রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্টান পেট্রোবাংলা মোট টার্নওভারের বিপরীতে নয়, বরং সরকারি ভর্তুকির টাকায় কর পরিশোধ করতে আগ্রহী। অথচ নিজেদের ব্যবসা থেকেই কর দেয়ার নিয়ম। কিন্তু পেট্রোবাংলা নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন কোম্পানির মোট টার্নওভারের বিপরীতে বছরে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্কের পুরোটাই সরকারের কাছে ভর্তুকি বরাদ্দ হিসেবে দাবি করেছে। সে লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বরাদ্দ চাহিদা উল্লেখ করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে চিঠি দিয়েছে পেট্রোবাংলা। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সম্প্রতি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছে। তাতে বলা হয়- আন্তর্জাতিক কোম্পানির কাছ থেকে বেশি দামে গ্যাস কিনে তা কম দামে সরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিতে বিতরণ করায় পেট্রোবাংলাকে লোকসান গুনতে হয়। চলতি বছরের মার্চ-জুন সময়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ৯ টাকা ৬ পয়সায় কিনে বিক্রি করা হয়েছে ৬ টাকা ৯৬ পয়সায়। ওই হিসাবে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসে পেট্রোবাংলাকে ভর্তুকি দিতে হয়েছে ২ টাকা ১০ পয়সা। এমন অবস্থায় পেট্রোবাংলার পক্ষে গ্যাসের ওপর ৯৩ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক ও ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রদান করা সম্ভব নয়। তবে এনবিআর থেকে ভ্যাট প্রদানে চাপ সৃষ্টি করায় মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের মাধ্যমেই তা পরিশোধ করা সম্ভব হবে।
সূত্র জানায়, আইওসি উৎপাদিত গ্যাস বিতরণের বিপরীতে পেট্রোবাংলার আওতাধীন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের কাছে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাবদ ৩০ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। তবে রাজস্ব বকেয়া পড়ার কারণও চিঠিতে উল্লেখ করেছে পেট্রোবাংলা। তাতে বলা হয়েছে, দেশের গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে প্রথমে আইওসিগুলোকে প্রাপ্য অর্থ পরিশোধ করতে হয়। তাছাড়া আইওসির আয়করও পেট্রোবাংলা পরিশোধ করে। আইওসির গ্যাস ক্রয়-বিক্রয় করে প্রতি মাসে উদ্বৃত্ত থাকে ২০০ কোটি টাকা। পক্ষান্তরে গড়ে প্রতি মাসে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাটের পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট পরিশোধে প্রতি মাসে ঘাটতি হয় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। এমন অবস্থায় প্রতি আড়াই-তিন মাস অন্তর এক মাসের সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট পরিশোধ করছে পেট্রোবাংলা। তহবিল স্বল্পতার কারণে নিয়মিতভাবে পরিশোধ করা যায় না বিধায় ওই খাতে বকেয়া থেকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ভর্তুকি প্রদান করলে বকেয়া সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট পরিশোধ করা সম্ভব হবে।
এদিকে এনবিআর পেট্রোবাংলার দাবিকে অযৌক্তিক বলছে। এনবিআরের মতে, ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক ভোক্তাপর্যায়ের কর হওয়ায় তা পেট্রোবাংলাকেই পরিশোধ করতে হবে। পেট্রোবাংলার বিক্রীত গ্যাসের মধ্যেই ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত থাকায় ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক তাদেরই পরিশোধ করতে হবে। ইতিমধ্যে বকেয়া ও নিয়মিত ভ্যাট প্রদানে কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগসহ নানা সুবিধা দেয়া হয়েছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে ভ্যাট নিয়েই এনবিআরকে তা পরিশোধের নিয়ম।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার কোম্পানি সচিব সৈয়দ আসফাকুজ্জামান জানান, এনবিআরের ভ্যাট নিয়ে কিছু প্রক্রিয়াগত জটিলতায় আছে। ভর্তুকি দিয়ে গ্যাস বিতরণ করে এনবিআরকে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক প্রদান করা পেট্রোবাংলার জন্য কঠিন। এনবিআরের দাবি অনুযায়ী ভ্যাট পরিশোধ করলে বর্তমানে প্রতি মাসেই প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মতো লোকসান থাকবে পেট্রোবাংলার। কোম্পানিগুলোর কাছে টাকা না থাকায় বিষয়টি মন্ত্রণালয়কেই সমাধান করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়জুল্লাহ জানান, ক্রয়মূল্যের চেয়ে বিক্রিমূল্য কম হওয়ায় গত দুই বছরে পেট্রোবাংলার ঘাটতি ৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। যেহেতু পেট্রোবাংলা বেশি দামে গ্যাস কিনে তা কম দামে সরবরাহ করে, তাই আইওসির উৎপাদিত গ্যাসের বিপরীতে নিয়মিত সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট পরিশোধে ভর্তুকি প্রয়োজন।