রবিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১২ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫ রজব, ১৪৪৬ হিজরি

Last Updated on জুলাই ১২, ২০২৪ by

পেসারদের ছোবলে বিপাকে উইন্ডিজ

ক্যারিয়ারে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে দারুণ ব্যাটিংয়ে নজর কাড়লেন জেমি স্মিথ। সঙ্গে জো রুট ও হ্যারি ব্রুকের ফিফটিতে আড়াইশ রানের বড় লিড পেল ইংল্যান্ড। পরে আলো ছড়ালেন দলটির পেসাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অর্ধেকের বেশি উইকেট তুলে নিয়ে দুই দিনেই জয়ের খুব কাছে পৌঁছে গেছে ইংলিশরা। লর্ডস টেস্টের দ্বিতীয় দিন ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস থামে ৩৭১ রানে। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয়ভাগেও ব্যাটিং ধসে পড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৭৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে দিন শেষ করা সফরকারীরা এখনও পিছিয়ে ১৭১ রানে। ইংলিশ গ্রীষ্মের প্রথম টেস্টটি এবার বিশেষ কারণে আলাদা। এই ম্যাচ দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলবেন টেস্ট ইতিহাসের সফলতম পেসার জেমস অ্যান্ডারসন। বিদায়ী ম্যাচে বিশাল জয়ের সুবাস পাচ্ছেন তিনি। যেখানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে অ্যান্ডারসনেরও। দ্বিতীয় ইনিংসে প্রতিপক্ষের দুটি উইকেট নিয়েছেন এই পেসার। দুটি করে প্রাপ্তি গাস অ্যাটকিনসন ও বেন স্টোকসেরও। দিনের শুরুতে দারুণ ব্যাটিংয়ে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসেন স্মিথ। সাত নম্বরে নেমে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ২ ছক্কা ও ৮ চারে উপহার দেন ৭০ রানের ইনিংস। ৭ চারে ৬৮ রান করেন রুট। ব্রুকের ব্যাট থেকে আসে ১ ছক্কা ও ৫ চারে ঠিক ৫০ রান। লর্ডসের উইকেট এদিনও ছিল কিছুটা মন্থর। শুরুর কঠিন সময়ে দ্রুত রান তোলায় মনোযোগ দেন ব্রুক। ২৫ রান নিয়ে খেলতে নামা ডানহাতি ব্যাটসম্যান ফিফটি পূর্ণ করেন ৫৫ বলে। এর পরপরই আলজারি জোসেফের শর্ট বলে ক্যাচ তুলে দেন তিনি, ভাঙে ৯১ রানের জুটি। দ্বিতীয় দিনে নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই দলকে সাফল্য এনে দেন গুডাকেশ মোটি। বাঁহাতি স্পিনারের টার্ন করে ভেতরে ঢোকা বল বেন স্টোকসের ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে উপড়ে ফেলে মিডল স্টাম্প। হতভম্ব হয়ে ক্রিজে দাঁড়িয়ে থাকেন ৪ রান করা ইংলিশ অধিনায়ক। ১৫ রান নিয়ে দিন শুরু করা রুট ফিফটি স্পর্শ করেন ৮৩ বলে। স্মিথকে নিয়ে দ্রুত ২ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন তিনি। মোটির ঝলকে ভাঙে জমে ওঠা এই জুটি। ক্যারিবিয়ান স্পিনারের আর্ম ডেলিভারি রুটের ব্যাট ফাঁকি দিয়ে ছোবল দেয় অফ স্টাম্পে। কিছুটা অবাক হয়েই যেন ক্রিজ ছাড়েন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ফেরার আগে টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় দশম স্থানে উঠে আসেন রুট। ১৪১ টেস্টে তার রান এখন ১১ হাজার ৮০৪। ৩ উইকেটে ১৮৯ রান নিয়ে দিন শুরু করা ইংল্যান্ডের প্রথম সেশন শেষে স্কোর ছিল ২৯৩/৬। লাঞ্চের পর ক্রিস ওকসকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেন স্মিথ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার পর ওকসের বিদায়ে ভাঙে তাদের ৫২ রানের চমৎকার জুটি। পরের ওভারে গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ পান গাস অ্যাটকিনসন। পরের ওভারেই ফিফটিতে পা রাখেন অভিষিক্ত স্মিথ, ৯৮ বলে। বিশাল দুটি ছক্কা মারেন তিনি শামার জোসেফ ও সিলসকে। মিকাইল লুইয়ের চমৎকার থ্রোয়ে শোয়েব বাশির রান আউটে কাটা পড়লে ব্যাটিংয়ে নামেন বিদায়ী অ্যান্ডারসন। তাকে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানায় পুরো গ্যালারি। কিন্তু শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে স্মিথ ক্যাচ তুলে দেওয়ায় ব্যাটিংয়ের সুযোগই পাননি অ্যান্ডারসন। নিজের কাজ বোলিংয়ে অবশ্য শুরুটা দুর্দান্ত করেন কিংবদন্তি। প্রথম ইনিংসে ক্যারিবিয়ানদের শেষ উইকেটটি নেওয়া এই পেসার এবার প্রতিপক্ষ শিবিরে আঘাত হানেন সবার আগে। তার নিখুঁত লাইন-লেংথের চোখধাঁধানো ইনসুইঙ্গার বল ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের ব্যাট-প্যাড ফাঁকি দিয়ে ছোবল দেয় মিডল স্টাম্পে। ৫ ওভারে ৪ মেডেন ও ২ রান খরচায় এক উইকেট নিয়ে শেষ হয় অ্যান্ডারসনের প্রথম স্পেল। আক্রমণে এসে নিজের তৃতীয় বলেই কার্ক ম্যাকেঞ্জিকে এলবিডব্লিউ করে দেন স্টোকস। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ব্যাটসম্যান। ম্যাকেঞ্জি টেস্টে স্টোকসের দুইশতম উইকেট। এই সংস্করণে ৬ হাজার রান ও দুইশ উইকেট নেওয়া তৃতীয় ক্রিকেটার তিনি। আগের দুইজন হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের গ্যারি সোবার্স। নিজের চতুর্থ ওভারে স্টোকস বিদায় করেন লুইকে। পরের ওভারে অ্যাটকিনসন ভেঙে দেন কেভাম হজের স্টাম্প। নিজের দ্বিতীয় স্পেলে এসে অ্যান্ডারসন কট বিহাইন্ড করে দেন আলিক আথানেজকে। ৫৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কাঁপতে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন জেসন হোল্ডার ও জশুয়া দা সিলভা। অ্যাটকিনসন ৫৯ বলে ২০ রান করা অভিজ্ঞ হোল্ডারকে ফেরানোর পরই দিন শেষের ঘোষণা দেন আম্পায়াররা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ১২১
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ৩৭১ (আগের দিন ১৮৯/৩) (রুট ৬৮, ব্রুক ৫০, স্টোকস ৪, স্মিথ ৭০, ওকস ২৩, অ্যাটকিনসন ০, বাশির ০, অ্যান্ডারসন ০*; আলজারি জোসেফ ১৮-১-১০৬-১, সিলস ২০-৫-৭৭-৪, শামার জোসেফ ১৫.৪-১-৬৮-০, হোল্ডার ১৮-২-৫৮-২, মোটি ১৬-৩-৪১-২, ব্র্যাথওয়েট ২.২-০-৬-০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: ৩৪.৫ ওভারে ৭৯/৬ (ব্র্যাথওয়েট ৪, লুই ১৪, ম্যাকেঞ্জি ০, আথানেজ ২২, হজ ৪, হোল্ডার ২০, জশুয়া ৮*; অ্যান্ডারসন ১০-৫-১১-২, ওকস ৭-৩-১১-০, অ্যাটকিনসন ৭.৫-১-২৭-১, স্টোকস ১০-৪-২৫-২)

About The Author

শেয়ার করুন