বিশ্বে প্রতি দুই মিনিটে মারা যায় একজন নারী: ডব্লিউএইচও

4

গর্ভধারণজনিত জটিলতা কিংবা শিশু জন্মদানে সময় প্রতি দুই মিনিটে মারা যাচ্ছেন একজন নারী। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে মাতৃমৃত্যু বেড়েছে। আবার কোথাও তা অপরিবর্তিত রয়েছে। কিন্তু অবস্থার উন্নয়ন ঘটেনি কোথাও। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ২০০০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ‘ট্রেন্ডস ইন ম্যাটারনাল মর্টালিটি’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ডব্লিএইচও জানিয়েছে, ২০২০ সালে প্রতি লাখে দুইশ ২৩ জন নারী মাতৃত্বজনিত কারণে মারা যেতেন। আর ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ছিল দুইশ ২৭। ২০০০ সালে তা ছিল তিনশ ৩৯। মাতৃমৃত্যু প্রতিরোধ করার সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দৃশ্যত অগ্রগতি নেই বলে মন্তব্য করেছে সংস্থাটি । আর এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্য ১০ লাখের বেশি নারীর জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও সতর্ক করে দিয়েছে তারা। সংস্থাটির মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস বলেছেন, ‘‘গর্ভধারণ বিশ্বের লাখো মানুষের জন্য আজও একটি ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। কারণ, সবার জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।” বিশ্বের অনেক অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবায় নারীর প্রতি ‘তীব্র বৈষম্য’ রয়েছে বলে জানান টেড্রোস। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিটি নারীর সন্তান জন্মদানের আগে, জন্মদানের সময় ও পরে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবাগুলো নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রতিটি কন্যাশিশু যাতে তার প্রজনন অধিকার পুরোপুরি প্রয়োগ করতে পারে সেটিও নিশ্চিত করা জরুরি।”প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের বিশ্বে দুই লাখ ৮৭ হাজার মাতৃমৃত্যু হয়েছে।

আর ২০১৬ সালে এই সংখ্যা ছিল তিন লাখ নয় হাজার। এই পার্থক্যকে ‘যৎসামান্য অগ্রগতি’ বলছে বিশ্ব সংস্থাটি। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসিডিজি) অর্জনে মাতৃমৃত্যুকে হারকে প্রতি লাখে ৭০-এর নিচে নামানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৫ সালে এ লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো। প্রতিবেদনটির গবেষকরা বলছেন, ২০০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু কমানোর ক্ষেত্রে ‘কিছু উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ দেখা গেছে। কিন্তু এরপর থেকে আর কোনো অগ্রগতি নেই, বরং কিছু ক্ষেত্রে উল্টো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন তারা। এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) নির্বাহী পরিচালক ড. নাটালিয়া কানেম। তিনি বলেন, ‘‘অনেক নারী গর্ভধারণ এবং সন্তান জন্মদানের সময় অকারণে মারা যাচ্ছেন।

এক বছরে দুই লাখ ৮০ হাজারের বেশি প্রাণহানি অকল্পনীয়।” তিনি আরও বলেন, “পরিবার পরিকল্পনায় আমাদের জরুরিভিত্তিতে বিনিয়োগ করতে হবে এবং সেটা আমরা করতে সক্ষম।এর মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক ঘাটতি পূরণ করে মাতৃত্বকালিন সময়ে প্রতিটি নারী যেন তার প্রয়োজনীয় যতœআত্তি, চিকিৎসা পেতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।মাতৃমৃত্যু ঠেকাতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, জ্ঞান এবং সম্পদ আমাদের রয়েছে। এখন প্রয়োজন শুধু রাজনৈতিক সদিচ্ছা।” প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বের দরিদ্রতম এবং সংঘাত প্রবণ অঞ্চলে মাতৃমৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। ২০২০ সালে মাতৃমৃত্যুর ৭০ ভাগ হয়েছে সাব-সাহারান আফ্রিকায়।গুরুতর মানবিক সংকটের সম্মুখীন নয়টি দেশেও মাতৃমৃত্যুর হার বৈশ্বিক গড়ের দ্বিগুণের বেশি বলে জানিয়েছন গবেষকেরা। মাতৃত্বকালীন মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয়কে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এগুলোর মধ্যে আছে রক্তপাত, উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভধারণের সময় সংক্রমণ, অনিরাপদ গর্ভপাতের কারণে সৃষ্ট জটিলতা এবং এইচআইভি/এইডস এবং ম্যালেরিয়ার মতো শারিরীক জটিলতা, যা গর্ভাধারণের পর বেড়ে যেতে পারে। তবে প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, সবার জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা গেলে এ সমস্যাগুলোও প্রতিরোধ করে মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। জাতিসংঘের ম্যাটারনাল মর্টালিটি এস্টিমেশন ইন্টার-এজেন্সির পক্ষে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে ডব্লিউএইচও। আর এই ইন্টার-এজেন্সি গঠিত হয়েছে ডব্লিউএইচও, ইউনিসেফ, ইউএনএফপিএ, বিশ্বব্যাংক এবং জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজকল্যাণ বিষয়ক বিভাগের (ডিইএসএ) জনসংখ্যা শাখার সমন্বয়ে।