বাংলাদেশের জন্য শুভ কামনা ঋতুপর্ণার
গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক থেকে এপারের দর্শকের কাছের মানুষ ওপারের ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। এ সপ্তাহেই ঢাকা আসার কথা ছিল তাঁর। তবে শিডিউল পিছিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে হোয়াটসঅ্যাপে অভিনেত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন সংবাদ মাধ্যম। আপাতত বাংলাদেশ নয় রাশিদ পলাশের ‘তরী’ ছবির শুটিংয়ে অংশ নেওয়ার কথা ছিল ৭ সেপ্টেম্বর থেকে। তবে শিডিউলে পরিবর্তন এনেছেন ঋতু। শুধু তাই নয়, পরিচালককে কলকাতা ডেকেছেন। ঋতু বলেন, ‘৭ সেপ্টেম্বরের শুটিংটা পিছিয়েছি নানা কারণে। রাশিদ পলাশকে কলকাতা আসতে বলেছি। নতুন শিডিউল নিয়ে কথা বলব তাঁর সঙ্গে। গল্পেও কিছু পরিবর্তন করার কথা বলেছিলাম। সেটা কোন পর্যায়ে আছে তা-ও দেখতে হবে। আমি এখন যুক্তরাষ্ট্রে আছি। পলাশকে বলেছি, সামনের সপ্তাহে কলকাতা ফিরব।’ বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘স্বামী কেন আসামী’ (১৯৯৭) দিয়ে এপারে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। এরপর বাংলাদেশের বেশ কিছু ছবি করেছেন। বেশির ভাগই ব্যবসাসফল। ফলে এ দেশের মানুষের প্রতি তাঁর আলাদা একটা ভালোবাসা আছে। সব খবরাখবরই রাখেন। জানালেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের খবর জানতে টিভি চ্যানেলের সামনে বসে থাকতেন। ঋতু বলেন, ‘যখন দেখতাম আগুন জ¦লছে, মানুষ মরছে-খুব কষ্ট লাগত। বাংলাদেশের বন্ধুদের ফোন দিতাম। তারা কেমন আছে জানতে চাইতাম। এখন তো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসেছে। আশা করছি দ্রুত আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বাংলাদেশ। হাসিখুশি বাংলাদেশকে দেখতে পাব। শুভ কামনা রইল।’ ঋতুপর্ণার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাংলাদেশের সাবেক সংসদ সদস্য ও অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ। ওপারে প্রায় অর্ধশত ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেছেন তাঁরা। বন্ধুত্বটা সেখান থেকেই। বাংলাদেশে এলে ফেরদৌসের বাড়িতে একবার হলেও যেতেন ঋতু। তেমনি ফেরদৌসও কলকাতায় গেলে উঠতেন বন্ধুর বাড়িতে। তবে এক মাস ধরে আর ফেরদৌসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি ঋতু। প্রায়ই হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফোন দেন। কিন্তু বন্ধ পান। প্রিয় বন্ধুকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ঋতু। বলেন, ‘প্রত্যেকের আলাদা আলাদা রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করার অধিকার আছে। ফেরদৌসও সেভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে, সংসদ সদস্য হয়েছে। তবে ব্যক্তি ফেরদৌস খুব নরম মানুষ। অসাধারণ তার ব্যক্তিত্ব। যারা তাকে কাছ থেকে দেখেছেন, এটা স্বীকার করবেন। আমি জানার বহু চেষ্টা করেছি সে এখন কেমন আছে, কোথায় আছে। কেউ যদি আমাকে জানাতে পারেন চিন্তামুক্ত হতাম। ওর জন্য খুব কষ্ট পাচ্ছি।’ আরজি কর হাসপাতালে তিলোত্তমাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গে ৯ আগস্ট থেকে চলছে তুমুল আন্দোলন। এই আন্দোলন এখন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা ভারতে। অভিনেত্রী ঋতুও প্রথম দিন থেকেই এই আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে আসছেন। নেমেছেন রাস্তায়ও। ‘একজন মেয়ে নিজের কর্মস্থলে কেন নিরাপদ থাকবে না! এই বর্বর কর্মকা-ের বিচার অবশ্যই হতে হবে। আমি প্রতিবাদ স্বরূপ শাঁখ বাজিয়েছিলাম বলে ট্রলড হয়েছিলাম। তাতে কিছু মনে করিনি। আমাকে আরো অপমান করলেও বিচারের দাবি থেকে এক পা সরব না’, বলেন ঋতুপর্ণা। কেমন আছে টালিগঞ্জ? ‘থেমে থেমে চলছে’, ঋতুর উত্তর। বেশ কয়েকটি নতুন ছবির শুটিং শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেগুলো হচ্ছে না। ইন্ডাস্ট্রির বেশির ভাগ মানুষই এখন আরজি কর আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। কাজের দিকে নজরও নেই তাঁদের। ঋতু বলেন, ‘আমাদের এখানকার মানুষের মন ভালো নেই। আসলে তিলোত্তমার সঙ্গে যেটা ঘটেছে, সেটা আমার-আপনার যে কারো সঙ্গে বা যে কারো পরিবারের সঙ্গেও ঘটতে পারত। এই একটি ঘটনা পুরো ভারত নাড়িয়ে দিয়েছে। এর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত কাজে ফেরার মনমানসিকতা কারো হবে বলে মনে হয় না।’