। এবারের জয়ে পাঁচ সোনায় রেকর্ড আরও সমৃদ্ধ হলো তাদের। ব্রাজিলের এই সোনা রইল অধরাই। এবার নিয়ে তিনবার তারা পেল রুপা। প্রতিবারই ফাইনালে তারা হারে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। ২০০৪, ২০০৮ সালের পর এবার- তিনবারই ব্রাজিল দলে ছিলেন মার্তা। ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা নারী ফুটবলার, ব্রাজিলের সফলতম স্কোরার বিশ্ব ফুটবলের সর্বকালের সেরাদের একজন এই মহাতারকার ক্যারিয়ার শেষ হচ্ছে বড় কোনো দলীয় সাফল্য ছাড়াই। খেলা শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলাররা যখন মেতে উঠলেন উদযাপনে, হতাশ ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের অনেকেই এগিয়ে গেলেন মার্তার দিকে। হয়তো কিংবদন্তিকে তাকে সান্ত¡না দিতে চাইছিলেন তারা। কিন্তু মার্তাকে বেশ শক্তই দেখা গেল। ভেঙে পড়লেন না এই ফরোয়ার্ড। উল্টো তিনিই সতীর্থদের কাছে গিয়ে পিঠ চাপড়ে আলিঙ্গনে জড়িয়ে সান্ত¡না দিলেন। তবে নিজের ভেতরটা নিশ্চয়ই ফাঁকা অনুভব করছিলেন তিনি! রেকর্ড টানা পাঁচবারসহ মোট ছয়বার ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার হওয়ার রেকর্ড তার। ছেলে-মেয়ে মিলিয়েই বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন তিনি। বিশ্বকাপে জিতেছেন গোল্ডেন বল ও গোল্ডেন বুট। ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে পাঁচটি বিশ্বকাপে গোল করা প্রথম ফুটবলার তিনি। পাঁচটি অলিম্পিকসে গোল করার অনন্য কীর্তিও তার। অবিশ্বাস্যভাবে এবার ষষ্ঠ অলিম্পিকস খেললেন এই ৩৮ বছর বয়সে। শেষ বেলায় এসে অপূর্ণতা ঘোচানোর আরেকটি সম্ভাবনা জেগেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হলো না। এখনও আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানাননি তিনি। তবে জানিয়ে দিয়েছেন, এই বছরই শেষ। তাই বড় কোনো আসরও তাই শেষ এই অলিম্পিকস দিয়েই। ব্যক্তিগত সাফল্য আর রেকর্ডে টইটম্বুর তার ক্যারিয়ার। কিন্তু দলীয় অর্জনে প্রাপ্তি একবার বিশ্বকাপে রানার্স আপ আর অলিম্পিকসে তিনটি রুপা। ব্রাজিলের অবশ্য এবার ফাইনালে আসাও কম বিস্ময়কর ছিল না। প্রথম ম্যাচে নাইজেরিয়াকে কোনোরকমে হারাতে পারলেও পরের দুই ম্যাচে জাপান ও স্পেনের বিপক্ষে হেরে বসে তারা। পরে তৃতীয় সেরা দুই দলের একটি হয়ে তারা কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠতে পারে। সেখানে ফ্রান্সকে হারানোর পর সেমি-ফাইনালে স্পেনকে ৪-২ গোলে হারিয়ে তারা পা রাখে ফাইনালে। নক আউটের আগের দুই ম্যাচে অবশ্য ছিলেন না মার্তা। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় নিষিদ্ধ ছিলেন তিনি দুই ম্যাচে। ফাইনালে তাকে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামান কোচ। নেতৃত্বের আর্মব্যান্ডও পরিয়ে দেওয়া হয় তাকে। খুব বড় প্রভাব অবশ্য রাখতে পারেননি তিনি। দু-একবার বল পায়ে কারিকুরি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের গোলমুখে খানিকটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছেন। তবে ব্যবধান গড়তে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্রের খেলা ছিল তুলনামূলক গোছানো, আক্রমণেও ছিল একটু বেশি ধার। গোটা আসরেই তাদের পথচলা ছিল ব্রাজিলের পুরো উল্টো। শুরু থেকেই তারা এগিয়ে যায় দাপটে। গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে জাম্বিয়া, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর নক আউটে জাপান ও জার্মানিকে হারিয়ে তারা ফাইনালে ওঠে। অপ্রতিরোধ্য পথচলায় সোনাও জিতে নিল তারা। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে শততম ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখেন ম্যালোরি সোয়ানসন। দ্বিতীয়ার্ধের দ্বাদশ মিনিটে গোল করে তিনি পার্থক্য গড়ে দেন ম্যাচে। গোলটিও ছিল দেখার মতো। করবিন আলবার্টের দারুণ পাস থেকে বল পেয়ে দুর্দান্তভাবে এগিয়ে গিয়ে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে বল জালে জড়ান ২৬ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড। ম্যাচের শুরুতে যদিও ব্রাজিলের একটু দাপট ছিল। শেষ দিকে ভালো কিছু আক্রমণও তারা করে। কিন্তু গোল বের করতে পারেননি কেউ। ম্যাচ শেষে মাঠ ছেড়ে যাওয়ার সময় অবশ্য একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন মার্তা। তাকে জড়িয়ে তখন সান্ত¡না দেন কোচ। ফাইনালের দর্শকদের মধ্যে ছিলেন আর্সেনালের সাবেক কোচ আর্সেন ভেঙ্গার, হলিউড তারকা টম ক্রুজসহ আরও অনেক তারকা। ম্যাচ শেষে কনসার্টে গ্যালারির দর্শকদের সঙ্গে নাচে-গানে মেতে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রের মেয়েরাও। তবে ম্যাচের সবচেয়ে বড় অভিবাদন বরাদ্দ ছিল মার্তার জন্যই। রুপার পদকের জন্য যখন একে একে সবার নাম ঘোষণা করা হচ্ছিল, মার্তার নাম উচ্চারিত হতেই দর্শকদের উল্লাসে গোটা স্টেডিয়াম যেন কেঁপে ওঠে। আরও একবার প্রমাণ হয়ে যায়, দল সাফল্যনা পেলেও তার জনপ্রিয়তা, তার আবেদন আর তার ওজন কতটা।