২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। শুক্রবার পৃথক এ বাণী দেন তারা।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন বিশ্ব দরবারে দেশ ও জনগণকে আত্মবিশ্বাসের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস এনে দিয়েছে।
বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা ও আত্মমর্যাদার প্রতীক ‘পদ্মা সেতু’র শুভ উদ্বোধন হচ্ছে জেনে রাষ্ট্রপতি সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। বাস্তবায়িত হচ্ছে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেলসহ অনেক মেগা প্রকল্প। স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ উত্তাল পদ্মার বুকে জাতির গৌরবের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এসব অর্জনের অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সাহসিকতা, বলিষ্ঠ পদক্ষেপ এবং যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলেই বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ সেতুর বাস্তবায়ন সম্পদ ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতা, সক্ষমতা, জবাবদিহি ও দক্ষতার নিদর্শন হিসেবে বিশ্বদরবারে আমাদেরকে আত্মবিশ্বাসের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস এনে দিয়েছে।’
আবদুল হামিদ বলেন, পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়ন সরকার ও জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ফল। সব প্রতিকূলতাকে জয় করে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশের জনগণের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলো। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও শিল্পায়নের মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি পদ্মা সেতুর মতো দেশের সকল মেগা প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন কামনা করেন।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেয়া বাণীতে প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত দেশের সর্ববৃহৎ ‘পদ্মা সেতু’ যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার দিনকে বাংলাদেশের জন্য এক গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহাসিক দিন হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘দেশপ্রেমিক জনগণের আস্থা ও সমর্থনের ফলেই আজকে উন্নয়নের এ নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে। আগামী দিনেও গণমানুষের আশা-আকাক্সক্ষা ও স্বপ্ন পূরণে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাব। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন লালিত স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ।’
প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত দেশের সর্ববৃহৎ ‘পদ্মা সেতু’ যান চলাচলের জন্য শনিবার খুলে দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী চ্যালেঞ্জিং ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প’ বাস্তবায়নে নিয়োজিত সর্বস্তরের দেশী-বিদেশী প্রকৌশলী, পরামর্শক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, নিরাপত্তা তদারকিতে নিয়োজিত সেনাবাহিনী ও নির্মাণ শ্রমিকসহ সংশি¬ষ্ট সবাইকে তাদের অবদান ও অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য অভিবাদন জানান। সেতুর দুই প্রান্তের জনগণ জমি প্রদানের মাধ্যমে এবং নানাভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং ‘পদ্মা সেতু’ উদ্বোধনের এ মাহেন্দ্রক্ষণে দেশবাসীকে তিনি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ এনে মামলা করে। কানাডা আদালত বিশ্বব্যাংকের উত্থাপিত সকল অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে রায় দেয়। সকল দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বব্যাংকের ঋণ না নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিলে জনগণের কাছ থেকে বিপুল সমর্থন পাই। জনতার শক্তি হৃদয়ে ধারণ করে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে আজ আমরা স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছি। দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। দুর্নীতিমুক্ত বীরের জাতি হিসেবে বাঙালি নিজেদের বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত ‘সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না’Ñ এই চিরপ্রেরণার বাণীতে উজ্জীবিত হয়ে আমরা প্রমাণ করেছি আমাদের নিজস্ব সক্ষমতা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার নিরবচ্ছিন্ন, সাশ্রয়ী ও দ্রুত যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হলো। বিপুল সম্ভাবনাময় এই অঞ্চলের বহুমুখী উন্নয়নে এই সেতুর গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে শিল্পায়ন ও পর্যটন শিল্পে অগ্রসর এ অঞ্চলের উন্নয়নে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। টুঙ্গীপাড়াস্থ জাতির পিতার সমাধিসৌধ, সুন্দরবন এবং কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতসহ নানা প্রতœতাত্ত্বিক ও দর্শনীয় স্থানসমূহে পর্যটকের আগমন বৃদ্ধি পাবে। নদী বিধৌত উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি ও মৎস্য সম্পদ আহরণ এবং দেশব্যাপী দ্রুত বাজারজাতকরণে পদ্মা সেতু বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ইতোমধ্যে এ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত পায়রা সমুদ্রবন্দর, বৃহৎ নদীসমূহের ওপর নির্মিত সেতু, রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ মংলা সমুদ্রবন্দরের পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহারে ‘পদ্মা সেতু’ যোগাযোগ ব্যবস্থায় সূতিকাগার হিসেবে কাজ করবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই অঞ্চলে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ বেনাপোল, ভোমরা, দর্শনা প্রভৃতি স্থলবন্দরের মাধ্যমে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। এ সেতুর মাধ্যমে দুই প্রান্তে বিদ্যুৎ, গ্যাস, অপটিক্যাল ফাইবারসহ পরিষেবাসমূহের সংযোগ স্থাপিত হবে। পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে সার্বিকভাবে দেশের উৎপাদন ১.২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং প্রতিবছর ০.৮৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য নিরসনের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ সেতু অনন্য অবদান রাখবে।