Last Updated on মে ১১, ২০২৫ by
প্রফেসর এলতাসউদ্দিন আর নেই
দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, গবেষক, লেখক প্রফেসর মুহম্মদ এলতাসউদ্দিন ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রবিবার বেলা ১২টা ৫ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।
মরহুমের ইচ্ছে অনুযায়ী গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার চাঁদলাই গ্রামে বাবার কবরের পাশে দাফন করা হবে বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
মরহুমের ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ ডিপার্টেমেন্টের প্রফেসর মো. আফজাল হোসাইন জানান, আজ রবিবার বাদ এশার বনানী চেয়ারম্যানবাড়ী জামে মসজিদে প্রথম জানাজা, আগামীকাল সোমবার সকাল ৯টায় রাজশাহী টিটি কলেজ মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জস্থ চাঁদলাই গ্রামে বড় মসজিদ প্রাঙ্গণে বাদ জোহর তৃতীয় জানাজা শেষে তাঁর দাফন সম্পন্ন হবে।
১৯৩১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের চাঁদলাই গ্রামে সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এলতাসউদ্দিন। তাঁর পিতা এসাহাক মন্ডল ও মা আফরোজা বেগম। ১৯৪৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে প্রথম হন তিনি।
অত্যন্ত মেধাবী প্রফেসর এলতাসউদ্দিন ১৯৭০ সালে সরকারি কর্ম কমিশনে ইন্টারভিউ দিয়ে সরাসরি উপাধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন এবং রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং কলেজে যোগদান করেন। এক বছরের মাথায় তিনি অধ্যক্ষ হয়ে দীর্ঘ ১১ বছর অতিবাহিত করেন। তিনি ১৯৮২ হতে ১৯৮৩ পর্যন্ত প্রায় দেড় বছর যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। সেখান থেকে বদলি হয়ে ঢাকায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হন। সেখানে তিনি দীর্ঘ পৌনে পাঁচ বছর চাকরি করেন। ১৯৮৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন সেখান থেকেই।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে প্রফেসর মুহম্মদ এলতাসউদ্দিন ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অনুষদের ডিন, বাংলাদেশ বিজ্ঞান শিক্ষা সমিতির সভাপতি, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল, সিন্ডিকেট ও সিনেট সদস্য, খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান, শিক্ষা প্রকল্প ও উন্নয়ন গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট, ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট, বাংলা অ্যাকাডেমির সদস্যসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
বিশিষ্ট এ শিক্ষাবিদ গবেষক লেখক শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিভিন্ন বই রচনাসহ অনেক পাঠ্যপুস্তক সম্পাদনা করেছেন। তিনি সি-ইন-এড, বি.এড. শ্রেণীর বেশ কিছু পাঠ্যপুস্তক রচনা ও সম্পাদনাও করেছেন। কয়েকটি বই অনুবাদও করেছেন তিনি।
এলতাসউদ্দিন রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে- উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাপনা (২০০২), শিক্ষা-সংস্কৃতি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০০৭), যাঁদের সান্নিধ্যে ধন্য হয়েছি (২০০৮), আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধ (২০০৯), দাদীর আমলের কথা (২০১০), বাবার আমলের কথা (২০১২), চাঁপাইনবাবগঞ্জ পরিচিতি ও লোক সংস্কৃতি (২০১২), নির্বাচিত প্রবন্ধ (২০১৩) এবং বিংশ শতাব্দীর চিকিৎসা বিজ্ঞান (২০১৪)। এছাড়াও রয়েছে অপ্রকাশিত অনেক লেখা।