প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে, তার অনুসন্ধান হবে এবং তা দুদকের মাধ্যমে করা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার প্রায় সবগুলোই এন্টি করাপশন কমিশনের আওতায়। তাহলে আপনারা বুঝতেই পারছেন, কে এটার অনুসন্ধান করবে। বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিরল এক বিবৃতি আসার পর নানামুখী আলোচনার মধ্যে এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, অভিযোগের অনুসন্ধান হবে, সত্যতা পাওয়া গেলে মামলা হবে। তারপর প্রশ্ন আসবে কি ব্যবস্থা নেওয়া যায়। আইন ফলো করলেই হবে। প্রধান বিচারপতি দেশে থাকা অবস্থায় ওইসব অভিযোগ সরকারের হাতে এলেও তাকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হল কেন- এমন প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, আইন অনুযায়ী বিচারপতি সিনহা এখনও প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতি পদটি একটি প্রতিষ্ঠান ও সাংবিধানিক পদ। ফলে তার বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো বা খামখেয়ালি করে কিছু করা সমীচীন হবে না।
আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতি ছুটি নিয়ে ব্যক্তিগত সফরে বিদেশে গেছেন। রাষ্ট্রপতি তার অনুপস্থিতিতে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির কার্যভার দিয়েছেন। এ নিয়ে বিতর্কের কোনো ‘অবকাশ নেই’। একটি রাজনৈতিক মহল কোনো ইস্যু না পেয়ে খড়কুটো দিয়ে বিতর্ক তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যারা এ নিয়ে বিতর্ক করছে, তাদের একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। সেটা হাসিল হয়নি বলেই তাদের এই মায়াকান্না। রাষ্ট্রপতিকে লেখা ছুটির আবেদনে অসুস্থতার কথা লেখার পরও গত শুক্রবার রাতে অস্ট্রেলিয়ার পথে রওনা হওয়ার আগে এক লিখিত বিবৃতিতে নিজেকে ‘সম্পূর্ণ সুস্থ’ বলেন বিচারপতি সিনহা।
তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনায় তিনি ‘বিব্রত’। বিচার বিভাগ যাতে ‘কলুষিত না হয়’, সেজন্য তিনি নিজেই ‘সাময়িকভাবে’ যাচ্ছেন এবং আবার ফিরে আসবেন।
“আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সরকারের একটি মহল আমার রায়কে ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করে পরিবেশন করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি অভিমান করেছেন, যা অচিরেই দূরীভূত হবে বলে আমার বিশ্বাস।”
সুস্থতা নিয়ে প্রধান বিচারপতির ওই বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে আইনমন্ত্রী বলেন, “আমি তার বক্তব্যে হতভম্ব। তিনি রাষ্ট্রপতিকে লিখেছেন তিনি অসুস্থ, অথচ সাতদিন পরে বলছেন সুস্থ। আসলে যখন প্রথমে বললেন, তখনই ডাক্তারি পরীক্ষা করা দরকার ছিল, কিন্তু তা হয় নাই।”
প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ প্রমাণিত হলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে হবে কি না- সেই প্রশ্ন সংবাদ সম্মেলনে করেন একজন সাংবাদিক।
জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এ ক্ষেত্রে একটা শূন্যতা আছে, তবে রাষ্ট্রপতির নিজস্ব কিছু ক্ষমতা আছে। অভিযোগের অনুসন্ধান হবে, তারপর আইনে যেভাবে আছে সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।