বাহারি মাছ চাষে বাহারি হাসি জোসনার মুখে

80

সম্পদশালী ব্যক্তিদের ড্রইংরুমে অ্যাকুরিয়ামে শোভা বর্ধন করে বাহারি মাছ। একটা সময় এই বাহারি মাছ মানুষের কাছে স্বপ্নের মনে হলেও, এখন জেলা তথা উপজেলা শহরেও মেলে এ মাছ। কেউ কেউ আবার বাণিজ্যিকভাবে চাষও শুরু করেছেন। শখের মাছ এখন স্থানীয়ভাবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন শুরু হয়ে গেছে।
শখের বসেই বাহারি মাছ চাষ শুরু করেছিলেন রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার বাসুদেবপুর ইউনিয়নের ঘনশ্যামপুর গ্রামের চল্লিশোর্ধ্ব জোসনা বেগম। স্বামী কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। গৃহস্থালি কাজকর্মের পাশাপাশি জোসনা যুক্ত ছিলেন উন্নয়ন সংস্থা প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির ইউনিট-১২, চরঅনুপনগর শাখার নুপুর মহিলা সমিতিতে। সেখান থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ইউনিটের মৎস্য খাতের আওতায় চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ছোট্ট পরিসরে ৪টি ডিচে বাহারি মাছ চাষ শুরু করেন। এখন তার স্বপ্ন বড় পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে বাহারি মাছ চাষ করার।
তিন ছেলের জননী জোসনা বেগম বলেন, প্রয়াসের মৎস্য ইউনিটের ভাইয়েরা আমাকে বাহারি মাছ চাষের জন্য বলেন। কিন্তু প্রথমে সেভাবে গুরুত্ব দিইনি। পরে শখের বশেই বাহারি মাছ চাষের চিন্তাভাবনা করি এবং তাদের দেয়া ১২ হাজার এবং আমার ৩ হাজার মোট ১৫ হাজার টাকা দিয়ে বাড়ির পাশে ছোট্ট জায়গায় ৪টি ডিচে ১৩০টি বিভিন্ন জাতের বাহারি মাছ নিয়ে চাষ শুরু করি। তিনি আরো বলেন, শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১২০০ বাহারি মাছের পোনা উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে ২৫০টি পোনা প্রতিটি ৪০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছে। বাকি পোনাগুলো বিক্রি করে সেখান থেকে আরো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি।
জোসনা বেগম জানান, বাহারি মাছের চাষ থেকে শুরু করে এর খাবার এবং পরিচর্যার বিষয়টি সবসময় প্রয়াসের মৎস্য ইউনিটের লোকজন তদারকি করছেন। তিনি বলেন, ছোট্ট জায়গায় শুরু করে কয়েক মাসে ৫০-৬০ হাজার টাকা আয় হলে বড় পরিসরে করলে নিশ্চয় আয় আরো বাড়বে। তাই আগামীতে তার ১০ শতক জায়গায় বড় পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে বাহারি মাছ চাষ করবেন বলে জানান তিনি।
প্রয়াসের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ইউনিটের মৎস্য কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক ও প্রোগ্রাম অ্যাসিস্টেন্ট (টেকনিক্যাল) জুবাইদুর আলম জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রথমে জোসনা বেগমকে আমরা বাহারি মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করি। প্রতিষ্ঠানের খরচে তার বাড়ির পাশে ছোট্ট একটি জায়গায় মাছ চাষের জন্য ৪টি ডিচ খনন করানো হয়। এরপর তাকে গোল্ডফিশ, কৈ কার্প, কমেট কার্প, মলি, ব্ল্যাক মলি, রেড মলি, রেড টিগার, জেলি বামসহ বাহারি জাতের ১৩০টি মাছ ও খাবার সরবরাহ করি। তারা আরো জানান, প্রয়াসের বাস্তবায়নে জোসনা বেগমের বাহারি মাছ চাষে সহযোগিতা দিচ্ছে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)।
প্রয়াসের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক ফারুক আহমেদ জানান, বাহারি মাছও যে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যায়, সে লক্ষে কাজ পিকেএসএফের সহযোগিতায় কাজ করে যাচ্ছে প্রয়াস। এর ফলে একদিকে কিছু মানুষ স্বাবলম্বী হতে পারছেন, অন্যদিকে স্থানীয় পর্যায়ে স্বল্প মূল্যে মানুষ বাহারি মাছ কিনতে পারছেন। তিনি আরো বলেন, এ মাছ চাষে অল্প বিনিয়োগেই অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। প্রয়োজন যথাযথ পরিচর্যা।