চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, আমি এর আগেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এসেছি। কিছুদিন আগেই যুবলীগের সম্মেলনে এসেছিলাম। আমি যদি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ বা ছাত্রলীগের কোনো প্রোগ্রামে যাই তাহলে সেখানকার ভেতরের খবরটা নেয়ার চেষ্টা করি। সেখানকার আওয়ামী লীগের হৃৎপিন্ডের ভেতরটা কেমন আছে তা জানার চেষ্টা করি। আমি এর আগে জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গেও বৈঠক করেছি। আজকে আমরা কিছু নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শুনলাম। কিন্তু যদি এটা ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের কথা শোনার সময় থাকত তাহলে আমরা এ জেলার নেতৃবৃন্দের অনেক ভেতরের কথাগুলো জানতে ও বুঝতে পারতাম। আজকে আপনাদের একটি ফরম পূরণের জন্য দেয়া হয় এবং সেটা পূরণ করে আপনারা জমা দিয়েছেন।
এই ফরম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রীও দেখেন এবং বোঝার চেষ্টা করেন, আমাদের নেতা-কর্মীরা কি পর্যায়ে আছে এবং তাদের অবস্থান এখন কেমন, তারা কি বলতে চাইছে, তাদের সংগঠন কেমন চলছে, তারা কি দেশের উন্নয়নের কথা জনগণের কাছে তুলে ধরছেন। সভানেত্রী দেশের সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের খোঁজ-খবর রাখেন। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সমন্বয় করে কাজ করছেন কিনা সেটারও খোঁজ রাখেন। তিনি নেতা-কর্মীদের কাছে বিভিন্ন বিষয়েও পরামর্শ চান। নারী ও তরুণদের বিকাশে কি করা যায় সেটার পরামর্শও তিনি চেয়েছেন। আজকে আমাদের নেত্রী দিন-রাত পরিশ্রম করে দেশের উন্নয়ন করার চেষ্টা করছেন। আজকে যে ফরমটি পূরণ করে দিলেন সেখানে আপনাদের সাংগঠনিক যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হল। এটার একটা ডাটাবেজ তৈরি হবে। আমাদের দেশ বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশ। তাই ডিজিটাল পদ্ধতিতে সভানেত্রীর সকল ম্যাসেজ একযোগে তৃণমূলের সকল নেতা-কর্মীর কাছে পৌঁছে যাবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মঈনুদ্দীন মন্ডলের সভাপতিত্বে বর্ধিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, প্রফেসর মেরিনা জাহান, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওদুদের সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌসি ইসলাম জেসি, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মু. জিয়াউর রহমান, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বিগ্রেডিয়ার এনামুল হক, সাবেক সংসদ সদস্য মুহা. গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রুহুল আমিনসহ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের অন্য নেতৃবৃন্দ।
জাহাঙ্গীর কবির নানক আরো বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বড় কঠিন সময় পার করে আজকে ক্ষমতায় এসেছে। যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল না, তখন ক্ষমতাসীন দল আমাদের উপর অনেক নির্যাতন করেছে। আমাদের বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছে। তারা জেলখানায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী দিয়ে ভর্তি করেছে। সেই সময় দু:সাহসিক নেত্রী শেখ হাসিনা তখন আমাদেরকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। জনগণের মধ্যে জাতীয় জাগরণের সৃষ্টি করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে আমরা আজকে দেশের উন্নয়নমূলক কাজে নিয়োজিত আছি। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝেও আমাদের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে সোজা করে দাঁড় করিয়েছেন। সভানেত্রী আজকে বাংলাদেশকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
নানক আরো বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি অপশক্তির চাপ রয়েছে। এখানে যদি আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি সবল হয় তাহলে রাজশাহীসহ পুরো এলাকা শান্তিতে থাকে। আমাদের সভানেত্রী আজকে এত পরিশ্রম করছেন এমতাবস্থায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের এমন বিপর্যয় ঘটছে।
এখানে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের আবির্ভাব বেশি আছে বলেও মন্তব্য করেন নানক এমপি। তিনি বলেন, এখানে আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে সমন্বয় নেই। আমরা ইতোমধ্যে অনেক কিছুই উপলব্ধি করেছি। এখানকার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের জাতীয় নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচনে পরাজয়ের বেশ কিছু কারণ উপলব্ধি করেছি। তিনি বলেন, রাজনীতি হবে সমঝোতার শিল্প। আর সেই সমঝোতা শিল্পে যেন ঘুণ না ধরে সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে।
নানক বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ডা. আ.আ.ম. মেসবাহুল হক বাচ্চু ডাক্তার ও মইনুদ্দিন আহমেদ মন্টু ডাক্তারের মতো লোকের জন্ম। যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন। সেখানে এমন পরাজয় হবে সেটা ভাবা যায় না। তিনি বলেন, আমাদের সভানেত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অঙ্গণে এমন একজন নেত্রী যার উপর অনেক বড় আস্থা রয়েছে বিশ্ব বিবেকের। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চাই শক্তিশালী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ। তারা ক্যাসিনো যুবলীগ চাই না। আমাদের প্রত্যেক নেতৃবৃন্দের মাঝে সমঝোতা বিরাজমান থাকবে। তারা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে বুঝে-শুনে কাজ করবে। সকলকেই সমঝোতার সুরে কাজ করার আহŸান জানান তিনি।