বাড়িতে বসেই খাবার ব্যবসা : গৃহবধূ থেকে স্বাবলম্বী মোবাদ্দেসা বৃষ্টি

77

আল-মামুন বিশ্বাস

প্রত্যন্ত অঞ্চলে খাবার তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন নারী, এ কথা এখন আর কল্পনা নয়; বাস্তব। গ্রামে বসেই খাবার তৈরি করে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দিয়ে আজ স্বাবলম্বী হয়েছেন নারী উদ্যোক্তা গৃহবধূ মোবাদ্দেসা বৃষ্টি। অনলাইন, বিয়ে, পিকনিক, জন্মদিনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অর্ডারের খাবার তৈরি করে এলাকায় সাড়াও জাগিয়েছেন তিনি। খাবার সরবরাহ করছেন নিজস্ব পরিবহনে।
এ পেশাতেই স্বাবলম্বী হয়েছেন বৃষ্টি। এখন আর পেছনে তাকাতে হয় না তাকে। মানসম্মত খাবারের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কেবলই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অদম্য বাসনা তার মনের মধ্যে।
মোবাদ্দেসা বৃষ্টির বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম বৈরতলায়। স্বামী বাইরুল ইসলাম। তার ব্যবসার সহযোগী স্বামী, শাশুড়ি, জাসহ পরিবারের সকলে।
২৫০০ টাকার ওপর ভর করে গত বছরের আগস্ট থেকে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। এলাকার লোকজন ও শিক্ষার্থীরাই ছিল তার প্রথম ক্রেতা। ঘরোয়া পরিবেশে তৈরি খাবারের মান ভালো হওয়ায় ব্যবসার প্রসার বাড়তে থাকে। এখন অনেক প্রতিষ্ঠানই তাকে খাবারের অর্ডার দেন।
প্রযুক্তির যুগে পিছিয়ে থাকেননি বৃষ্টিও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুলেছেন ‘ড্রিম ফুড’ পেজ। এতে সাড়াও পেয়েছেন। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই তার খাবার অর্ডার করছেন। ব্যবসার পরিধি বাড়ায় গ্রামের কিছু নারীর কর্মও জুটেছে তার কাছে। বাড়িতে বসে দেশীসহ ফাস্টফুড খাবার তৈরি করছেন তারা।
উদ্যোক্তা মোবাদ্দেসা বৃষ্টি জানান, ইউটিউবে সিরাজগঞ্জের তিন বোনের অনলাইনে খাবার বিক্রির খবরটি দেখে এ ব্যবসা করার চিন্তা মাথায় আসে। শুনে স্বামীও উৎসাহ দেয়। বড় জাও সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে। তিনি বলেন, ২৫০০ টাকা দিয়ে এ ব্যবসা শুরু করি। নিজে বাজারে গিয়ে জিনিসপত্র ও পণ্য ক্রয় করি। এরপর শুরু হয় খাবারের ব্যবসা।
বৃষ্টি বলেন, প্রথমে গ্রামের লোকজনই খাবার নিতে শুরু করে। পরে স্কুলের শিক্ষার্থীরাও আসে। ধীরে ধীরে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে বাড়িতে এসে খাবার খেয়ে যান। তিনি জানান, এরপর অনলাইনে ‘ড্রিম ফুড’ নামে একটি পেজ খুলেন। সেখানে তিনি প্রতিদিনই খাবারের অর্ডার পাচ্ছেন। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য খাবার ও ফাস্টফুড অর্ডার নিয়ে থাকেন এবং নিজ পরিবহনে পৌঁছেও দেন। ব্যবসার প্রসার বাড়ায় এলাকার কিছু নারীকে কাজে লাগিয়েছেন তিনি। বৃষ্টি জানান, রহনপুর পৌর এলাকার অনেক বাসাবাড়ি, চাকরিজীবী, হোস্টেল, মেসে তিন বেলা খাবার সরবরাহ করে থাকেন।
দেশী খাবার ছাড়াও বৃষ্টির খাবার তালিকায় রয়েছেÑ ফাস্ট ফুড, মোমো, বিরিয়ানি, রাইসবোল, পাস্তা, ফ্রাইড রাইস, চাইনিজ-চাওমিন, চিকেনফ্রাই, পিৎজা, বার্গার ও শর্মা। পিৎজা ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, ফ্রাইড রাইস ৮০ টাকা, রাইসবোল ১০০ টাকা, শর্মা ৪০ টাকা, মোমো ২৫ টাকা, গরুর বিরিয়ানি ১৬০ টাকা, চিকেন বিরিয়ানি ১২০ টাকায় বিক্রি করে থাকেন তিনি।
খাবারের ব্যবসায় খুশি মোবাদ্দেসা বৃষ্টি। এ ব্যবসায় মাসে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন বলে জানান তিনি। ভবিষ্যতে রহনপুরে একটি বড় ধরনের রেস্তোরাঁ খোলার ইচ্ছে রয়েছে তার। অন্য নারীদের উদ্দেশ্যে তার বক্তব্য, বাড়িতে বেকার না বসে যে কোনো কাজে যোগ দেয়া দরকার।
বৃষ্টির বাড়িতে খাবার খেতে আসা একটি সংস্থার প্রতিনিধি শিশির রায় জানান, চাকরির সুবাদে বোয়ালিয়া ইউনিয়নে তাকে কাজ করতে হয়। বাসায় কেউ নাই, তাই দুপুরের খাবার খেতে আসা। তিনি জানান, বিভিন্ন সময় তারা বৃষ্টির কাছে খাবারের অর্ডার দেন।
প্রতিবেশী শিক্ষক তোফিজুল ইসলাম জানান, বৃষ্টি সম্পর্কে আমার বউমা। সে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করে থাকে। প্রথমে সে রাস্তার ধারে খাবার বিক্রি শুরু করে। পরে খাবারের অর্ডার নিতে থাকে। পরিবারের অন্য সদস্যরাও তাকে খাবার তৈরিতে সহযোগিতা করছে।
বৃষ্টির স্বামী বাইরুল ইসলাম বলেন, প্রথমে তাকে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু তার আগ্রহ দেখে আর বাধা দিইনি। ২৫০০ টাকা দিয়ে সে ব্যবসা শুরু করে আজ সে স্বাবলম্বী। এতে নিজেকেও গর্ববোধ করি।
বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামিউল আলম শ্যামল গৌড় বাংলাকে বলেন, বিভিন্ন জায়গায় অর্ডারের মাধ্যমে বৃষ্টি দিন দিন ব্যবসার প্রসার ঘটাচ্ছেন। এলাকার মেয়েদেরকেও কর্মস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছেন। দূর-দূরান্ত থেকে ভালোই অর্ডার পাচ্ছেন তিনি। নিজ গ্রামসহ আশপাশের এলাকার সব মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মোবাদ্দেসা বৃষ্টির খাবার। তার সাফল্য কামনা করছি।