প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৫ শতাংশে রাখল চীন

2

চলতি বছর চীন তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের আশপাশে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বলে দেশটির সরকারি কাজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। গতকাল রোববার চীনের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের (এনপিসি) অধিবেশনের উদ্বোধনী দিনে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। প্রতিবেদনে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী লি কুছিয়াং বলেছেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া অপরিহার্য। তিনি এ বছর চীনের শহরগুলোতে এক কোটি ২০ লাখের মতো চাকরি সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রার কথাও জানান, গত বছর যা ছিল এক কোটি ১০ লাখ। গত বছর চীনের জিডিপি বেড়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। তিন বছরের কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ, রিয়েল এস্টেট খাতে সংকট, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ওপর তুমুল চাপ সৃষ্টি এবং চীনা রপ্তানি পণ্যের চাহিদা কমতে থাকায় কয়েক দশকের মধ্যে দেশটি এত খারাপ প্রবৃদ্ধি দেখল।

লি এবার সরকারের বাজেট ঘাটতিও জিডিপির ৩ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ দশমিক ৮ শতাংশ। বেইজিং যখন নানান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এবং কোভিডে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ খুঁজছে তখন এবারের এনপিসির অধিবেশনে কয়েক দশকের মধ্যে চীন সরকারের ভেতর সবচেয়ে বড় রদবদলও দেখা যাবে। লি এবং তার মতো সংস্কারমুখী অর্থনৈতিক নীতির পক্ষের অনেক কর্মকর্তাই এই অধিবেশনে দায়িত্ব ছাড়তে যাচ্ছেন, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কাছের লোকজনকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বসার পথ করে দিচ্ছেন।

এর মাধ্যমে গত বছর অক্টোবরে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে রেকর্ড ভেঙে তৃতীয় মেয়াদের জন্য দলের নেতৃত্ব নেওয়া শি’র প্রভাব আরও পোক্ত হবে। এবারের অধিবেশনেই ক্ষমতাসীন দলের সাংহাইয়ের সাবেক নেতা লি চিয়াং দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পাবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে; নতুন পদে তার প্রধান কাজই হবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা। এনপিসির অধিবেশনে যেসব সিদ্ধান্ত হয়, তার অনেকগুলো আগেই চীনের ক্ষমতাসীন পার্টির পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটিতে অনুমোদিত হয়ে আসে।

যে কারণে পার্লামেন্টে কেবল আনুষ্ঠানিকতাই থাকে। এবারের অধিবেশনে অংশ নেওয়া প্রতিনিধিরা রাষ্ট্র ও কমিউনিস্ট পার্টির ‘বিস্তৃত’ ও ‘ব্যাপক’ পুনর্গঠন পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা করবেন বলে গত মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিলে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। এই পুনর্গঠনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কাঠামোগুলোতে কমিউনিস্ট পার্টি আরও জেঁকে বসবে বলেই অনুমান পশ্চিমা বিশ্লেষকদের। গতকাল রোববার কুয়াশাচ্ছন্ন দিনে, ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যে রাজধানী বেইজিংয়ের তিয়ানআনমেন স্কয়ারের পশ্চিম পাশে অবস্থিত গ্রেট হল অব দ্য পিপলে জড়ো হওয়া ২ হাজার ৯৪৮ প্রতিনিধিকে নিয়ে এনপিসির অধিবেশন শুরু হয়। দেশজুড়ে বিরল বিক্ষোভের পর ডিসেম্বরে চীন তড়িঘড়ি তাদের ‘শূন্য কোভিড’ নীতি তুলে নেওয়ার পর এটাই এনপিসির প্রথম অধিবেশন।