পুলিশ চলবে কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, এখন থেকে পুলিশ চলবে পুলিশ কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী। পুলিশকে আর লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, ‘এখন থেকে পুলিশ চলবে পুলিশ কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী। আপনি পুলিশ কমিশনকে অর্ডার দেবেন, সেটা তারা ভালো হলে করবে।’
রবিবার দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে এসে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমি খুব স্পষ্টবাদী। এই পুলিশকে ব্যবহার করা হয়েছে লাঠিয়াল বাহিনীর মতো। পুলিশের হাতে প্রাণঘাতী অস্ত্র দেওয়া হয়েছে। পুলিশকে এই অস্ত্র দেওয়া ঠিক হয়নি। এটা যাতে ভবিষ্যতে না হয়। আমি অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় বলছি, রাজনীতিবিদরা আমাকে পছন্দ করুক আর নাই করুক, এখন এদেশে রাজনীতি করা ডিফিকাল্ট হবে। পুলিশকে আপনি লাঠিয়াল বাহিনীর মতো পরিচালিত করতে পারবেন না। আমি জোর দিয়ে বলছি, পুলিশ চলবে পুলিশ কমিশনের অধীনে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে অবস্থা দেখেন প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় শুনি যে, ডাকাতি হচ্ছে। সেনাবাহিনী-বিজিবি কাজ করছে, তবে এটা তদের কাজ না। পুলিশের কাজ সেনাবাহিনী করতে পারে না। তবু সেনাবাহিনী করছে। যারা অন্যায় করেছে, তারা শাস্তি পাবে। পুলিশের অনেকে ডিমোরালাইজড হয়ে গেছে। আপনাকে মনে রাখতে হবে, এই পুলিশকে ব্যবহার করা হয়েছে। তাদের হুকুম দেয়া হয়েছে। তাদেরকে ধরেন, যারা হুকুমদাতা। আমি চেষ্টা করব, যারা হুকুমদাতা ছিল তাদের শাস্তির আওতায় আনতে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরো বলেন, খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, ‘এ রাষ্ট্র কারো ব্যক্তিগত সম্পদ না, কারো ফ্যামিলি প্রোপার্টি না। একটা রাষ্ট্র এভাবে চলে না, একটা রাষ্ট্রের পলিটিকস এমন হয় না। সেটা যেই হোক।’ যার অবদানই থাক। বঙ্গবন্ধুর অবদান ছিল ঠিকই, কিন্তু হাজার হাজার লোক যুদ্ধ করে ৩০ লাখ লোক মারা যাওয়ার পরে এ রাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমগুলো অনেক চাটুকারিতা করেছে। মিডিয়া বারবার বলেছে, কিছুই হয়নি। কিন্তু বিবিসিতে আমি সব দেখেছি। টকশোতে জ্ঞানগর্ভ কোনো আলোচনা হয় না। মিডিয়া সঠিক তথ্য তুলে ধরে না। মিডিয়া সঠিক তথ্য তুলে ধরলে. আজ এত পুলিশ মারা যেত না। একটা দেশ ডুবে, যখন মিডিয়া মিথ্যা প্রচার করে।’
এম. সাখাওয়াত হোসেন আরো বলেন, ‘নতুন করে কাউকে চাটুকারিতা করতে দেওয়া হবে না। মিডিয়া স্বাধীনভাবে কাজ করবে। এরপরও যারা চাটুকারিতা করবে, সেসব মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
ছাত্ররা ভালো কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিকের কাজ করছে, তাদের প্রত্যেককে একটি করে সার্টিফিকেট বা প্রশংসাপত্র দেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আইজিপিকে নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, এই সার্টিফিকেট তাদের শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন স্তরে তথা শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে যাতে মূল্যায়ন হয়। তারা (ছাত্র) নিজের টাকা খরচ করে ভালো ভালো কাজ করছেন। সরকারি প্রজেক্ট হলে শত শত কোটি টাকা খরচ হতো। তারা সড়ক পরিষ্কার করছেন, দেয়ালে আল্পনা করে দেশ সাজাচ্ছেনÑ তাদের মূল্যায়ন করতে হবে।
তিনি দেশের রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্য বলেন, রাজনীতি করতে হলে চাটুকারিতা বাদ দিতে হবে। দেশটাকে বাঁচাত হবে। তিনি বলেন, ‘পুলিশ ফোর্সও যে, তারা কিছু করেনি তা আমি বলব না। কিন্তু পুলিশের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। কারণ একজনকে গুলি করে মারা আর মাথার চামড়া তুলে ফেলা, পা টুকরো টুকরো করা, মাথা থেতলিয়ে দেয়াÑ এটা তো আপনি কাউকে করতে পারেন না। আমরা যুদ্ধের সময়ও একজন মৃত সৈনিককে এভাবে থেতলিয়ে দেই না। এটাও দুঃখজনক। হাজার তরুণ মারা গিয়েছে পুলিশ ও অন্যদের গুলিতে। এটাও দুঃখজনক।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি তারিখ ঘোষণা করব। ওই তারিখের মধ্যে কোনো পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে না এলে, আমরা ধরে নেব তিনি পলাতক। আমার কাছে অনেক ম্যাকানিজম আছে। তাৎক্ষণিকভাবে ঘাটতি পূরণের অনেক ম্যাকানিজম আছে। আমি তা উল্লেখ করতে চাই না। সাত দিনের ভেতর আপনারা দেখবেন ট্রেনিং ম্যানপাওয়ার পুলিশে চলে আসবে।’