Last Updated on মে ১৯, ২০২৪ by
বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে উপেক্ষা করে দেশ ধ্বংস করবেন না : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশ ও জনগণকে বাঁচাতে এবং শিল্পায়নকে পরিবেশবান্ধব করতে শিল্প-কারখানা নির্মাণে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘শিল্প আমাদের গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু শিল্প বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অবশ্যই সকলকে করতে হবে এবং সেটা মেনে নিতে হবে। সামান্য একটু কেমিকেল ব্যবহারের ওই পয়সাটা বাঁচাতে যেয়ে দেশের সর্বনাশ, সাথে সাথে নিজের সর্বনাশটা কেউ করবেন না- সেটা আমার অনুরোধ থাকল।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘১১তম জাতীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প পণ্য (এসএমই) মেলা-২০২৪’ এর উদ্বোধনকালে দেওয়া প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
আমাদের দেশ ‘ভৌগোলিক সীমারোখায় ছোট এবং জনসংখ্যার দিক দিয়ে বড়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের দেশের পরিবেশ ও সবকিছু অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হওয়া উচিত। স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া উচিত। সাথে সাথে জলবায়ুর অভিঘাতে যেন আমরা ক্ষতিগ্রস্ত না হই, সেদিকে সকলকে দৃষ্টি দিতে হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা আমাদের শিল্প খাতকে আরো পরিবেশবান্ধব করতে চাই। কারণ শিল্প খাত একান্তভাবে পরিবেশবান্ধব হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, যারা যেখানেই কোনো শিল্প গড়ে তুলবেন সেখানে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন আপনার এই শিল্পের এই বর্জ্য যেন নদীতে না পড়ে, আমাদের পানি যেন কোনোভাবে দূষণ না হয়, মাটিতে দূষণ যেন না হয়। সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য আমি বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি খুব আনন্দিত কেননা আজকের এসএমই পণ্য মেলায় দেখা যাচ্ছে উদ্যোক্তা ৬০ শতাংশই নারী।
তিনি নারীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সমাজের একটা অংশকে বাইরে রেখে সেই সমাজ কখনো এগিয়ে যেতে পারে না। আমাদের দেশের নারী-পুরুষ সকলকেই যদি আমরা উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে পারি তাহলে সমানভাবে দেশটা দ্রুত উন্নত হবে। এজন্য নারী উদ্যোক্তা আমাদের দরকার।
যেহেতু শিল্প মন্ত্রণালয় এবং এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে নারী উদ্যোক্তাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে সেক্ষেত্রে পুরুষরা ঘরের নারীদের (স্ত্রী-কন্যা-বোন) নামে, তাদের সঙ্গে নিয়ে এখানে যুক্ত হতে পারেন বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘কেননা অন্যত্র তো আর ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাওয়া যাবে না। কাজেই পুরুষরা বিশেষ করে আমাদের যুবসমাজ এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেন। কারণ আমরা চাই আমাদের শিল্প খাতে আরো উদ্যোক্তার সৃষ্টি হোক।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৭-০৮ অর্থবছরের জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ছিল ১৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ সেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে ৩৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে এবং অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৯৬ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। যা বিএনপির শাসনামলে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল মাত্র ৫৪৩ মার্কিন ডলার।
কোভিড-১৯ অতিমারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে ঘিরে স্যাংশন ও পাল্টা স্যাংশনের বিরূপ প্রভাবে বিশ^ অর্থনীতির মন্দাভাবে মূল্যস্ফীতি না ঘটলে এটাকে আরো উন্নতি করা যেত বলেও তিনি অভিমত দেন। এর সঙ্গে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনকে গণহত্যা হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার-২০২৩’ বিজয়ী সাতজন মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তার হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন।
শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা ও এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ড. মো. মাসুদুর রহমান। ২০২৩ সালের জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী এসএমই উদ্যোক্তাদের পক্ষে ‘রংপুর ক্রাফটস’র স্বত্বাধিকারী স্বপ্না রানী সেন অনুষ্ঠানে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী শিল্প মন্ত্রণালয় প্রণীত ২০২৪ থেকে ২০২৮ কর্মপরিকল্পনার ওপর রচিত একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানে ‘এসএমই মেলা ২০২৪’ এর ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। উদ্বোধনী পর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রী মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
এবারের মেলায় অংশ নেয়া সাড়ে তিনশোর বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান, যাদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা। এছাড়া ৩০টি ব্যাংক, ১৫টি সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় বিজনেস ক্লাবসহ আরো প্রায় ৫০টি উদ্যোক্তা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশগ্রহণ করছে।
আগামী ২৫ মে পর্যন্ত চলমান এই মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।