বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

Last Updated on আগস্ট ২৭, ২০২৪ by

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫৬ লাখ মানুষ মারা গেছে ২৭ জন : উপদেষ্টা

দেশে চলমান বন্যায় ১১ জেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৫ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত মারা গেছে ২৭ জন।
মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম এ তথ্য জানান।
ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, এখন পর্যন্ত বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১১টিই আছে। ১১ জেলায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৫ জন। পানিবন্দি পরিবার ১২ লাখ ৭ হাজার ৪২৯টি। ৭৪ উপজেলা বন্যা প্লাবিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন / পৌরসভা ৫৪১টি।
তিনি বলেন, মৃতের সংখ্যা ২৭ জন। এর মধ্যে কুমিল্লায় ১০ জন, ফেনীতে ১ জন, চট্টগ্রামে ৫ জন, খাগড়াছড়িতে ১ জন, নোয়াখালীতে ৫ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১ জন, লক্ষ্মীপুরে ১ জন এবং কক্সবাজারে ৩ জন। এছাড়া মৌলভীবাজারে ২ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
ফারাক্কা ব্যারেজের ১০৯টি গেট খুলে দেওয়ায় নতুন কোনো এলাকা প্লাবিত হয়েছে কিনাÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ত্রাণ উপদেষ্টা বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের যা জানা আছে, নতুন কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি।
দেশের ১১ জেলার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ফারুক ই আজম বলেন, সব জায়গায় ত্রাণ পৌঁছাতে পেরেছি। অধিকাংশ এলাকায় পানি নেমে যাচ্ছে। যেসব এলাকা নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে, সেগুলো রানিং পানি দ্রুত নেমে যাবে বলে আশা করছি। ত্রাণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারব। জনগণের স্বেচ্ছাসেবা ও মানুষের উদ্যম আমাদের শক্তি জোগাচ্ছে।
ত্রাণ বিতরণের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার সবাইকে সমন্বিত করে ত্রাণের কাজ করছে। যেসব এলাকা থেকে পানি নেমে যাচ্ছে সেখানে যাতে ত্রাণ পরিবহন করা যায় সেই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আরো দুর্গম এলাকায় সেনাবাহিনী ও অন্যান্য বাহিনী হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত দূরবর্তী সব উপজেলায় ত্রাণ পৌঁছানো গেছে। উপজেলা স্তরে ত্রাণ মজুত করা গেছে এবং চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা গেছে। ক্রমান্বয়ে এগুলো ধারাবাহিকভাবে হচ্ছে।
উপদেষ্টা জানান, ১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে মোট ৬২০টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে। সব বাহিনীর সহায়তায় ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। সরকার সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে। সব জেলা ও উপজেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুত রয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা জানান, বন্যাদুর্গত এলাকার কয়েক জায়গায় ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত আছে। সেনাবাহিনী ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসকরা সেখানে সেবা দিচ্ছেন। পাশাপাশি স্থানীয় ক্লিনিক, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্যার্তদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা নির্দেশনা দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, বন্যার্তদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ছয় দিনে নগদ পাওয়া গেছে ৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকার বেশি। এর মধ্যে ৬০ লাখ টাকার বেশি এসেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।
এছাড়া দেশের বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সরকারি-বেসরকারিসহ সব পর্যায় থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোর জেলা প্রশাসকদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, মেডিকেল টিম ও অন্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোতে মোবাইল ও টেলিফোন যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল রুম সার্বক্ষণিক খোলা রয়েছে। তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ০২৫৫১০১১১৫ নম্বর চালু রয়েছে।
এছাড়া সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য-সহায়তা দিতে চাইলে আগ্রহী ব্যক্তিরা প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের অ্যাকাউন্টে অর্থ সহায়তা পাঠাতে পারেন। হিসাবের নাম : ‘প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল’, ব্যাংক : সোনালী ব্যাংক করপোরেট শাখা, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, হিসাব নম্বর : ০১০৭৩৩৩০০৪০৯৩।
এছাড়াও যারা ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে সহায়তা (চেক / পে-অর্ডার / ব্যাংক ড্রাফ্টের মাধ্যমে) দিতে চান, প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই সহায়তা গ্রহণ করবেন।
যারা ত্রাণ তহবিলে সহায়তা (চেক / পে-অর্ডার / ব্যাংক ড্রাফ্টের মাধ্যমে) দিতে ইচ্ছুক তাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব অঞ্জন চন্দ্র পাল (মোবাইল ০১৭১৮-০৬৬৭২৫) বা সিনিয়র সহকারী সচিব শরিফুল ইসলাম (মোবাইল ০১৮১৯-২৮১২০৮) এর সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা যাচ্ছে।

About The Author

শেয়ার করুন