সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৯ শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

Last Updated on এপ্রিল ১১, ২০২৫ by

বদলে গেল মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম : নতুন নাম ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’

বাঙালি জাতির ঐতিহ্যগত প্রধান উৎসব পহেলা বৈশাখের অন্যতম একটি আয়োজন মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবার ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার’ নাম পরিবর্তন করে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ রাখা হয়েছে। শুক্রবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ওসমান জামান মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। নতুন নাম ঘোষণা করেন চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজাহারুল ইসলাম শেখ। এসময় উপস্থিত ছিলেন— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা অন্যরা।
লিখিত বক্তব্যে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম বলেন, এবারের আয়োজনটি একটু ভিন্ন। বাক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা এবং মননের মুক্তির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে অন্ধকার থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার বার্তা দিতে হবে। এবারের নববর্ষের আয়োজন সব অন্যায্যতাকে বিনাশ করে ন্যায্য ও সততাকে নবআলোর গতিধারায় ঐক্যবদ্ধ করবে গোটা সমাজকে। তিনি বলেন, চারুকলা ১৯৮৯ সাল থেকে পয়লা বৈশাখে শোভাযাত্রা করে আসছে। শুরুতে নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে অমঙ্গলকে দূর করে মঙ্গলের আহ্বান জানিয়ে শোভাযাত্রার নামকরণ হয় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে।
সম্মেলনে চারুকলার অধ্যাপক এম কাউসার হাসান জানান, এবারের শোভাযাত্রায় বড় কয়েকটি প্রতিকৃতির মধ্যে থাকবে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, ইলিশ মাছ, বাঘসহ ছোট ছোট প্রতিকৃতি।
উল্লেখ্য, এবারের পহেলা বৈশাখ দু’দিনব্যাপী উদযাপিত হবে। এবারের বর্ষবরণের স্লোগান ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। নববর্ষের উৎসবে পহেলা বৈশাখের সঙ্গে থাকছে চৈত্র সংক্রান্তির আয়োজনও।
জানা গেছে, এবার বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় থাকছে ৭টি বড় মোটিফ। সেখানে রয়েছে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, মুগ্ধের পানির বোতল, কাঠের বাঘ, ইলিশ মাছ, পালকি, শান্তির প্রতীক পায়রা। মাঝারি মোটিফ রয়েছে ৭টি। সেখানে রয়েছে, সুলতানি ও মুঘোল আমলের মুখোশ ১০টি, রঙিন চরকি ২০টি, তালপাতার সেপাই ৮টি, তুহিন পাখি ৫টি, পাখা ৪টি, ঘোড়া ২০টি, লোকজ চিত্রাবলীর ক্যানভাস ১০০ ফুট। ছোট মোটিফ রয়েছে ৭টি। সেখানে রয়েছে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি ৮০টি, বাঘের মাথা ২০০টি, পলো ১০টি, মাছের চাই ৬টি, মাথাল ২০টি, লাঙল ৫টি, মাছের ডোলা ৫টি। এছাড়াও চারুকলার সম্মুখভাগের দেয়ালে আঁকা হয়েছে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী শখের হাঁড়ির মোটিফ অবলম্বনে চিত্রাঙ্কন, জয়নুল শিশু নিকেতন দেয়াল সাঁওতালদের ঐতিহ্যবাহী মাটির দেয়াল অঙ্কনরীতি অবলম্বনে চিত্রাঙ্কন।
তরমুজ ফিলিস্তিনিদের কাছে ‘প্রতিরোধ ও অধ্যবসায়ের প্রতীক’। ইসরায়েলের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও মূলত এটি তাদের পতাকা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর কারণ হলো, ফলটির বাইরের অংশের রঙ সবুজ। আর ভেতরের অংশগুলোর রঙ লাল, সাদা ও কালো। এ রঙগুলো ফিলিস্তিনের পতাকার রঙের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এবারের শোভাযাত্রায় অন্যান্য মোটিফের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মুসলমানদের লড়াই ও সংগ্রামের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে তাদের প্রতীক হিসেবে তরমুজের মোটিফ সামনে আনা হয়েছে। শোভাযাত্রায় থাকবে ঐতিহ্যবাহী পিস্টন বাঁশি, বাংলা ঢোল ও করনেট বাঁশি সহযোগে ৩০ জন শিল্পীর সম্মিলিত বিন্যাসে দেশাত্মবোধক গান; চারুকলার অভ্যন্তরে নাগর দোলা, চরকি, পুতুল নাচ, বায়স্কোপ, বৈশাখী খাবারের দোকান। শোভাযাত্রার মুকুট থাকছে ৫ হাজার। শোভাযাত্রার ব্যানার হবে একটি। যার আকার হবে ২৫ ফুট বাই ৩ দশমিক ৫ ফুট। পহেলা বৈশাখের দ্বিতীয় দিন চারুকলার বকুলতলায় রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে যাত্রাপালা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান। মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেছেন, ‘আমরা নাম পরিবর্তন করছি না। আমরা পুরোনো নাম এবং ঐতিহ্যে ফেরত যাচ্ছি, যেটা দিয়ে চারুকলার এই কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।’
উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান আরো বলেন, এই শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্যে দুটো বার্তা আছে। একটি হচ্ছে, একটি নিবর্তনমূলক স্বৈরাচারীব্যবস্থার অবসান। রাজনৈতিক ও সামাজিক নিবর্তনমূলক স্বৈরাচারীব্যবস্থার বিরুদ্ধে মানুষের যে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ, সেই বিষয়টি তুলে ধরা। কিছু মোটিফ সেই কাজটি করছে। আর দ্বিতীয় যে অংশটি আছে, সেটি হচ্ছে মূলত ঐক্যের ডাক, সম্প্রীতির ডাক।
নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই শোভাযাত্রায় এই দুটো বার্তাকে তাঁরা একসঙ্গে দিতে যাচ্ছেন।

About The Author

শেয়ার করুন