Last Updated on মে ২৯, ২০২৪ by
বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ রোল মডেল : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
শেখ হাসিনা সংলাপের মাধ্যমে সকল দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসন, চলমান যুদ্ধ বন্ধ এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতার অর্থ মানবজাতির কল্যাণে ব্যয় করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি বৈশি^ক শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় একটি দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য নাম। আমরা সর্বজন স্বীকৃত এবং বিশ্বের বুকে একটি রোল মডেল।’
প্রধানমন্ত্রী বুধবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২৪’ উদ্যাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতার পররাষ্ট্র নীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’, বিশ^শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতার অঙ্গীকার ও আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করে বাংলাদেশ জাতিসংঘের ‘ব্লু হেলমেট’ পরিবারের সদস্য হয়।
সরকারপ্রধান বলেন, বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ১৩টি স্থানে ৪৯৩ জন নারীসহ ৬ হাজার ৯২ জন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা যেখানে কাজ করছে সেসব রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রশংসা শুনে গর্বে আমার বুকটা ভরে যায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ একটি দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য নাম। আমরা সর্বজন স্বীকৃত এবং বিশে^র বুকে রোল মডেল। এই অর্জনের পেছনে রয়েছে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর টেকসই, পরিশ্রমী নিবেদিতপ্রাণ সদস্যদের মহান আত্মত্যাগ ও অমূল্য অবদান।
তিনি ১৬৮ বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের অবদানের কথা স্মরণ করেন, যারা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মত্যাগ করেছেন এবং ২৬৬ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
শান্তিরক্ষায় অবদান রাখতে গিয়ে আত্মোৎসর্গকারীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তাদের পরিবারের সদস্যদেরও সমবেদনা জানান তিনি। স্বজন হারাবার বেদনা যে কি, তিনি তা জানেন বলেও এ সময় উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতিসংঘ শাস্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ৩৬ বছর উদ্যাপন করছি। বাংলাদেশ আজ বিশে^র বৃহৎ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ এবং সকলে অত্যন্ত সুনাম ও গৌরবের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। তিনি এ সময় বিশে^র নানা প্রান্তে কর্মরত সকল বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের শুভেচ্ছা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে আমরা বিশ^ শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছি। শান্তিরক্ষা মিশন ছাড়াও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতেও আমরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও অবদান রাখছি।
১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের জাতিসংঘে ‘কালচার অব পিস’ (শাস্তির সংস্কৃতি) প্রস্তাব উত্থাপন করে যা ১৯৯৯ সালে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, সেই থেকে প্রতিবছর জাতিসংঘে বাংলাদেশের ‘ফ্লাগশিপ রেজ্যুলেশনে’ এই ‘কালচার অব পিস’ সর্বম্মতিক্রমে গৃহীত হয়ে আসছে। পরবর্তীতে জাতিসংঘ ২০০০ সালকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার অব কালচার অব পিস’ হিসেবে ঘোষণা করে। যার মাধ্যমে শান্তির সংস্কৃতি প্রস্তাবের ২৫তম বর্ষ উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়নে কালচার অব পিস প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য বলে আমার বিশ্বাস।’
অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেনÑ সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আহত তিনজনের হাতে সম্মাননা তুলে দেন। তিনি ইউএন পিস কিপার্স জার্নাল’র (১০ম ভলিউম) মোড়কও উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মত্যাগকারী বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের কৃতিত্বের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী পরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে কর্মরত বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।