Last Updated on এপ্রিল ৪, ২০২৪ by
ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী থেকেই বাংলাদেশের সিরিজ শেষ
ম্যাচ শেষ হতেই মুষ্ঠিবদ্ধ হাত বাতাসে ছুড়লেন অ্যালিসা হিলি। যেন দারুণ কোনো ম্যাচ জিতলেন! আদতে ম্যাচে লড়াই জমেইনি। ব্যাটে-বলে আরও একবার পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশ। যে দাপটে সফরের শুরুটা করেছিল অস্ট্রেলিয়া, সিরিজজুড়ে তা ধরে রেখে একই প্রতাপে সফর শেষ করল অস্ট্রেলিয়া। অধিনায়ক হিলির উদযাপনে হয়তো ফুটে উঠল সেই সন্তুষ্টিই। হতাশাময় সিরিজের শেষটিতে এসেও ভালো কিছু উপহার দিতে পারেনি বাংলাদেশ। ৭৭ রানের জয়ে সিরিজ শেষ করেছে অস্ট্রেলিয়া। ওয়ানডে সিরিজের মতো টি-টোয়েন্টিতেও বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করে ছাড়ল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। নিগার সুলতানার দল তিন ওয়ানডে ও তিন টি-টোয়েন্টির সবকটি হেরেছে তো বটেই, তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়ত পারেনি। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার শেষ টি-টোয়েন্টিতে ২০ ওভারে অস্ট্রেলিয়া তোলে ১৫৫ রান। বাংলাদেশের জন্য ওই রান এমনিতেই ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। রান তাড়ায় কোনো লড়াইয়ের ছাপই রাখতে পারেনি ব্যাটাররা। ধুঁকতে ধুঁকতে তারা যেতে পারে ৭৮ রান পর্যন্ত।
বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দেওয়া বোলিংয়ে ৪ ওভারে স্রেফ ১২ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন অস্ট্রেলিয়ার গতিতারকা টায়লা ভ্যালেমিক। অসুস্থতার কারণে ব্যাটিং অর্ডারে নিচে নেমে সাত নম্বরে নামেন নিগার সুলতানা। তার ব্যাট থেকেই আসে দলের সর্বোচ্চ ৩২ রান। তাতেও ভদ্রস্থ হয়নি পরাজয়ের ব্যবধান। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি মারেন বেথ মুনি। পরের ওভারে শরিফা খাতুনের বলে চার মারেন আরেক ওপেনার হিলি। আগের ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা ফারিহা তৃষ্ণার বলে ম্যাচের প্রথম ছক্কা মারেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন শরিফা। ক্রিজ ছেড়ে মারতে গিয়ে স্টাম্পড হন ১৩ বলে ১০ রান করা মুনি। সঙ্গীর বিদায়ের পরও দমে যাননি হিলি। তৃষ্ণার পরের ওভারে বাউন্ডারির পর ডিপ মিড উইকেট দিয়ে মারেন বড় ছক্কা। অষ্টম ওভারে বোলিংয়ে এসে হিলির আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের সামনে পড়েন নাহিদা আক্তার। পরপর দুই বলে বাউন্ডারি হজম করেন বাঁহাতি স্পিনার। টানা তৃতীয় বাউন্ডারির খোঁজে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। ৬ চারের সঙ্গে ২ ছক্কায় ২৯ বলে ৪৫ রান করেন তিনি। নিজের পরের ওভারের শেষ বলে এলিস পেরিকেও ফেরান নাহিদা। চতুর্দশ ওভারে দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে অ্যাশলি গার্ডনারকে আউট করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান ২৩ বছর বয়সী স্পিনার। সেটি করতে পারেননি। তবে নাহিদার সঙ্গে রাবেয়া খান, ফাহিমা খাতুনদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে রানের গতিতে কিছু বাধ দিতে পারে বাংলাদেশ। একশ রান করতে ১৬ ওভার খেলে অস্ট্রেলিয়া। শেষ ৪ ওভারে আবার বদলে যায় দৃশ্যপট। ম্যাকগ্রা, গ্রেস হ্যারিসের ঝড়ে ৫৫ রান করে সফরকারীরা। ৩৩ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন তারা। অষ্টাদশ ওভারে শরিফার বলে দুই ছক্কা ওড়ান ম্যাকগ্রা।
পরের ওভারে নাহিদার বলে হ্যারিসের ব্যাট থেকে আসে দুটি চার। শেষ ওভারে তৃষ্ণাকে ছক্কা মারেন তিনি। ইনিংসের শেষ বলে রান আউট হওয়া হ্যারিস ১১ বলে করেন ১৯ রান। ২টি করে চার-ছক্কায় ২৯ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত থাকেন ম্যাকগ্রা। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন নাহিদা। রান তাড়ায় প্রথম ওভারেই মুর্শিদা খাতুনের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তিন নম্বরে নামানো হয় রিতু মনিকে। প্রায় এক যুগের ক্যারিয়ারে স্রেফ দ্বিতীয়বার এতো ওপরে ব্যাটিংয়ে নেমে মেগান শুটের বলে পরপর দুই চার মারেন অভিজ্ঞ ব্যাটার। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। টায়লা ভ্যালেমিকের বলে মুনির দারুণ ক্যাচে ফেরেন রিতু। পরের ওভারে স্বর্ণা আক্তারকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের চাপ আরও বাড়ান পেরি। তখনও একপ্রান্তে অবিচল আরেক ওপেনার দিলারা আক্তার। তবে বেশি কিছু করতে পারেননি তরুণ ব্যাটার। ১ চারে ১৮ বলে ১২ রান করে ফেরেন তিনি। ৪ উইকেট পড়ারও ক্রিজে যাননি নিগার। আরেক তরুণ রাবেয়া খানকে নামানো হয় ছয় নম্বরে। ১ রান করে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন তিনি। সাত নম্বরে নামেন নিগার। ২০১৫ সালে অভিষেক ম্যাচের পর এবারই প্রথম এত নিচে নামলেন অভিজ্ঞ কিপার-ব্যাটার। এরপর এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে ফাহিমা, শরিফা, নাহিদা, মারুফার আসা-যাওয়া দেখেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। শেষ উইকেটে তৃষ্ণাকে নিয়ে ২৫ রানের জুটিতে পরাজয়ের ব্যবধান কিছুটা কমান তিনি। ৫ চারে ৩১ বলে ৩২ রান করে শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন তিনি। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের হতাশা ঝেড়ে ফেলার সুযোগ চলতি মাসেই পাচ্ছে বাংলাদেশ। পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে আগামী ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশে আসছে ভারত। মাঠের লড়াই শুরু ২৮ এপ্রিল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ১৫৫/৬ (হিলি ৪৫, মুনি ১০, পেরি ৮, গার্ডনার ১৬, ম্যাকগ্রা ৪৩*, ওয়্যারহ্যাম ৪, হ্যারিস ১৯; মারুফা ২-০-১৫-০, শরিফা ৩-০-৩১-১, তৃষ্ণা ৪-০-৩৩-০, নাহিদা ৪-০-৩১-৩, রাবেয়া ৪-০-১৯-১, ফাহিমা ৩-০-১৯-০)
বাংলাদেশ: ১৮.১ ওভারে ৭৮ (দিলারা ১২, মুর্শিদা ১, রিতু ১০, স্বর্ণা ০, ফাহিমা ১১, রাবেয়া ১, নিগার ৩২, শরিফা ০, নাহিদা ১, মারুফা ০, তৃষ্ণা ২*; শুট ২-০-১৩-১, ভ্যালেমিক ৪-০-১২-৩, পেরি ২-০-৮-১, গার্ডনার ১-০-৪-১, ওয়্যারহ্যাম ১.১-০-১-২, মলিনিউ ৪-০-১৫-১, সাদারল্যান্ড ৪-০-২১-১)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৭৭ রানে জয়ী
সিরিজ: অস্ট্রেলিয়া ৩-০ ব্যবধানে জয়ী
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: টায়লা ভ্যালেমিক
প্লেয়ার অব দা সিরিজ: সোফি মলিনিউ