<শাহরিয়ার হোসেন শিমুল>
কেউ সদ্য বিয়ে করেছেন, কিন্তু একটু দেরিতে সন্তান নেবেন। কারও আবার একটি সন্তান আছে, পরের সন্তান নেওয়ার আগে কয়েক বছরের বিরতি চান। কেউ হয়তো ইতিমধ্যে দুই সন্তানের বাবা-মা, তাই জন্মনিয়ন্ত্রণে স্থায়ী কোনো পদ্ধতিতে যেতে চান। কেউ চান প্রসব-পরবর্তী সময়ের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, কেউ আবার চান গর্ভপাত-পরবর্তী সময়ে। তাই পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে জানা অবশ্যই প্রয়োজন। নারী ও পুরুষ উভয়রেই সিদ্ধান্তে গঠিত হয় একটি পরিকল্পিত পরিবার। “পরিকল্পিত পরিবার” বলতে সুখে শান্তিতে জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করাকে বোঝায়। সুদৃঢ়ভাবে পরিকল্পিত পারিবারিক কাঠামো গড়ে তোলার জন্য পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা দ্বারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ বা গর্ভবিরতি করণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। অনেক ধরণের নিরাপদ এবং কার্যকর জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি প্রচলিত আছে। দম্পতিরা ভালোভাবে জেনে বুঝে এগুলোর মধ্য থেকে নিজেদের পছন্দমতো ও তাদের জন্য উপযুক্ত একটি পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন। তবে কোনো পদ্ধতি গ্রহণ করার আগে বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। আর এর জন্য পরিবার পরিকল্পনার বিভিন্ন বিষয়গুলো নিয়ে সচেতন করতে এবং দম্পতিদের পদ্ধতি গ্রহণে উদ্ধুদ্ধ করতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং গ্রামে গিয়ে প্রচারনা চালানো হচ্ছে। এছাড়াও তাদের সেখানে বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে লিফলেট বিতরণ করা হয়। ইউকে এআইডি ডিপার্টম্যান্ট ফর ইন্টারন্যাশানাল ডেভেলপম্যান্ট (ডিএফআইডি) অর্থায়নে, আইপাস বাংলাদেশ এবং বিএনএনআরসি সহযোগিতায় এই কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়ন করছে রেডিও মহানন্দা ৯৮.৮ এফএম। গত ১৬ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নে রামজীবনপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে পরিবার পরিকল্পনা, নব-দম্পতি এবং কিশোর কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। উঠান বৈঠকটি পরিচালনা করেন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক আব্দুস সামাদ। উঠান বৈঠকে ৩৮ জন দম্পতিদের পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি বিশেষ করে দীর্ঘ মেয়াদী পদ্ধতির উপর পরামর্শ প্রদান করা হয়। দীর্ঘ মেয়াদি পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম ইমপ্লান্ট এবং আইইউডি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। এ সম্পর্কে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক আব্দুস সামাদ বলেন, ১ রড বিশিষ্ট ইমপ্ল্যান্ট এর মেয়াদ হলো ৩ বছর আর যেটি ২ রড বিশিষ্ট সেটির মেয়াদ হলো ৫ বছর। আইইউডির মেয়াদ হলো ১০ বছর। এছাড়াও কিছু স্থায়ী পদ্ধতির কথা তিনি বলেন পুরুষদের জন্য এনএসভি এবং মহিলাদের জন্য টিউবেকটমি। এসময় তিনি দম্পতিদের তাদের সুবিধামতো দীর্ঘ মেয়াদি পদ্ধতিগুলো গ্রহণ করার কথা বলেন। তাদের ইউনিয়নে অনেকেই দীর্ঘ মেয়াদী পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন বলে জানান তিনি। এরকমই কথা হলো উঠান বৈঠকে উপস্থিত হওয়া নাম জানাতে অনিচ্ছুক একজন দম্পতি তিনি বলেন ৩ বছর মেয়াদী ইমপ্ল্যান্ট গ্রহণ করেছেন। তাদের ২ টি সন্তান আছে বর্তমানে আর কোন সন্তান নিতে চান না। তবে এই সিদ্ধান্ত তিনি আর তার স্বামী ২ জন মিলে নিয়েছেন। এরকম কয়েকজন পুরুষদের সাথে কথা হলে তারা জানান পদ্ধতি মেয়েরাই নিবে আমরা কখনো গ্রহণ করি না। তবে পরিবার পরিকল্পনার পরিদর্শক জানান পুরুষদের ধারণা তাদের জন্য যে পদ্ধতিটি আছে এনএসভি বা ভ্যাসেকটমি সেইটা নিলে যৌন ক্ষমতা কমে যায় এই জন্য তারা এই পদ্ধতি নেয় না। তবে এটা পুরোটাই কুসংস্কার বলে জানান শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টার্ফ নার্স সুকতারা বেগম। তবে তিনি বলেন বেশীরভাগ দম্পতিরা অস্থায়ী পদ্ধতি পছন্দ করেন এবং সেটিই নেন। তবে আমরা সবসময় দম্পতিদের যে কোন একটি পদ্ধতি গ্রহণের জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকি। কোথায় এই সেবাগুলো পাওয়া যাবে সেই বিষয়ে তিনি বলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরিবার পরিকল্পনা অফিসে, কমিউনিটি ক্লিনিকে সদর হাসপাতালে এই সেবাগুলো দেয়া হয়ে থাকে। বিনা খরচে দম্পতিরা পদ্ধতি নিতে পারবেন বলে জানান তিনি। জনগণকে আরো বেশী সচেতন করতে ইউকে এআইডি ডিপার্টম্যান্ট ফর ইন্টারন্যাশানাল ডেভেলপম্যান্ট (ডিএফআইডি) অর্থায়নে, রেডিও মহানন্দা প্রতিমাসে বিভিন্ন ইউনিয়নে দম্পতি এবং কিশোর-কিশোরীদের পরিবার পরিকল্পনার পদ্ধতি নিয়ে উঠান বৈঠক করে থাকে এছাড়াও প্রতিমাসে একটি করে আলোচনা অনুষ্ঠান এবং ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে থাকে। যেখানে শ্রোতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকেন অভিজ্ঞ অতিথিরা। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে ৮ টি উঠান বৈঠক এবং ৫ টি আলোচনা অনুষ্ঠান রেডিও মহানন্দায় সম্প্রচার করা হয়েছে। এছাড়াও “সুরক্ষা” নামে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের কুইজ বিজয়ীদের মাঝে গত ৫ নভেম্বর বিএনএনআরসির পক্ষ থেকে ২ জন কুইজ বিজয়ী উপরাজরামপুর এলাকার ইশরাত জাহান পলশার সেলিম রেজা এবং দৈনিক গৌড় বাংলার প্রতিবেদক শাহরিয়ার হোসেনকে একটি করে রেডিও প্রদান করেন তথ্য কমিশনের প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমেদ।
পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি নিজে গ্রহণ করি এবং অন্যদের জানাতে সাহায্য করি। পরিবার সুখে থাকলে সমাজ শান্তিতে থাকবে আর সমাজে শান্তি বিরাজ করলে দেশ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন হবে। কাজেই আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। উন্নয়নশীল দেশের উন্নতির জন্য অবশ্যই দরকার পরিকল্পিত পরিবার। নারী পুরুষের যে কোন স্থায়ী ও অস্থায়ী পদ্ধতি নিতে স্থানীয় ক্লিনিক ও সদর হাসপাতালে সেবা পাওয়া যায়। সহজ লোভ্যতার কারণে যে কোন স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও এ সেবা দেয়া হয়ে থাকে। কাজেই নিজের সুস্থতার জন্য, যৌন বাহিত রোগ, দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমাতে জন্মনিয়ন্ত্রণের কোন বিকল্প নেই। বর্তমান সরকারও এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। জন্মনিয়ন্ত্রণে আরো প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে, গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন।
লেখক : গণমাধ্যম কর্মী