চাঁপাইনবাবগঞ্জে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ ৭৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে বাইসাইকেল বিতরণ করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফ’র ‘আর্থ-সামাজিক ও মানব সক্ষমতা বৃদ্ধি কার্যক্রম’র আওতায় সাইকেলগুলো বিতরণ করে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি।
সদর উপজেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ অনগ্রসর সুবিধাবঞ্চিত অতিদরিদ্র পরিবারগুলোর শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতের সুবিধার লক্ষে এবং শিক্ষার প্রতি আগ্রহ, ঝরে পড়া ও বাল্যবিয়ে রোধে সাইকেলগুলো বিতরণ করা হয় বলে আয়োজক সংস্থা প্রয়াস জানিয়েছে। এই ৭৫ শিক্ষার্থী হলেন- সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের নাধাই কৃষ্ণপুর, দেলাবাড়ী ও গনসাপাড়ার বাসিন্দা। এদের মধ্যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৪১ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সাইকেল বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক একান্ত সচিব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব বর্তমানে পিকেএসএফ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. নমিতা হালদার।
জেলাশহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে জেলা প্রশাসন আয়োজিত তিন দিনের বর্ণিল অনুষ্ঠানের শেষ দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে সাইকেল তুলে দেন অনুষ্ঠানের সভাপতি জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রয়াসের নির্বাহী পরিচালক হাসিব হোসেন।
ড. নমিতা হালদার
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
পিকেএসএফ
সত্যিকার অর্থে স্বপ্ন যখন সত্যি হয় তখন আনন্দের সীমা থাকে না। এই স্বপ্নটি আমি দেখেছিলাম গত ১৬ জানুয়ারি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে গিয়ে। আজকে তা সফলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। সেদিন একজন ক্ষুদ্র আদিবাসী একটি মাত্র আবেদন করেছিলেন যে, তিনি শিক্ষা চান। তিনি চেয়েছিলেন এই ছেলেমেয়েরা যেন প্রাইমারি স্কুল অতিক্রম করার পরে ঝরে না পড়ে। বাল্যবিয়ের শিকার না হয়, শিশুশ্রমে নিয়োজিত না হয়। তার একটি দাবি ছিল যে, আমাদের স্কুলের ব্যবস্থা করে দিন বা কিছু সাইকেলের ব্যবস্থা করে দিন।
আমরা যে কয়জনের (শিক্ষার্থীর) তালিকা পেয়েছি তার মধ্য থেকে ৭৫ জনকে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) পক্ষ থেকে আজকে সাইকেল দিতে পেরেছি। আমি ছেলেমেয়েদের সুন্দর ভবিষ্যৎ, সুন্দর দিন, সুন্দর সময় কাটুক সে আশা করি।
আমি জেলা প্রশাসকের নিকট অনুরোধ জানাব, প্রতি আড়াই কিলোমিটারের ব্যবধানে স্কুল থাকার কথা, সেখানে কেন এই নাধাই গ্রামে একটিও হাই স্কুল নাই- এই বিষয়টি দয়া করে দেখবেন। আমরা কাউকে পিছিয়ে রেখে শুধুমাত্র কতিপয় মানুষকে তো এগিয়ে নিয়ে যেতে পরব না। সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সেটি আমাদের লক্ষ।
আমি বলব, ঝিলিম ইউনিয়নের আমনুরা বাজারে হরিজন পল্লীর ৪২টি পরিবার বসবাস করেন এবং এই পরিবারগুলোর জন্য মাত্র ২টি টয়লেট রয়েছে। তাদের দুরবস্থা দূর করতে পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা জরুরি।
আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি পিছিয়েপড়া এলাকার ছেলেমেয়েরা সারিবদ্ধভাবে সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মনে অনেক স্বপ্ন। তারা আর স্কুল যাওয়া থেকে পিছিয়ে থাকবে না। তারা গ্রাম থেকে শহরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা একটা আলোকিত জীবনের সন্ধান পাবে। এই রকম সুযোগ করে দেয়ার জন্য প্রয়াসকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আবদুল ওদুদ
সাবেক সংসদ সদস্য
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩
আসলে আমরা যা কিছু দেখি বা যা কিছু শুনছি সবকিছু আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদান। শুধু দলিত জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরাই নয়, সকলের জন্য কাজ করছেন আমাদের প্রধামন্ত্রী।
আমার সংসদীয় আসনের শেষ সীমানা ছিল দেলবাড়ী গনসাপাড়া নাধাইকৃষ্ণপুর এলাকা। সেখানকার আংশিক রাস্তা পাকা হয়েছে। সেই গনসাপাড়া ছেলেমেয়েদের জন্য আজকে পায়ে হাঁটার জায়গায় আমার এলাকার ছেলেমেয়েদের সাইকেল প্রদান করা হচ্ছে পিকেএসএফ এবং প্রয়াসের মাধ্যমে। এটা অত্যন্ত খুশির খবর। এজন্য তাদের ধন্যবাদ।
এ কে এম গালিভ খান
জেলা প্রশাসক
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রধান অতিথি (ড. নমিতা হালদার) যেটা বলেছে, সেটা আমরা দেখব এবং ৪২টি (আমনুরা হরিজন পল্লীর) পরিবারের পানীয় জলের সুব্যবস্থা, স্যানিটেশন এবং মানবিক অধিকার আমরা নিশ্চিত করব। জাতি ধর্ম বর্ণ কোনো কিছুর ভেদ নেই, সেহেতু সকলে মিলেমিশে কাজ করব। প্রান্তিক মানুষের সাথে কাজ করার জন্য এবং তাদের পাশে দাঁড়াবার জন্য আমি সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
আজ যারা সাইকলে পেল, এই ছেলেমেয়েরা শুধু স্কুল-কলেজেই যাতায়াত করবে না, এটি হয়ে উঠবে তাদের প্রতিবাদের প্রতীক। কোথাও কোনো অনিয়ম হলে তারা রুখে দাঁড়াবে। এই ছেলেমেয়েরা অবশ্যই একদিন আমাদের আশার আলো দেখাবে।
২০৩০ সালের যে এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট), সেটি তাদের হাত ধরেই আমরা বাস্তবায়ন করব। আমরা প্রান্তিক মানুষের সাথে কাজ করি, তাদের পাশে দাঁড়িয়ে এই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই।
হাসিব হোসেন
নির্বাহী পরিচালক
প্রয়াস
আমরা এক লাখ পরিবারের সাথে কাজ করে থাকিÑ এটা আমাদের প্রয়াসের এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের গর্ব। ভৌগোলিক জায়গা থেকে পুরো চাঁপাইনবাবগঞ্জকে আমরা ছড়িয়ে দিতে চাই প্রয়াসের মাধ্যমে।
আমরা শিক্ষা কার্যক্রম এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আজকে আমরা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ অনগ্রসর সুবিধাবঞ্চিত অতিদরিদ্র পরিবারগুলোর শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতের সুবিধার লক্ষে এবং শিক্ষার প্রতি আগ্রহ, ঝরে পড়া ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে আমরা মোট ৭৫টি বাইসাইকেল বিতরণ করছি। এই আজকের আয়োজনটি পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে, তারই অংশ হিসেবে আমরা এই গর্বের অংশ হতে পারলাম। এজন্য আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি পিকেএসএফের প্রতি, পিকেএসএফ বোর্ডের প্রতি।
আমরা পিকেএসএফের মাধ্যমে চার বছরে ১৮৭ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি হিসেবে তাদের মধ্যে ২২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বিতরণ করেছি। প্রয়াস বঙ্গবন্ধু উচ্চ শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে। এরই মধ্যে ৩ জনকে ১ লাখ ৮ হাজার টাকার বৃত্তি দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি প্রয়াসের কার্যক্রম পরিদর্শনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এসেছিলেন ড. নমিতা হালদার। সেই সময় তিনি সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত নাধাই কৃষ্ণপুর গ্রামে গেলে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৮-১০ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় সেখানকার শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছেন বলে জানতে পারেন। সেই সময় তিনি যাতায়াতের কারণে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া এবং ঝরে পড়ার দরুন কোনো নারী শিক্ষার্থী যেন বাল্যবিয়ের শিকার না হয় তা প্রতিরোধে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির মাধ্যমে চেষ্টা করবেন বলে জানান। তার সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে সোমবার এই ৭৫টি সাইকেল বিতরণ করা হয়।