বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে মুসলিমদের আরো বেশি বিনিয়োগের আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী

8

বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশের প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুসলিম উম্মাহকে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে তাদের সন্তানদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে আরো বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) এর ক্যাম্পাসে ৩৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য আরো বেশি পরিমানে বিনিয়োগ করতে হবে।’ মুসলমানদের যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে যথাযথভাবে এই সম্পদ ব্যবহার করতে হবে। আমি বিশ্বাস করিÑ আমরা এটা করতে পারব।’
তিনি আরো বলেন, ‘যখনই আমি ওআইসি সদস্য দেশে যাই, তাদের আমি এই অনুরোধই করি।’ সরকারপ্রধান বলেন, ইসলামের স্বর্ণযুগে বিশ্ব সভ্যতা, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন, রসায়ন, গণিত, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা ও ভূগোলসহ জ্ঞানের আরো অনেক শাখায় মুসলিম স্কলারদের ব্যাপক অবদান রয়েছে, যা আমাদের মুসলিমদের ঐতিহ্যের গৌরবময় ইতিহাস গড়েছে। তিনি বলেন, সে যুগের মুসলিম স্কলাররা সংস্কৃতি, জ্ঞান অর্জন, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং সমসাময়িক সাহিত্যে বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করেছিল।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘সেই অবস্থান থেকে বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর এই পিছিয়ে থাকার কারণগুলো আমাদের বিশ্লেষণ করা দরকার।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ¦, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্প্রীতির অভাব, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভাব এবং অন্যান্য অনেক বিষয় মুসলিম উম্মাহর পতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি- এ হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের মুসলিম উম্মাহকে মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোকে বিশেষ করে তাদের নিজস্ব শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও বিজ্ঞান এবং আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশে আরো বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, আধুনিক যুগে মুসলিমরা মাত্র তিনটি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এটাই এই আধুনিক যুগে গবেষণা, প্রযুক্তি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহর অবদানের প্রকৃত উদাহরণ। তিনি অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘মুসলিম জাতির এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে জোরালো প্রচেষ্টা প্রয়োজনÑ যাতে করে তারা এক্ষেত্রে আরো অবদান রাখতে পারেন।’ চতুর্থ শিল্প বিপ্লব দ্বারা উপস্থাপিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মুসলিম সম্প্রদায়ের পিছিয়ে পড়া উচিত নয়। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস, ইন্টারনেট অফ থিংস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও অন্যান্য খাতে।
ওআইসি’র মহাসচিব ও ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) চ্যান্সেলর হিসেন ব্রাহিম তাহার সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য দেন আইইউটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। এছাড়াও সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনিও বক্তব্য দেন।
সমাবর্তনে ২০২১ এবং ২০২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ¯œাতক, মাস্টার্স, পিএইচডি এবং ডিপ্লোমা ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অসামান্য ফলাফলের জন্য দুই ধরনের স্বর্ণপদক আইইউটি স্বর্ণপদক এবং ওআইসি স্বর্ণপদক দেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুতে আইইউটির ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী তার অর্থায়নে আইইউটির নবনির্মিত মহিলা হলেরও উদ্বোধন করেন।
আইইউটি বাংলাদেশের একটি শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান- যা অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি) এর অর্থায়নে পরিচালিত হয়। আইইউটি’র মূল উদ্দেশ্য হলো- ওআইসি’র সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মানবসম্পদ উন্নয়নে, বিশেষ করে প্রকৌশল, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে অবদান রাখা। আইইউটি ওআইসিভুক্ত সদস্য দেশগুলো থেকে সরাসরি অনুদান পায় এবং ছাত্রদের বিনামূল্যে শিক্ষাদান, বোর্ডিং, বাসস্থান ও চিকিৎসা প্রদান করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ওআইসির সব এজেন্ডা ও কর্মকা-ে সার্বক্ষণিক সমর্থন দিয়ে আসছে। আমরা আইইউটির গর্বিত হোস্ট, এর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবং আমরা আইইউটির মসৃণ কার্যকারিতার জন্য যে কোনো ধরনের সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত করতে চাই যে, ভবিষ্যতেও আইইউটিকে সমর্থন করার বিষয়ে আমরা এটি বজায় রাখার অঙ্গীকার করছি। শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন যে, আজকের গ্র্যাজুয়েটরা আগামী দিনে বিশ্বের প্রযুক্তিবিদ, উদ্ভাবক এবং বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি অব্যাহত রাখবে।
দেশের উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আগামী ১ জুন একটি নতুন অর্থবছরের বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন এবং এর আকার হবে ৭ লাখ কোটি টাকার বেশি। দেশে একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করার কারণে বিদ্যমান অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে, যার ফলে বাংলাদেশে আজ স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করছে।
সরকারপ্রধান বলেন, তার সরকার জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চায়। এই স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট জনসংখ্যা, একটি স্মার্ট সমাজ এবং একটি স্মার্ট জনশক্তি থাকবে। তিনি বলেন, তারা দেশের জনসংখ্যাকে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হতে শেখাবেন, যাতে তারা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে দক্ষতার সঙ্গে অবদান রাখতে পারে।